রাতভর টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে শহর কলকাতা। এমন ভয়ঙ্কর দুর্যোগ ও জলযন্ত্রণা বহু দিন দেখেনি তিলোত্তমা। পুজোর আগে কার্যত লন্ডভন্ড অবস্থা শহরের। গলি থেকে রাজপথ বইছে জলস্রোত। ৫ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার কামডহরিতে।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে যে ২৫ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় খুব ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে । এছাড়া ২৩ , ২৮ এবং ২৯ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ গাঙ্গেয় সমভূমিতে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে ।
রাতভর বৃষ্টিতে হাওড়া ইয়ার্ড, শিয়ালদহ দক্ষিণ ইয়ার্ড, চিৎপুর উত্তর কেবিন-সহ বেশ কিছু কারশেড জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পাম্প করে সেই জল বের করার চেষ্টা হচ্ছে। তবে বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ না-হওয়ায় আশপাশের এলাকা থেকে আবার জলে এসে জমছে রেল লাইনে। দুর্যোগের জেরে মঙ্গলবার সকালে শিয়ালদহ থেকে বেশ কিছু দূর পাল্লার ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আপ হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস এবং শিয়ালদহ-জঙ্গিপুর এক্সপ্রেস মঙ্গলবারের জন্য বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য লোকাল ট্রেনগুলিরও যাত্রাপথ সংক্ষেপ করে দেওয়া হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তার আশেপাশে তৈরি নিম্নচাপ সোমবার ভোরে ঘনীভূত হয়েছে ৷ এর পাশাপাশি ঘূর্ণাবর্তটি যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫.৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং একই জায়গায় অবস্থান করছে । আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণাবর্তটি সরে গিয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের দিকে যাবে বলে মনে করছেন আবহবিদরা । পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার নাগদ পূর্ব-মধ্য ও সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে আরও একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার জোরালো ইঙ্গিত রয়েছে । এই নিম্নচাপটির পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে গিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দক্ষিণ ওড়িশা-উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের কাছে উত্তর-পশ্চিম ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হবে এবং গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি এবং কিছু কিছু জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ।
কলকাতা এয়ারপোর্টে আপাতত বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে। জানা গিয়েছে, পরিষেবা স্বাভাবিক থাকলেও ডিসপ্লে বোর্ড সকাল থেকে কাজ করছে না। বেশ কিছু যাত্রী ফ্লাইটও মিস করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। হলদিরামের কাছেও প্রচুর জল জমেছে।
রাতভর ভারী বৃষ্টির জেরে হাওড়া ও শিয়ালদা শাখার রেললাইনে জল জমেছে। এর জেরে ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। রেললাইন জলমগ্ন থাকার কারণে হাওড়া স্টেশনে ট্রেন ঢুকতে পারছে না বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় আপ ও ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। লক্ষীকান্তপুর, ডায়মন্ডহারবার ও ক্যানিং শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ। রেল সূত্রের খবর, পার্ক সার্কাস লাইনেও জল জমেছে।
কামডহরি (গড়িয়া): ৩৩২ মিলিমিটার
যোধপুর পার্ক: ২৮৫ মিলিমিটার
কালীঘাট: ২৮০.২ মিলিমিটার
তপসিয়া: ২৭৫ লিমিমিটার
বালিগঞ্জ: ২৬৪ মিলিমিটার
চেতলা: ২৬২ মিলিমিটার
মোমিনপুর: ২৩৪ মিলিমিটার
চিংড়িঘাটা: ২৩৭ মিলিমিটার
পামার বাজার: ২১৭ মিলিমিটার
ধাপা: ২১২ মিলিমিটার
সিপিটি ক্যানাল: ২০৯.৪ মিলিমিটার
উল্টোডাঙ্গা: ২০৭ মিলিমিটার
কুঁদঘাট: ২০৩.৪ মিলিমিটার
পাগলাডাঙা: (ট্যাংরা)২০১ মিলিমিটার
কুলিয়া (ট্যাংরা): ১৯৬ মিলিমিটার
ঠনঠনিয়া: ১৯৫ মিলিমিটার
কলকাতা পুরসভার তথ্য অনুযায়ী ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে কখনও এত পরিমাণ বৃষ্টি নথিবদ্ধ হয়নি। কলকাতার প্রায় সর্বত্র বৃষ্টি চলছে। তার জেরে অধিকাংশ এলাকায় জল জমেছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে গড়িয়ার কামডহরিতে, ৩৩২ মিলিমিটার। ভোর চারটে থেকে গঙ্গার সব লকগেট খোলা হয়েছে। কিন্তু দুপুর ১২টায় আবার লকগেট বন্ধ করা হবে।
ভারী বৃষ্টিতে একাধিক এলাকা জলমগ্ন। কালিকাপুর, গড়িয়াহাট, বেনিয়াপুকুর ও নেতাজী নগরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, নেতাজী নগরে একজন সাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। জমা জলের মধ্যে সাইকেল চালাতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে তিনি বিদ্যুতের খুঁটি ধরতে যান। সেই সময়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়ে বলে জানা গিয়েছে।
শহরের বেশিরভাগ জায়গায় ১০০ মিলিমিটারের উপর বৃষ্টি হয়েছে। নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে উত্তর কলকাতার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, এম জি রোড, ঠনঠনিয়া, কলেজ স্ট্রিট, কাশীপুর রোড, বিধান সরণি, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট থেকে শুরু করে দক্ষিণ কলকাতার একাধিক জায়গা জলমগ্ন।
রাতভর তুমুল বৃষ্টিতে কলকাতা, সল্টলেক এবং লাগোয়া এলাকা বানভাসি চেহারা নিয়েছে। প্রচুর বাড়ির একতলায় জল ঢুকে গিয়েছে। কলকাতা এবং শহরতলির নীচু এলাকাগুলি প্লাবিত। রেললাইনে জল জমে ট্রেন চলাচলও বিপর্যস্ত।