গ্রাম বাংলায় কৃষিকাজের পাশাপাশি এখন কুটির শিল্পেও উৎসাহ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। আচার, পাঁপড় থেকে শুরু করে তাঁত বোনা বিভিন্ন কুটির শিল্পের কথা আমরা সকলেই জানি। আর এর মাঝেই ঘরে ঘরে যুক্ত হয়েছে আরও একটি শিল্প। শুনতে অবাক লাগলেও নদিয়ার প্রায় ১২ হাজার পরিবার যুক্ত রয়েছে এই শিল্পের সঙ্গে। তাই অনেকেই চাষবাস ছেড়ে জমিয়ে শুরু করেছেন চুলের ব্যবসা।
অনেক সময়ই গ্রামগঞ্জে, পাড়া-মহল্লাতেও হাঁক দিয়ে চুল কিনতে দেখা যায় একশ্রেণির ফেরিওয়ালাকে। এসব চুল দিয়ে তৈরি হচ্ছে একধরনের পরচুলা। প্রধানত হিলাদের মাথার ফেলে দেওয়া চুল দিয়েই তৈরি হয় পরচুলা। বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পড়ে যাওয়া চুলের নানা কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করছে চাপড়া ব্লকের প্রায় দশ হাজারেরও বেশি পরিবার। বড় আন্দুলিয়া সহ বিভিন্ন গ্রামের অনেকে আবার আর্থিকভাবে সমৃদ্ধও হয়েছেন। পেটের দায়ে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়া বেকার যুবকরাও চুলের ব্যবসা করে এখন সমাজের মূল স্রোতে ফিরছেন।
মাথা আঁচড়ানোর পর উঠে আসা চুল বিশেষত মহিলারা অনেকেই জমিয়ে রাখেন। ফেরিওয়ালারা সেইসব চুল কিনে নেন। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই চুল পাড়ি দেয় বিদেশে। প্রায় ২৫বছর আগে চাপড়ার বড় আন্দুলিয়ার শিবিরপাড়ার সুরাবদ্দিন শেখ প্রথম পরিত্যক্ত চুলের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমদিকে এই ব্যবসাকে খারাপ চোখে দেখলেও প্রচুর অর্থ উপার্জন হওয়ায় পরবর্তীতে অনেকেই এই ব্যবসা শুরু করেন। এখন এলাকার অধিকাংশ মানুষ এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
চুল লোহার তৈরি বিশেষ ধরনের বড় চিরুনির সাহায্যে ছাড়িয়ে গুছিয়ে বাঁধা হয়। সেগুলিকে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকনো হয়। সাধারণত ৬-৩০ইঞ্চি পর্যন্ত চুল বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ৫-১৫ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এখান থেকে চুল সাধারণত মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর সহ ভিনরাজ্যে পাঠানো হয়। এরপর সেগুলি চিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। সেখানে পরচুলা তৈরি হয়।
একসময় বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিল অনেকে। কিন্তু সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেওয়ায় ও বিএসএফের নজরদারি বাড়ায় চোরাচালান বন্ধ হয়ে যায়। পেটের দায়ে অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা। পরে এই ব্যবসার মাধ্যমে অনেকেই সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন।