বছরের পর বছর স্কুলে ক্লাস না করেও শিক্ষক হিসেবে নিয়মিত মাইনে তুলছেন এক তৃণমূল নেতা! মাসে এক আধবার গিয়ে স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতা. গোটা মাসের সই করে দিয়ে আসতেন। এমনকী নিজে স্কুলে যান না বলে তাঁর বদলে একজন ডামি শিক্ষিকাও রেখেছিলেন। এমন অভিযোগ উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডিপুর ব্লকের ভগবানখালি নিউ প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক স্বপন প্রধানের বিরুদ্ধে। এদিকে অভিযোগ পেয়ে শো-কজ করেছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক। এমন অভিযোগের সত্য়তা স্বীকার করেছে ছাত্ররাও। যদিও অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক।
জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে জেতেন স্বপন প্রধান। তিনি, তাঁরই ভাইয়ের স্ত্রী অমিতা প্রধানকে টিচার হিসেবে রেখে ক্লাস করাতেন। দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম চলছিল বলে জেলাশাসকের কানে খবরটি পৌঁছে যায়। জেলাশাসক ডিআইকে নির্দেশ দেন ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার জন্য। DI-এর তরফ থেকে শো'কজ লেটার যায় অভিযুক্ত শিক্ষকের হাতে। স্কুলের ছাত্ররাও এক কথায় স্বীকার করেছে।
যদিও স্বপন প্রধান বলেন, "এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি নিয়মিত ক্লাস করি। ২০২৩ সাল থেকে আমি জেলা পরিষদ সদস্য। তার আগে তো আমি জেলা পরিষদ সদস্য ছিলাম না। অসুস্থতার কারণে আমি মেডিক্যাল লিভ নিয়েছিলাম। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমি ছুটির লিখিত আবেদন করতে পারিনি। ফোনে প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তার পর থেকে নিয়মিত ক্লাস করছি। চিকিৎসা করে ফিরে আসার পর আমি ছুটির আবেদন করেছি ও মেডিক্যাল সার্টিফিকেটও জমা দিয়েছি। আমি একটা শো-কজ নোটিশ পেয়েছি। তার উত্তরও দেব।"
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক নিতাইচরণ মাইতি বলেন, "কোনও ডামি শিক্ষিকার ব্যাপার নেই। একজন শিক্ষানুরাগী মহিলা স্ব-ইচ্ছায় মাঝে মধ্যে আসতেন। উনি ক্লাস নিতেন না। কমিটির অনুমতি নিয়ে তিনি মাঝে মধ্যে আসতেন। মাঝে মধ্যে শিক্ষকদের সহযোগিতা ও ছাত্রদের পঠনপাঠনের সুবিধার জন্যে ক্লাস নেওয়ার ও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। উনি অন্য জায়গায় পড়িয়েছেন সে কারণে কমিটির অনুমতি নিয়ে ওনাকে মাঝেমধ্যে বাচ্চাদের পড়াতে বলা হয়েছিল বিনা পারিশ্রমিকে। উনি নিজেও কমিটিতে রয়েছেন।"
তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি মৃনালকন্তি সিনহা বলেন, "স্বপনবাবু একজন সহ শিক্ষক। পাশাপাশি জেলা পরিষদের সদস্য ও দয়িত্বশীল নেতৃত্ব। শুনেছি বর্তমানে তিনি বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকার কারণে স্কুলের পঠন পাঠনে যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্যে ডামি শিক্ষক দিয়েছিলেন। আমি জানি না অভিযোগ কতটা সঠিক । যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আমি তার তীব্র বিরোধিতা করছি।" যদিও পূর্ব মেদিনীপুরের ডিআই প্রাথমিক জানান শোকজ করা হয়েছে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।