সনাতন ধর্মে মহালয়া এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ভাদ্র পূর্ণিমার পরবর্তী প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে অমাবস্যা পর্যন্ত চলে পিতৃপক্ষ। এই সময়কালেই পূর্বপুরুষরা তাঁদের উত্তরপুরুষদের নিকটে উপস্থিত থাকেন বলে বিশ্বাস করা হয়। সেই কারণেই পিতৃপক্ষজুড়ে শ্রাদ্ধ এবং তর্পণের আচার পালিত হয়। এর শেষ দিনটি, অর্থাৎ মহালয়া, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তর্পণ শব্দটি এসেছে ত্রুপ ধাতু থেকে, যার অর্থ সন্তুষ্ট করা। ভগবান, ঋষি, পিতৃপুরুষ ও গুরুর উদ্দেশে জল ও অন্ন নিবেদন করে তাঁদের তুষ্ট করাই হল তর্পণ। মহালয়ার ভোরে গঙ্গার ঘাটে কিংবা নদীর ধারে অসংখ্য মানুষকে তর্পণ করতে দেখা যায়। শাস্ত্রমতে, এই দিনটির গুরুত্ব বিশেষ। প্রচুর মানুষ এদিন গঙ্গায় তর্পণ করছেন।
মহালয়া অমাবস্যায়, ভুল করেও কাউকে মন বা হৃদয় দিয়ে আঘাত করবেন না। ঘৃণা বা শত্রুতার অনুভূতি পোষণ করবেন না। আপনার বাড়িতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
অমাবস্যা তিথি শেষ - ২২ সেপ্টেম্বর, রাত ১:২৩
কুতুপ মুহুর্ত - রাত ১১:৫০ - দুপুর ১২:৩৮
রোহিণী মুহুর্ত - দুপুর ১২:৩৮ - দুপুর ১:২৭
বিকেল কাল - দুপুর ১:২৭ - বিকেল ৩:৫৩
হিন্দু ধর্মে তর্পণের নানা প্রকারের উল্লেখ রয়েছে— দেব তর্পণ, ঋষি তর্পণ, মাতৃ তর্পণ, ভীষ্ম তর্পণ ইত্যাদি। তবে পিতৃ তর্পণই সবচেয়ে প্রচলিত। অনেকেই একে পিতৃযজ্ঞও বলেন। এ বছর মহালয়া পড়েছে ২১শে সেপ্টেম্বর, রবিবার। অমাবস্যা তিথি শুরু হবে ২০ সেপ্টেম্বর রাত প্রায় ১১:৫৪ মিনিটে এবং শেষ হবে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২:২৩:৪৬ মিনিটে। এ ছাড়াও, মহালয়ার দিন এই বছর আংশিক সূর্যগ্রহণও ঘটবে।
দেবী পক্ষের সূচনা ঘটে এই দিনেই। বলা হয়, দেবীর চক্ষুদানও হয় মহালয়ার প্রভাতে। তাই মহালয়ার সকাল থেকেই শুরু হয় পিতৃ তর্পণ। তর্পণ শব্দের অর্থই সন্তুষ্ট করা। মন্ত্রোচ্চারণ করে কুশ, তিল মেশানো জল, চাল, দুধ, সাদা ফুল একত্রে নিবেদন করা হয় পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে। সাধারণত দক্ষিণ মুখে বসে, হাতে কুশ নিয়ে ‘ওম আগচ্ছন্তু মে পিতর, গ্রহন্তু জলাঞ্জলিম’ মন্ত্র পাঠ করে জল অর্পণ করতে হয়। শাস্ত্র মতে, এই ভাবে তর্পণ করলে আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।
৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে পিতৃপক্ষ। শাস্ত্রমতে সর্বপিতৃ অমাবস্যা অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত এই বিশেষ সময়। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রবিবার পালিত হবে সর্বপিতৃ অমাবস্যা বা মহালয়া। এ দিন উত্তর পুরুষের হাত থেকে জল পেয়ে তৃপ্ত হয়ে পূর্বপুরুষদের ফিরে যাওয়ার দিন। মহালয়ার ভোর থেকেই গঙ্গা ও অন্য নদীর পাড়ে তর্পণ ও শ্রাদ্ধকর্ম শুরু হয়। এর ফলে অন্ন-জল পেয়ে তৃপ্ত পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদে পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ হয় ও পিতৃদোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শাস্ত্রমতে কোষ্ঠীতে পিতৃদোষ থাকা অত্যন্ত অশুভ। এর প্রভাবে পরিবারের সদস্যদের উন্নতির পথে বাধা আসে। পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য যে নিয়মে জল দেওয়া হয়, তা তর্পণ নামে পরিচিত।