সেল রুটি। নেপালিতে সেলো রুট। নেপালের একটি সুস্বাদু ঐতিহ্যবাহী চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি রুটি যা স্বাদে মিষ্টি। অনেকটা আমাদের জিলিপির মতো দেখতে কিন্তু শুকনো মালপোয়ার মতো খেতে।
নেপালি জাতির যে কোনও উৎসবে এটি ছাড়া মহাভোজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বেশিরভাগ দশাইয়ের সময় সেল রুটি অপরিহার্য।
নেপাল এবং সিকিম এবং দার্জিলিং পার্বত্য় অঞ্চলে যেহেতু জাতিগতভাবে নেপালি গোর্খাদের উপস্থিতি রয়েছে সেখানে ব্যাপকভাবে হিন্দু উৎসব উদযাপিত হয়। এই সেলরুটি আবার কুমায়ুনে সিংহল নামে পরিচিত।
সেল রোটি একটি সুস্বাদু, মূলত দশাই এবং তিহার উৎসবগুলির দুর্দান্ত উদযাপনের জন্য তৈরি। এটি নেপালের পক্ষে অনন্য খানা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি নেপালি সংস্কৃতি এবং উৎসবের প্রতীক হয়ে উঠেছে এবং দাসাইন, তিহার ও তিজের উৎসব চলাকালীন সারা দেশে তৈরি ও পরিবেশিত হয়।
এ ছাড়াও বিয়ে, ব্রতবন্ধ এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের সময়ও এখন আত্মিকরণ করেছে জনজাতির মানুষ। দার্জিলিং, সিকিম, শিলিগুড়ি, কালিম্পং সহ দেশে-বিদেশে যেখানেই নেপালি জনজাতি রয়েছে সেখানেই এর কদর রয়েছে।
বেশিরভাগ নেপালি এবং কুমায়ুনি সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যবাহী ইভেন্টগুলিতে একটি প্রয়োজনীয় খাদ্য। সেল রুটি না হলে পবিত্র উৎসব পালন অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
তবে সেলরুটি দেখবেন আর হাত কামড়াবেন, তার দরকার নেই। বাড়িতেই দিব্যি বানিয়ে নিতে পারেন সেলরুটি। দিব্যি খাসা সুস্বাদু, বানাতেও ঝক্কি তেমন নেই।
সেল রুটি বানাতে হলে দরকার চাল, চিনি, ঘি, সুজি, বেকিং পাউডার, এলাচ ও লবঙ্গ, সোয়াবিন কিংবা সূর্যমুখী তেল। কেউ কেউ কলাও চটকে দিয়ে দেন। তাতে রুটি নরম হয়।
আগের দিন রাতে চাল ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। পরদিন ভেজানো চাল থেকে জল ঝরিয়ে গুঁড়ো করে একটি পাত্রে রাখতে হবে। একদম মিহি করে না বেটে একটু দানা করে রাখলে রুটি ভালো হয়। চাল গুঁড়ো, চিনি, সুজি, বেকিং পাউডার, এলাচ, লবঙ্গ দিয়ে ভালো করে মাখতে হবে।
ভালো করে ময়ান তৈরি করে এবার অল্প করে উষ্ণ জল দিয়ে মাখতে হবে। জিলিপির মত গোলা যেন তৈরি হয়। এবার ২ থেকে ৩ ঘন্টা ওই চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি গোলা রেখে দিতে হবে। ঘন্টা তিনেক পর গোলাটি একটু ঘন হবে এবং সামান্য উষ্ণ জল দিয়ে আগের মত করে নিতে হবে।
এবার পাত্রে তেল দিয়ে তেল গরম করতে হবে। ধোঁয়া উঠতে শুরু করলে ফানেল বা বোতলের মাথা কেটে নিয়ে কিংবা ছোট ফুটো করা কোনও কনটেইনারে তাতে ওই গোলা ঢেলে তেলে জিলিপির মত করেই ছেড়ে দিতে হবে। ফুটোর আকারের উপর সেল রুটি কতটা মোটা হবে তা নির্ভর করবে।
কিন্তু জিলিপি যেমন আড়াই প্যাঁচ হয় এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও বাধ্য়বাধকতা নেই। শুধুমাত্র একটা রিং তৈরি করতে হবে। প্রথমে একপিঠ ভেজে নিয়ে তারপর অপর পিঠ লাল করে ভেজে নিতে হবে। প্যানের মাঝখানে গোলাকার কিছু রেখে দিলে রুটিটা সুন্দর গোল হবে। না হলেও কোনো অসুবিধে নেই।
এভাবেই সমস্ত রুটি ভেজে নিয়ে একসঙ্গে রাখলে তা চুড়ির মত দেখতে লাগে। ব্যস সেল রুটি তৈরি। রুটি শুধু খাওয়া যায়, আলুর দম দিয়ে খাওয়া যায়, চা দিয়ে খাওয়া যায়। টিফিন বক্সে ভরে রেখে দিলে সাধারণ আবহাওয়াতে প্রায় ১০-১২ দিন রাখা যায়। তাহলে দেরি কেন নেপালি ঐতিহ্যের খানা বাড়িতে বসেই স্বাদ নিন,আর হারিয়ে যান কুমায়ুন কিংবা দার্জিলিং পাহাড়ের কল্পনায়।