এখন প্রশ্ন হল, কেন এই তিন অফিসারকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে চাওয়া হচ্ছে? রাজ্যই বা কী ভাবে ওই তিনজনকে কেন্দ্রের হাতে ছাড়তে চাইছে না? প্রসঙ্গত, এই তিনজনেই জেপি নাড্ডার কনভয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
ডায়মন্ড হারবারের পথে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের কেন্দ্রে এখন তিন কর্তব্যরত IPS অফিসার। রাজীব মিশ্র, প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী ও ভোলানাথ পান্ডে-- বাংলার এই তিন আইপিএস অফিসারকে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে চেয়ে নবান্নকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য।
এই আইপিএস অফিসারদের কেন কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে চাওয়া হচ্ছে? কেন্দ্রের বক্তব্য, জে পি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় কোনও ভাবেই দায় এড়াতে পারেন না এই তিন আইপিএস অফিসার।
এ ক্ষেত্রে আইন কী বলছে? কেন্দ্রীয় সরকার-ই আইএএস, আইপিএস ও আইএফএস অফিসার পোস্টিং দেয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আওতায় আইপিএস ও আইএএস ক্যাডার ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের অধীনে আইএফএস অফিসাররা থাকেন।
নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের অধীনে পোস্টিং দেওয়া সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সরাসরি কোনও তদন্ত বা পদক্ষেপ করতে পারে না। রাজ্যের সম্মতি লাগে।
আইপিএস ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কেন্দ্রের এই সংঘাত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিই বলা যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই এক সময় আইপিএস অফিসারের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশন তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা ২০০১ সালে খারিজ করেছিলেন। তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। ২০০১ সালে মুখ্যমন্ত্রী পদে দায়িত্ব নেওয়ার পরে তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। করুণানিধি, তত্কালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরাসলি মারান ও টিআর বালুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনায় তিন আইপিএস অফিসারকে তলব করেন তত্কালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী। জয়ললিতা পত্রপাঠ তা খারিজ করেছিলেন।
অখিল ভারতীয় সেবা আইন, ১৯৬৯ অনুযায়ী, যদি কোনও আইপিএস অফিসার রাজ্যের বিষয়ে কর্মরত থাকেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট আইপিএস-এর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাজ্যেরই হাতে।
কিন্তু নবান্ন তাঁদের ছাড়তে রাজি নয়। এই নিয়েই মূলত সংঘাত। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও বারবার অভিযোগ জানিয়েছেন, বাংলার আইপিএস অফিসারদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই তিন আইপিএস কারা? ১৯৯৬ সালের আইপিএস ক্যাডারের অফিসার রাজীব মিশ্র। বর্তমানে তিনি আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) পদে রয়েছেন। তার আগে কলকাতা বন্দর, সেন্ট্রাল বিভাগের ডেপুটি কমিশনার, কলকাতা পুলিশের য়ুগ্ম কমিশনার (সদর)-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন। দিঘার সৈকতে উর্দি পরেই মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণামের পর রাজীবের বিরুদ্ধে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ২০০৩ সালের আইপিএস ক্যাডারের অফিসার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী। বর্তমানে ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ)। আগে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান ছিলেন এই দুঁদে অফিসার। সশস্ত্র পুলিশের যুগ্ম কমিশনারের পদেও ছিলেন প্রবীণ ত্রিপাঠী। আরেকজন হলেন, ভোলানাথ পান্ডে। ভোলানাথ হলেন ২০১১ ব্যাচের আইপিএস। আপাতত তিনি ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপারের পদে রয়েছেন।