কথায় আছে, রাখে হরি তো মারে কে। কিন্তু হুগলির পাণ্ডবেশ্বরে যে ঘটনা ঘটলো তা কষ্টকল্পেও কেউ চিন্তা করতে পারবে না।
মৃত্যুর পর পোড়াতে নিয়ে গেলে শ্মশানে চিতাতে শুইয়ে দেওয়া হয়েছিল। হঠাৎ বৃদ্ধার নড়ন চড়ন দেখে প্রথমে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পরে সম্বিত ফিরতে সকলে বৃদ্ধাকে ধরাধরি করে চিতা থেকে নামান। দেখেন বৃদ্ধা বেঁচে আছেন। সাড়া পড়ে যায় চারিদিকে।
তবে এমন ঘটনা যে তাঁরা কখনও দেখেননি, সে বিষয়ে সকলে একমত হয়েছেন। তড়িঘড়ি বৃদ্ধাকে শ্মশান থেকে প্রথমে বাড়িতে পরে সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
চমকের তখনও অনেক বাকি ছিল। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসকের টেবিলে নামাতেই বৃদ্ধা আবার অসাড় হয়ে পড়েন।
ব্যাপার কী! না বৃদ্ধা নাকি চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলে ব্রট ডেড! মানে কী! যাকে মৃত বলে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হল, শ্মশানে গিয়ে জীবিত দেখে ফের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হল, আবার মৃত কী করে হয়!
ঘটনার পর কয়েক ঘন্টা কেটে গেলেও, এখনও ঘটনার পরম্পরা সাজাতে পারছেন না ওই বৃদ্ধার পরিবারের লোকজন।
হুগলির পাণ্ডবেশ্বরে এই কয়েক ঘন্টার জীবন নাটকের পরিসমাপ্তি যে এভাবে ঘটবে তাও ধারণা করতে পারেননি কেউ। এর পিছনে ভগবানের কি লীলা রয়েছে তা হাতড়ে ফিরছেন এলাকার বাসিন্দা থেকে পরিবারের লোকজন।
ঘটনাটি ঘটেছে পাণ্ডবেশ্বরের বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েতের নামুপাড়ায়। বৃহস্পতিবার পুষ্পরানী আচার্য (৭৮) -কে
মৃত ভেবে দাহ করার জন্য বৃদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শ্মশানে। চাপানো হয়েছিল চিতাতে।
মুখাগ্নি করার মুহূর্তে হঠাৎ নড়েচড়ে ওঠে বৃদ্ধার দেহ। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তড়িঘড়ি চিতা থেকে নামিয়ে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে ভর্তি করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল-এ । সেখানে নাটকের দ্বিতীয় পর্যায় অনুষ্ঠিত হয়।
মাস আটেক আগে পড়ে গিয়ে পা ভাঙ্গে পুষ্পরানী আচার্যের । তার পর থেকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতেই ছিলেন ঐ বৃদ্ধা । আগে মারা গিয়েছে স্বামী । দুই সন্তান নিয়ে বৃদ্ধার পরিবার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎই বৃদ্ধার সাড়া শব্দ না পেয়ে ছেলেরা খবর দেয় পাড়া-প্রতিবেশীদের। করোনার কারণে কোয়ারেন্টাইন জোন হাওয়ায় খবর দেওয়া হলেও আসেনি কোনও ডাক্তার।
বহু ডাকাডাকির পরও বৃদ্ধার কোন প্রতিক্রিয়া না পাওয়ার তিনি মারাই গিয়েছেন বলে স্থির ধারণা হয় তার ছেলে ও প্রতিবেশীদের।
এরপরই দাহ করার জন্য দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সাজানো হয় চিতা । দাহের ধার্মিক নিয়ম-নীতি মেনে বৃদ্ধা-কে তোলা হয় চিতাতে ।
কিন্তু এরপরই ঘটে আশ্চর্য ঘটনা। মুখাগ্নি করার প্রস্তুতি নিতেই হঠাৎ চিতার উপর নড়ে উঠে বৃদ্ধার শরীর। যা দেখে শ্মশান যাত্রীদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
ঘটনার প্রাথমিক আকস্মিকতা কাটার পর খবর দেওয়া হয় পাণ্ডবেশ্বর থানার। পুলিশ এসে চিতা থেকে নামিয়ে চিকিৎসার জন্য বৃদ্ধা-কে নিয়ে যায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে।
সেখানে পুষ্পরানি দেবীর চিকিৎসা শুরু করতে চিকিৎসক এলে তাঁকে মৃত বলেই ঘোষণা করেন তাঁরা। যা ফের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। তাহলে কী চিতায় তাঁর নড়ে ওঠা কাকতালীয় ছিল! কোনটা সত্যি বেঁচে ওঠাটা না বৃদ্ধার মারা যাওয়া! ঠাহর করতে পারছেন না, এলাকার বাসিন্দারা।