ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় নিভার। প্রথম আছরে পড়ার কথা পুদুচেরির মহাবলিপুরমে। সেসময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার। আর এই নিভারই উস্কে দিচ্ছে গত মে মাসের আমফানের স্মৃতি। সুন্দরবন উপকূলে সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ওই ঘূর্ণিঝড় ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল দুই ২৪ পরগনা কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। দুপুর থেকে শুরু হয়ে পরদিন প্রায় ভোর রাত পর্যন্ত চলা ঝড়ের তাণ্ডব কার্যত দু চোখের পাতা এক হতে দেয়নি মানুষের। আমফানে ভারত, বাংলা ও শ্রীলঙ্কা মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছিল মোট ১১৮ জনের। তার মধ্যে শুধু মাত্র এদেশেই মারা গিয়েছিলেন ৮৮ জন।
রাতভর ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙে যায় প্রচুর কাঁচা বাড়ি। ক্ষতিগ্রস্থ হয় বহু পাকা বাড়িও। একরাতের দুর্যোগে গৃহহীন হন বহু মানুষ।
আমফানের তাণ্ডবে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা সহ দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় উপড়ে যায় হাজার হাজার গাছ। শুধু মাত্র কলকাতাতেই নষ্ট হয় ৫ হাজার গাছ। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয় বটানিক্যাল গার্ডেনের দ্য গ্রেট ব্যানিয়ট ট্রিও।
বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি। এছাড়া গাছ ভেঙে পড়েও ছিঁড়ে যায় বিদ্যুতের তার। ফলে কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলার বিস্তীর্ণ অংশে টানা প্রায় ৩-৪ দিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয় মানুষকে। পানীয় জলেরও সংকট দেখা দেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তৎপরতার সঙ্গে কাজ করে সরকার।
গাছ ভেঙে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় শহর কলকাত সহ বিভিন্ন জেলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। ভেঙে পড়া গাছে গুঁঁড়ি সরাতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মীদের।
ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত মানুষের সাহায্যে নামানো হয় সেনা। পাশাপাশি গাছ সরিয়ে রাস্তা চালু করার কাজেও হাত লাগান সেনা কর্মীরা।
আমফানের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয় চাষে। রাজ্যে প্রায় ৮৮ হাজার হেক্টর জমির ধান এবং ২ লক্ষ হেক্টর জমির শাকসবজি ও তিল নষ্ট হয়।
প্রবল বৃষ্টিতে জল ঢুকে কার্যত ভেসে যায় কলেজ স্ট্রিট। প্রভূত ক্ষতির মুখে পড়েন কলেজ স্ট্রিটের বই ব্যবসায়ীরা।
আমফানের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকা আকাশপথে পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। আমফান বিধ্বস্ত বাংলার জন্য হাজার কোটি টাকা আর্থিক সাহায্যও ঘোষণা করেন মোদী। এছাড়াও মৃতদের পরিবারের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণেরও ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।