কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে ন্যায় সংহিতার সেকশন ৭৯ অনুসারে এফআইআর দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান রেখা শর্মার বিরুদ্ধে তাঁর ‘পাজামা’ মন্তব্যের জেরে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই খবর সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। আর তার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন তৃণমূল সাংসদ। এবার সরাসরি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দিকে আঙুল তুললেন তিনি। বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের লেটারহেড প্যাডে সীমান্তে গোমাংস বিনিময়ের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, তথ্যপ্রমাণ-সহ তা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন মহুয়া মৈত্র।
মহুয়া, এদিন সকালে করা পোস্টে একটি পাস দেখিয়ে দাবি করেছেন যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর তার অফিসিয়াল লেটারহেডে একটি ফর্ম ছাপিয়ে গরুর মাংস পরিবহনের জন্য পাচারকারীদের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছেন। মহুয়া X হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট করা ছবিতে উত্তর ২৪ পরগণার জিয়ারুল গাজীর কাছ থেকে তিন কেজি গরুর মাংস বহন করার জন্য শান্তনু ঠাকুরের অফিসিয়াল লেটারহেডের একটি পাস দেখানো হয়েছে। মহুয়া এই পোস্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ট্যাগ করেছেন।
Union Minister has printed forms on official letterhead to @BSF_India 85BN issuing “passes” for smugglers on Indo-Bangla border. In this case for allowing 3 kgs of Beef.
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) July 8, 2024
Hello @HMOIndia , Gau Rakshak Senas, Godi Media. pic.twitter.com/iYXdihtrVI
X হ্যান্ডলে মহুয়ার পোস্টে দেখা গিয়েছে, বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের লেটারহেড প্যাডে বিএসএফের (BSF) ৮৫ নং ব্যাটেলিয়নের নাম উল্লেখ রয়েছে। জনৈক জিয়ারুল গাজি নামে এক ব্যক্তির ৩ কেজি গোমাংসসীমান্তের ওপারে পাঠানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে এবং তা দিয়েছেবিএসএফ। গরু পাচারের মতো ঘটনায় সীমান্তে বিএসএফ জড়িত, সেই অভিযোগে বহু আগে থেকেই সরব রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। বিশেষত গরু পাচার নিয়ে দলের একাধিক হেভিওয়েটকে সিবিআই, ইডির তলবের পরিপ্রেক্ষিতে উল্টে কেন্দ্রের উপরই দায় চাপিয়েছে শাসকদল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টতই গরু ও কয়লা পাচারে বিএসএফ এবং সিআইএসএফ-কে দায়ি করেছেন। এবার মহুয়া মৈত্র একেবারে নথি তুলে ধরে সেই অভিযোগে সুর চড়ালেন আরও একধাপ।
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে শুরু করলে বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর সাংবাদিক সম্মেলনে স্বীকার করেন যে এই পাসটি তিনিই ইস্যু করেছেন। যদিও ভারত সরকারের তরফ থেকে এই তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। বিএসএফকে অভিযুক্ত করে শান্তনু ঠাকুর বলেন যে এলাকার ৮৫ ব্যাটালিয়নের সমস্ত লোক নয় তবে কিছু লোক টিএমসির সঙ্গে যুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে এবং তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন। সেজন্য ওই এলাকায় ভারসাম্য বজায় রাখতে এই পাসগুলো দিয়েছি। শান্তনু ঠাকুর পুরো ঘটনাটিকে নেতিবাচক প্রচার বলে অভিহিত করে বলেছেন যে বাগদা বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে নেতিবাচক প্রচার করা হচ্ছে।
বিএসএফ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃক ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার গ্রামের লোকজনকে পণ্য পরিবহনের জন্য একটি স্লিপ (পাস) দেওয়া হয়। এই পাস দেখার পরেই, বিএসএফ পোস্টগুলি মানুষকে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার অনুমতি দেয়। এই পাসটি ভারতের দিকে গ্রামে পণ্য বহন করার জন্য প্রয়োজন, যা টিএমসি-চালিত পঞ্চায়েত দ্বারা জারি করা হয়। তবে কোনো মূল্যেই এই পাস দিয়ে বাংলাদেশে পণ্য নেওয়া যাবে না। এই পাস শুধুমাত্র ভারতের সীমান্তে কার্যকর। বিএসএফ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে আদালত বিএসএফকে পণ্য নিয়ন্ত্রণের অনুমতি দিলে বিষয়টি বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছিল। এদিকে এদিন শান্তনু ঠাকুর জিয়ারুল গাজীকে প্রেসের সামনে নিয়ে আসেন, যাকে এই পাস দেওয়া হয়েছিল। জিয়ারুলের ভাষ্যমতে, তিনি তিন কেজি গরুর মাংস খেতে নিয়ে এসেছিলেন এবং হাকিমপুর সীমান্তে তার গ্রামে বিএসএফ-এর কাছে পাস দেখালেই যে কোনো পণ্য নিতে দেওয়া হয়।