অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস বক্সা বনদফতরের কর্তাদের। মঙ্গলবার সকাল থেকেই আশঙ্কায় ছিলেন বক্সার বনকর্তারা। কারণ মানুষের হাত গায়ে লাগায়া ধানখেত থেকে উদ্ধার বনবিড়ালের পাঁচ সদ্যোজাত সন্তানকে আর ফিরিয়ে নেবে না তাদের মা। এদিকে বনবিড়ালের বাচ্চা রাখা এবং প্রতিপালনের কোনও পরিকাঠামো নেই বক্সা বনদফতরের।
তাই বনবিড়ালের এই শাবকগুলিকে তাঁরা কোথায় রাখবেন তাই নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল বনকর্তাদের মধ্যে। যদিও বনদফতরের সমস্ত আশঙ্কার অবসান ঘটিয়ে বুধবার ভোরের আলো ফোঁটার আগেই একে একে সমস্ত শাবককে জঙ্গলে ফিরিয়ে নিয়ে গেল মা বনবিড়াল।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ কুমারগ্রাম ব্লকের নারারথলি গ্রামে ধানকাটার সময় ওই পাঁচ বনবিড়ালের শাবককে দেখতে পান স্থানীয় কয়েকজন কৃষক। প্রথমে ওই কৃষকরা বনবিড়ালের শাবকগুলিকে চিতাবাঘের বাচ্চা বলে সন্দেহ করেন।
সঙ্গে সঙ্গে নারারথলি গ্রামে চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গ্রামবাসিরা বক্সা টাইগার রিজার্ভের সাউথ রায়ডাক রেঞ্জে খবর দেন। সাউথ রায়ডাক রেঞ্জের রেঞ্জার শুভায়ু সাহা ঘটনাস্থলে গিয়ে শাবকগুলিকে দেখে বুঝতে পারের সেগুলি চিতাবাঘের নয় বনবিড়ালের বাচ্চা। তারপরেই বনকর্মীরা শাবকগুলিকে খাঁচায় বন্দী করেন।
কিন্তু শাবকগুলিকে খাঁচাবন্দী করার পর বিপাকে পড়েন রেঞ্জার। সদ্যোজাত ওই শাবকগুলিকে কোথায় নিয়ে যাবেন, কী করবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। পরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত হয়, শাবকগুলিকে তাদের মায়ের কাছেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু বনদফতরের কর্তারা এই ভেবে আশঙ্কায় ছিলেন যে শাবকগুলির দেহে মানুষের হাত পড়ায় মা বনবিড়াল তাদের আর জঙ্গলে ফিরিয়ে নেবে কি না। তবুও চেষ্টার ত্রুটি করেনি বনদফতর। ওই ধানখেতেই বনকর্মীদের নজরদারিতে শাবকগুলিকে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ধানক্ষেতের যে অংশে শাবকগুলি উদ্ধার হয় সেই এলাকার ধান কাটতে বারণ করা হয় চাষিদের। ধানখেতের চারদিকে লাগিয়ে দেওয়া হয় ট্র্যাপ ক্যামেরা।
অবশেষে মঙ্গলবার গভীররাতে শাবকগুলিকে নিতে ওই ধানক্ষেতে হাজির হয় তাদের মা। বুধবার ভোররাতে একে একে সমস্ত সন্তানকে মুখে নিয়ে গভীর জঙ্গলে মিলিয়ে যায় মা বনবিড়ালটি। বক্সা টাইগার রিজার্ভের ক্ষেত্র অধিকর্তা বুদ্ধরাজ শেওয়া বলেন, 'ওই বনবিড়ালটি সমস্ত সন্তান নিয়ে জঙ্গলে চলে গিয়েছে। শাবকগুলির বয়স বড়জোর এক বা দুই দিন হবে।'