ভারতের রেল ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। এবার দেশের অন্যতম উচ্চগতির ট্রেন ‘বন্দে ভারত’-এর স্লিপার সংস্করণ তৈরি হবে বাংলার মাটিতে। হুগলির উত্তরপাড়ায় শুরু হয়েছে এই বিশেষ ধরনের ট্রেন তৈরির প্রস্তুতি। দেশজুড়ে দূরপাল্লার যাত্রা আরও আরামদায়ক ও দ্রুত করতে এবার ভারতীয় রেল আনতে চলেছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি স্লিপার কোচযুক্ত বন্দে ভারত ট্রেন।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে টিটাগড় রেল সিস্টেম লিমিটেড (TRSL) এবং ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (BHEL)। দুই সংস্থার যৌথ উদ্যোগে মোট ৮০টি বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেন নির্মিত হবে। সেই লক্ষ্যেই উত্তরপাড়ায় তৈরি হয়েছে নতুন প্রোডাকশন লাইন। জানা গিয়েছে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের মধ্যেই প্রথম স্লিপার ট্রেন প্রস্তুত হয়ে যাবে।
১৪৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবে মাত্র ১৫ ঘণ্টায়
এই ট্রেনগুলিতে থাকবে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। গতির দিক দিয়ে ট্রেনগুলি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ কিমি গতিতে ছুটতে পারবে। একটি ট্রেন প্রায় ১৪৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবে মাত্র ১৫ ঘণ্টায়। অর্থাৎ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির মধ্যে দূরত্ব কমবে সময়ের নিরিখে। শুধু গতিই নয়, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও আরামের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। কোচগুলিতে থাকবে উন্নত বায়ু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, স্মার্ট লাইটিং, উন্নত বার্থ ডিজাইন এবং যাত্রী-সহায়ক অন্যান্য সুবিধা।
এটি দেশের একমাত্র কারখানা
এই প্রোডাকশন লাইনটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এটি দেশের একমাত্র কারখানা, যেখানে একই ছাদের তলায় অ্যালুমিনিয়াম ও স্টেনলেস স্টিল দিয়ে ট্রেনের কোচ তৈরি হয়। ফলে নির্মাণের ক্ষেত্রে কোয়ালিটি ও গতি—দুটোই বজায় রাখা সম্ভব হবে।
‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
টিটাগড় রেল সিস্টেমের ভাইস চেয়ারম্যান উমেশ চৌধুরি জানিয়েছেন, এই প্রকল্প ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর দাবি, এখন সংস্থার বছরে ৩০০ কোচ তৈরির ক্ষমতা থাকলেও আগামী দিনে তা বাড়িয়ে বছরে ৮৫০ কোচ উৎপাদনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে টিটাগড় রেল সিস্টেম।
এর আগে বন্দে ভারত ট্রেন শুধু মাত্র এসি চেয়ার কার সংস্করণেই পাওয়া যেত। ফলে দীর্ঘপথে রাতে সফরের জন্য যাত্রীদের তেমন সুবিধা ছিল না। এবার সেই ঘাটতি পূরণ করতে চলেছে বন্দে ভারত স্লিপার সংস্করণ। যাত্রীদের কাছে এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বাংলায় বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেন নির্মাণ শুধু রেল ব্যবস্থার উন্নয়ন নয়, বরং রাজ্যের শিল্পক্ষেত্র ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও এটি একটি বড় ধাপ হয়ে উঠতে পারে।