কথাতেই আছে মাছেভাতে বাঙালি। মাছ ছাড়া বাঙালীর রসনাতৃপ্তি অসম্পূর্ণ। বাঙালির ঝালে, ঝোলে, অম্বলে সবেতেই মাছ। কোপ্তা-কালিয়ায় ভুরিভোজ থেকে পাতলা ঝোলে রুগীর পথ্য- সর্বত্রই মাছের অবাধ আনাগোনা।
তাই এই মাছ কিছু মানুষের রুটি-রুজির মাধ্যমও বটে। নদীর অববাহিকা অঞ্চলে বংশ পরম্পরায় মাছ ধরাকেই জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়ে জীবনধারণ করেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়।
নদিয়ার শান্তিপুরের ভাগীরথী নদী তীরবর্তী কিছু অঞ্চল চরসারাগড়, বয়রাঘাট, টেংরিডাঙা, নৃসিংহপুর, চৌধুরীপাড়া ইত্যাদি অঞ্চলের বেশ কিছু মানুষের প্রধান উপজীবিকা হল মাছ ধরা।
এই মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মৎস্যজীবীদের প্রয়োজন হয় বেশ কিছু জিনিসের। যেমন জাল, পোলো, বিত্তি, ছিপ, বড়শি, হুইল, মাছের চার ইত্যাদি। আগে মৎস্যজীবীরা এইসব সামগ্রী নিজেরাই কিনে নিয়ে আসতেন কলকাতা থেকে।
নিজের প্রয়োজনের থেকে একটু অতিরিক্তই তারা কিনে নিয়ে আসতেন অন্যদের জন্য। আর এভাবেই শুরু হয় এইসব সামগ্রীর কেনাবেচা।
এভাবে অল্পস্বল্প কেনাবেচা করতে করতেই গত ৫ বছর ধরে ভাগীরথী তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠে এইসব সামগ্রীর বেশ কিছু দোকান।
কিন্তু করোনা অতিমারীতে গত দেড় বছর ধরে এই লকডাউন পরিস্থিতিতে তাঁদের ব্যবসার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিএ এমএ পাশ করে, বাপ-কাকার ব্যবসা বড় করার স্বপ্ন দেখে নেমেছিলেন এ পেশায়।
প্রথম দিকে তাঁদের ব্যবসা খুব ভাল চলছিল। তবে গত দেড় বছর ধরে লকডাউনের কারণে তাঁদের ব্যবসার পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছে।
তার সঙ্গে যোগ হয়েছে এই মালপত্রের মূল্যবৃদ্ধি। তাই কষ্ট করে জিনিস কিনে আনলেও বিক্রিবাটা তেমন নেই। কারণ যে মৎস্যজীবীরা এগুলো কেনেন, তাদের হাতেও তেমন টাকা নেই।
শুধু মালপত্র কেনাবেচাই নয়, খেপলাজাল, ফাঁসজাল নিজেরা লোক দিয়ে বুনিয়েও কেউ কেউ বিক্রি করেন। জাল বোনার কাজ করেও কিছু মানুষের রুজিরোজগার হয়। ফাঁসজাল বোনানোর জন্য যে উচ্চ মানের মিহি নেট দরকার হয় তা মূলত আমদানী হতো চীন থেকে।
তাই এই কাঁচামালেরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এছাড়া কাঁচামালের দাম অত্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় জাল বোনাতে যা খরচ হচ্ছে, সেই দাম দিয়ে জাল কেনার মতো খদ্দের নেই।