জলে ডুবে যাওয়া কিশোরকে অচৈতন্য অবস্থায় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল বাড়ির লোক। হাসপাতালের এমারজেন্সিতে দেখার পর ওই রোগীকে মৃত ঘোষণা করে দিয়েছিলেন কর্তব্যরত ডাক্তার। কিন্তু বাড়ির লোকের কি মন মানতে চায়। তাই বুকে চাপ দিয়ে মুখে হাওয়া দিতে শুরু করেন কয়েকজন। যদি কিছু মিরাকল হয়। আর হলও তাই। পরিবারের লোকের দাবি, ভালো করে না দেখেই ওই কিশোরকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। আমরা মুখে চাপ দিয়ে হাওয়া দিতে সে জল বমি করা শুরু করে, এবং শ্বাস প্রশ্বাস শুরু হয়েছিল। তারপরে আমাদের দাবি মতো অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টাও হয় ৷ পরে সেখানেই মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি চিকিৎসকদের গাফিলতিতে মৃত্যু হয়েছে ওই কিশোরের। অবিলম্বে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রবিবার, ১৭ নভেম্বর এই ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়ায় ওই সরকারি হাসপাতালে। পরিস্থিতি সামলাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়। হাসপাতাল সুপারের দাবি-"এই ধরনের ঘটনাতে মৃতের পেশি সংকোচনের ফলে অনেক সময় মুখ থেকে তরল পদার্থ বের হয় ৷ তা দেখেই হয়তো পরিজনেরা ভেবেছিল রোগী বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রোগী মৃত অবস্থাতেই এসেছিল।" চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
জানা গিয়েছে রবিবার বিকেলে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে খড়গপুর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আঠারো বছরের এক কিশোর ভি সাই মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন কংসাবতী নদীতে স্নান করতে এসেছিল। সেখানে স্নান করতে এসে জলে তলিয়ে যায় সে। কোনওভাবে স্থানীয়রা তাঁকে চেষ্টা করে উদ্ধার করে। পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে এমারজেন্সিতে থাকা চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরে তাঁর কপালে ডেথ স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজনের দাবি-"তাকে ভালো করে পরীক্ষা না করেই এই মৃত ঘোষণা করে দেওয়া হয়। আমরা সন্দেহ হওয়াতে মুখে ফু দিয়ে চাপ দিতেই সে জল বমি করা শুরু করে। তারপরেই হার্ট চালু হয়ে যায়। আমরা বিভিন্ন ডাক্তারকে বারবার অনুরোধ করি দেখার জন্য। কেউই গুরুত্ব দেয়নি। অনেক চেষ্টা করে পুলিশ অন্যান্যদের বলার পর তাকে অক্সিজেন দিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে মৃত ঘোষণা করা হয় আবার।"
এই ঘটনাতে এমারজেন্সিতে থাকা চিকিৎসকদের গাফিলতিতে পরে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে এমন দাবি করে উত্তেজনা তৈরি হয়। খড়গপুর থেকে আসা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে চিকিৎসকদের গাফিলতি নিয়ে। জুনিয়র ডাক্তারদের উপস্থিতিতে এই কাণ্ড পুরোটা হয়েছে বলে দাবি। বারবার বলার পরেও কোন সিনিয়র ডাক্তারকে আসতে দেখা যায়নি বলে দাবি পরিবারের। সিনিয়র ডাক্তারদের অনুপস্থিতি এবং সম্পূর্ণ গাফিলতিতে এই কিশোর মারা গেছে বলে অভিযোগ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। মৃতের আত্মীয় রাজু সাই বলেন-" এতক্ষণ হাসপাতাল চত্বরে কোনও ডাক্তারকেই দেখা যাচ্ছিল না। যেই বিক্ষোভ শুরু হল প্রচুর পুলিশ হাজির হয়ে গেল। এতগুলো পুলিশ আসতে পারে, একটা সিনিয়র ডাক্তার উপস্থিত হতে পারল না? পুরোপুরি ব্যর্থ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসা পরিষেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এখানে সিনিয়র ডাক্তাররা কেউই থাকে না। অবিলম্বে এমারজেন্সিতে থাকা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আমরা এই বডি পোস্টমর্টেম করতে দেবো না বা দেহ নিয়ে যাব না।" একই দাবি করেছেন খড়গপুর থেকে আগত ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ফিদা হোসেন-এরও৷ ফিদা হোসেন জানান- “ সম্পূর্ণ গাফিলতিতে হয়েছে এই ঘটনা ৷ আমি জেলা শাসক, পুলিশ সুপার ও মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ করছি ৷ চরম গাফলতিতে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে ৷”
ঘটনায় চরম উত্তেজনা তৈরি হলে বিশাল পুলিশবাহিনী ও আধিকারিকদের ছুটে আসতে হয়। টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে উত্তেজনা পর্ব চলে। দীর্ঘ চেষ্টার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয় পুলিশ। এই প্রসঙ্গে হাসপাতাল সুপার ডাক্তার জয়ন্ত রাউতকে ফোন করা হলে তিনি জানান-" এই ধরনের ঘটনায় মৃতের পেশি সংকোচন এর ফলে অনেক সময় মুখ থেকে তরল পদার্থ বের হয়। সেটা দেখেই হয়তো পরিজনেরা ভেবেছিলেন রোগী বেঁচে রয়েছে। আদপে সেটা হয়নি। ওই কিশোরকে মৃত অবস্থাতেই আনা হয়েছিল।" এই ঘটনায় উত্তেজনা চরম থাকায় পরিবারের লোকজনের দাবী মতো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে আধিকারিকরা। তবে অন্যান্য বারের মত এবারও সিনিয়র চিকিৎসকদের মেদিনীপুর হাসপাতালে অনুপস্থিতি নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠলো।
সংবাদদাতাঃ শাহজাহান আলি