দলিতদের শিবমন্দিরে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ, কাটোয়ার গ্রামে পুলিশ মোতায়েন

একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সামাজিক বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার ঘটনা সামনে এল এবার পূর্ব বর্ধমানে জেলার কাটোয়া এক নম্বর ব্লকের গীধগ্রামে। গ্রামেই রয়েছে গিধেশ্বরী মন্দির। সেই মন্দিরের গর্ভগৃহে নিম্নবর্ণের প্রবেশের অধিকার ঘিরে উত্তেজনা। 'নিচু জাত' তাই মন্দিরে ওঠা নিষিদ্ধ।

Advertisement
দলিতদের শিবমন্দিরে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ, কাটোয়ার গ্রামে পুলিশ মোতায়েনদলিতদের শিবমন্দিরে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ, কাটোয়ার গ্রামে পুলিশ মোতায়েন
হাইলাইটস
  • স্থানীয়েরা জানান, এই শিব ‘গীধেশ্বর’ নামে পরিচিত
  • সারা বছর নিত্য পূজো হয়

একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সামাজিক বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার ঘটনা সামনে এল এবার পূর্ব বর্ধমানে জেলার কাটোয়া এক নম্বর ব্লকের গীধগ্রামে। গ্রামেই রয়েছে গিধেশ্বরী মন্দির। সেই মন্দিরের গর্ভগৃহে নিম্নবর্ণের প্রবেশের অধিকার ঘিরে উত্তেজনা। 'নিচু জাত' তাই মন্দিরে ওঠা নিষিদ্ধ। মন্দিরে প্রবেশাধিকার চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ গ্রামের দাস পাড়ার ১৩০ জন বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ, দলিত হওয়ায় গ্রামের শিবমন্দিরে দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের উঠতে এবং পুজো দিতে বাধা দেয় গ্রামের উঁচু জাত ও বর্ণের মানুষরা। এরপর প্রশাসন তাঁদের মন্দিরে প্রবেশ করাতে নিয়ে গেলে প্রতিরোধের মুখে পড়ে। উত্তেজনা সৃষ্টি হয় গ্রামে। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টহল দিচ্ছে RAF।

৩৫০ বছরের পুরনো শিব মন্দির। স্থানীয়েরা জানান, এই শিব ‘গীধেশ্বর’ নামে পরিচিত। সারা বছর নিত্য পূজো হয়। শিবরাত্রি গাজন উৎসবে অনেক ধুমধাম হয়। কয়েকদিন আগে গীধগ্রামের দাসপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে গিধেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে দাস পাড়ার পরিবারগুলিকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ঢুকতে গেলে গালিগালাজ করা হচ্ছে। এ নিয়ে এসডিও-র  দারস্ত হয়েছিলেন তাঁরা। দাসপাড়ার বাসিন্দাদের দাবি ছিল তাঁরা যেন শিবরাত্রির দিন গ্রামের মন্দিরে শিবের মাথায় জল ঢালতে পারেন। কিন্তু তখন প্রশাসন তাঁদের নিষেধ করে। প্রশাসনের কথামতো শিবরাত্রির দিন মন্দিরে জল ঢালতে যায়নি দাসপাড়ার বাসিন্দারা। পরে এসডিও বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল পুজো অর্চনার অধিকার গ্রামের সকল মানুষ সমানভাবে পাবেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। শুক্রবারও একই ঘটনা ঘটে। তা নিয়েই গ্রামে উত্তেজনা ছাড়ায়। শুক্রবার কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের বিডিও এবং কাটোয়ার এসডিপিও পুলিশ বাহিনী নিয়ে গিয়ে দাসপাড়ার বাসিন্দাদের মন্দিরে জল ঢালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়ে গেলে ফের গ্রামের বাকি বাসিন্দারা মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেয়। সেখানেই শুরু হয় বচসা এবং ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে যায় এলাকায়। এরপর RAF মোতায়ন করে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ।

Advertisement

মন্দিরের সেবায়েত মাধব ঘোষ বলেন, ৩০০ বছরের পুরনো প্রথা চলে আসছে। প্রথা হঠাৎ করে ভাঙা যায় না। দাসপাড়ার বাসিন্দারা যে পুজো দিতে চান , তা আমাদের মন্দির কমিটিকে জানায়নি। তারা প্রশাসনের কাছে গেল কেন?' জানা গিয়েছে, মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে ব্রাহ্মণ ব্যতীত মন্দিরের গর্ভগহে কেউ প্রবেশ করতে পারেন  না। এটাই ৩ শতাব্দী ধরে চলে আসছে। তাই এই প্রথা ভঙ্গ করা উচিত নয়।

সংবাদদাতা- সুজাতা মেহেরা

POST A COMMENT
Advertisement