scorecardresearch
 
Advertisement
পশ্চিমবঙ্গ

দীর্ঘ ২৫ বছরের অপেক্ষার অবসান, ঘরে ফিরল ঘরের ছেলে, পথ দেখাল Google

ফরিদুল ইসলাম মিঞা
  • 1/6

গুগল সার্চ ইঞ্জিন দীর্ঘ ২৫ বছর পর গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে এলো ফরিদুল ইসলাম মিঞাকে। কখনও মনিব হত্যার দায়ে তো আবার কখনও আবার পাকিস্তানি তকমায় দু দফায় বেশ কয়েক বছর কেটেছে দিল্লির জেলখানায়। এরপর স্মৃতি হারিয়ে বেশ কয়েক বছর দিল্লির (Delhi) পথে পথেই কেটেছে ভবঘুরে জীবন। কিছু শুভানুধ্যায়ী বন্ধুদের সহযোগিতায় প্রথমে হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসা। এরপর দিল্লির পানিপথের এক পাত্রীর সঙ্গে নতুন জীবনের সূচনা। মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা বছর। গ্রামের পুরানো স্মৃতি, নিজের ভাষা ভুলে সে এক অন্য জীবন।
 

পরিবারের সঙ্গে ফরিদুল ইসলাম মিঞা
  • 2/6

এদিকে ফরিদুল মিঞা যে বেঁচে আছেন সে আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন পরিজনেরা। টানা পঁচিশ বছর নিরুদ্দেশ থাকার পর হালে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন ফরিদুল ইসলাম মিঞা। তাঁর এই প্রত্যাবর্তনে গ্রাম জুড়ে শুরু হয়েছে উৎসব। বাড়ি আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) ফালাকাটা থানার ধনিরামপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের খগেনহাটের চ্যাংমারিটারি গ্রামে। 

পরিবারের সঙ্গে ফরিদুল ইসলাম মিঞা
  • 3/6

রোজগারে টানে দীর্ঘ পঁচিশ বছর আগে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন ফরিদুল। সেখানে গিয়ে মোস্তাবাবাদে গোকুলপুরি থানার অন্তর্গত জনৈক ব্যবসায়ী কামাল আহমেদের কাছে বিনা পারিশ্রমিকে শুধুমাত্র পেটের ভাতের বিনিময়ে কাজ শুরু করেন। টাকার অভাবে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। এরপর আচমকাই একদিন খুন হন ওই ব্যবসায়ী। সেই হত্যার দায় এসে পড়ে ফরিদুলের ওপর। জোটে টানা সাড়ে দশ মাসের জেল। তখনই ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারাতে শুরু করেন ফরিদুল। একসময় স্মৃতি লোপ পায়। নিজের মাতৃভাষাও ভুলে যান তিনি। তথ্য প্রমাণের অভাবে খুনের দায় থেকে মুক্তি মিললেও স্মৃতি ফেরেনি। একদল সহকর্মী প্রচুর চিকিৎসা করালেও আর কিছুই মনে করতে পারছিলেন না ফরিদুল। সহকর্মীরাই পানিপথে বিয়ে দিয়ে সংসার পেতে দেন ফরিদুলকে। 

Advertisement
পরিবারের সঙ্গে ফরিদুল ইসলাম মিঞা
  • 4/6

কিন্তু তাতেও শান্তি ফেরেনি ফরিদুলের জীবনে। এরপরই জোটে পাকিস্তানি তকমা। আবার ফিরতে হয় তিহার জেলের অন্ধ কুঠুরিতে। ফরিদুল তাঁর ভোটার কার্ড গচ্ছিত রেখেছিলেন খুন হয়ে যাওয়া মালিকের কাছে। ফলে তিনি যে ভারতীয় তার কোনও প্রমাণই ছিল না তাঁর কাছে। চলে টানা সাড়ে পাঁচ মাসের জেল জীবন। তবে এক সহৃদয় আইনজীবী বিনা পারিশ্রমিকে তাঁর হয়ে আইনী লড়াই লড়েন। ততদিনে অবশ্য ফরিদুলের সংসারে জন্ম নিয়েছে এক ছেলে ও মেয়ে। আদালতে শেষ পর্যন্ত জয় হয় তাঁর। ফিরে যান পানিপথে পরিবারের কাছে। তখন তিনি এক আত্মবিস্মৃত বিধ্বস্ত মানুষ ছাড়া আর কিছুই নন। কিন্তু হঠাৎই একদিন মনে পড়ে যায় গ্রামের নাথুনিসিং উচ্চবিদ্যালয়ের কথা। বিষয়টি জানতে পেরে ফরিদুলের ১৮ বছরের ছেলে গুগল সার্চ করে স্কুলের ঠিকানা ও ছবি বের করতেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে ফরিদুলের স্মৃতি। শুরু হয় সপরিবারে গাঁয়ের বাড়িতে ফেরার তোরজোড়। অবশেষে ১৭ নভেম্বর হারিয়ে যাওয়া ছেলে বাড়ি ফিরে আসায় উৎসবে মেতেছে পরিবার। বাড়ির উঠোনে বাঁধা হয়েছে পেল্লায় প্যান্ডেল। কাটা হয়েছে কেক। জ্বলেছে মোমবাতি। টুনি বাল্বের আলোর রোশনাইয়ে অকাল দীপাবলি চলছে বাড়িতে। ছেলের কল্যাণ কামনায় স্থানীয় মাজারে চাদর চড়িয়েছেন আশি পেরোনো বাবা পহিরুদ্দীন মিঞা। থেকে থেকেই বাড়িতে উঠছে কান্নার রোল, পরক্ষণেই তা আবার উচ্ছ্বাসে বদলে যাচ্ছে। গ্রামের দূরদূরান্ত থেকে সবাই আসছেন হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে দেখতে। চলছে দেদার মিষ্টিমুখ। সব মিলিয়ে যেন এক রূপকথার আবহ তৈরি হয়েছে চ্যাংমারিটারিতে। 

পরিবারের সঙ্গে ফরিদুল ইসলাম মিঞা
  • 5/6

বাবা পহিরুদ্দীনের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসলেও মানস চক্ষু এখনও প্রখর। ধরে আসা গলায় জানালেন "সবাই আশা ছেড়ে দিলেও, আমার মনের কোণে কোথাও একটা সুর বাঁধা ছিল যে, ফরিদুল ফিরবেই। শেষে আমার মনের কথা মিলে যাওয়াতে আনন্দে এখন আর কিছুতেই চোখের জল ধরে রাখতে পারছি না। আজ আমার সাত ছেলের সংসার ফের পরিপূর্ণ। আর চোখ ছাড়া করতে চাই না ওকে।" 

ফরিদুল ইসলাম মিঞা
  • 6/6

আর যাঁকে ঘিরে এতো শোরগোল সেই ফরিদুল ইসলাম মিঞা জানালেন, "আমার মতো কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে গিয়ে কেউ যেন এমন বিপদে না পড়েন। সব খুইয়ে আমি একদম সর্বসান্ত হয়ে পড়েছিলাম। জীবনের ছন্দের সব তাল কেটে গিয়েছিল। জুটেছে খুনি ও পাকিস্তানির তকমা। ওই জীবনকে ভুলে গিয়ে বাকি জীবনটা গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চাই।"

Advertisement