বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের সদস্য সন্দেহে মুর্শিদাবাদের হরিহর পাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মিনারুল শেখ ও মহম্মদ আব্বাস আলিকে। একইসঙ্গে অসম থেকে আরও ৫ জন ও কেরল থেকে আরও ১ জনকে জালে তোলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুতর তথ্যও এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। এই বিষয়ে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার জানান, ধৃতদের উদ্দেশ্য ছিল সংগঠনের জন্য অস্ত্র যোগাড় করা, স্থানীয় যুবকদের উদ্বুদ্ধ করে সংগঠনে টানা। এছাড় চিকেনস নেকে নাশকতামূল কার্যকলাপ চালানোও এদের উদ্দেশ্য ছিল বলে জানান এজিডি দক্ষিণবঙ্গ।
উল্লেখ্য হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি রীতিমত উতপ্ত। সেখানে থাকা সংখ্যালঘু হিন্দু থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সদস্যরা দিনের পর দিন আক্রান্ত হচ্ছে। এর পিছনে রয়েছে বাংলাদেশের নানা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। যা পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে ফের ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। অভিযোগ, এদের প্রশ্রয় দিচ্ছে খোদ সেখানকার অন্তবর্তীকালিন সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস। এবার বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সন্দেহে ২ ব্যক্তি গ্রেফতার বাংলা থেকে। জানা গিয়েছে, আনসারুল্লা বাংলা টিমের কয়েকজন সদস্য স্লিপার সেল তৈরি করেছে। এদের উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্র সংগ্রহ করা, স্থানীয় যুবকদের উদ্বুদ্ধ করে সংগঠনে টানা, চিকেনস নেকে নাশকতামূলক কাজ করা।
মুর্শিদাবাদ থেকে যে ২ জন গ্রেফতার হয় তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৬ জিবি পেনড্রাইভ, মোবাইল, বেশকিছু নথি, ইসলামিক বই। সূত্রের খবর, আর সেই বইগুলো আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান জসীমউদ্দীনের লেখা, যা ভারত বিরোধী। যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে একজন একটি মাদ্রাসা চালাত বলেও জানা গিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, নেপাল থেকে চিকেনস নেক দিয়ে অস্ত্র পাচারের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। বাংলাদেশ, অসম ও বাংলায় অস্ত্র পৌঁছনোর পরিকল্পনাও ছিল। পাক হ্যান্ডেলারের মাধ্যমে অস্ত্র আসার কথা ছিল মডিউলের কাছে। এমনকী ফালাকাটায় এই নিয়ে নাকি একাধিক বৈঠকও আয়োজিত হয়।
প্রসঙ্গত, অশান্ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনার মাঝেই নতুন করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে বাংলায়। জানা গিয়েছে বাংলায় সক্রিয় রয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল বাংলা টিম। এই জঙ্গি সংগঠন হাসিনার আমলে কিন্তু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। রাজ্য পুলিশের এসটিএফ গোপন খবর পেয়ে কাজ করছিল। এর উপর অসম পুলিশের এসটিএফের থেকে ইনপুট পেয়ে ১৮ ডিসেম্বর, বুধবার, মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় হানা দেয় পুলিশ। সঙ্গে ছিল অসম পুলিশের এসটিএফও। সেখান থেকে মিনারুল শেখ ও মহম্মদ আব্বাস আলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দুজনকে ট্রানজিট রিমান্ডে অসমে নিয়ে গিয়েছেন অসম পুলিশের এসটিএফ। এদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর নথিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে ধৃতদের মধ্যে মিনারুল শেখ কিছুদিন আগেই একটি মাদ্রাসা খুলেছিল। সেখানে বেশ কয়েকজন পড়তে আসত। আর মহম্মদ আব্বাস আলি পকসো মামলায় অভিযুক্ত ছিল। সে ওই মামলায় জেলও খেটেছে।
এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, এই দুজনের কাজ ছিল মূলত মুর্শিদাবাদ ও আলিপুরদুয়ার থেকে ছেলেদের তাদের সংগঠনে যোগ দেওয়ানো। এদের উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্র সংগ্রহ করা, স্থানীয় যুবকদের উদ্বুদ্ধ করে সংগঠনে টানা, চিকেনস নেকে নাশকতামূলক কাজ করা। ধৃত মহম্মদ আব্বাস আলি যে মাদ্রাসা চালাত সেখানেও নাশকতার বিষয়ে মগজ ধোলাই করা হত কিনা সেবিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না জানালেও বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। কিছুদিন আগে রাজ্য পুলিশের STF-এর কাছে খবর আসে, বাংলাদেশের নিশিদ্ধ ইসলামিক জঙ্গি সংগঠণ ABT তার কয়েকজন সদস্য এই রাজ্যে কোনও একটা জায়গায় স্লিপার সেল তৈরি করেছে। সেই সঙ্গে নাশকতামূলক কাজে স্থানীয়দের যাতে যুক্ত করা যায় সেই ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ইনপুটের ওপরেই রাজ্য পুলিশের STF কাজ করছিল। এরপরে অসম পুলিশের তরফে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানা যায় মুর্শিদাবাদে স্লিপার সেলের ২ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে। এই খবর পাওয়ার পরে ১৮ তারিখ অসম পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের STF মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় যৌথ অভিযান চালায়। সেখানে গিয়ে ২ জনকেই গ্রেফতার করা হয়। এই নিয়ে আসাম থেকে ৫ জন , মুর্শিদাবাদ থেকে ২ জন ও কেরল থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ থেকে যে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৬ জিবি পেনড্রাইভ, মোবাইল, বেশকিছু নথি, ইসলামিক বই। আর সেই বইগুলো ABT প্রধান জসীমউদ্দীনের লেখা। যা কিনা ভারত বিরোধী বই।
রিপোর্টার: রাজেশ সাহা