'বিপ্লবের' মেদিনীপুরেই এখন বিপ্লবীরা 'সন্ত্রাসবাদী'? বিতর্কের কারণ খুঁজল bangla.aajtak.in

ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘টেররিস্ট’ বা সন্ত্রাসবাদী বলত। এখন স্বাধীনতা লাভের ৭৫ বছর পরেই এক ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রেই সেই একই ভাষা ব্যবহার করেছে। আর এই বিষয়টিকেই নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

Advertisement
'বিপ্লবের' মেদিনীপুরেই এখন বিপ্লবীরা 'সন্ত্রাসবাদী'? বিতর্কের কারণ খুঁজল bangla.aajtak.inবিপ্লবীদের জেলা মেদিনীপুরেই বিপ্লবীদের 'সন্ত্রাসবাদী' আখ্যা, সরব শিক্ষাবিদ
হাইলাইটস
  • ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘টেররিস্ট’ বা সন্ত্রাসবাদী বলত
  • খন স্বাধীনতা লাভের ৭৫ বছর পরেই এক ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রেই সেই একই ভাষা ব্যবহার করেছে

বিপ্লবীদের 'সন্ত্রাসবাদী' আখ্যা। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রশ্নপত্র ঘিরে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জানা গিয়েছে, বুধবার স্নাতক স্তরে ষষ্ঠ সেমিস্টারের ইতিহাসের পরীক্ষা ছিল। সেখানে একটি প্রশ্ন নিয়েই রাজ্য রাজনীতিতে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রশ্নপত্রে লেখা হয়েছে, 'মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম করো, যাঁরা সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত হন?' আর এই প্রশ্নপত্র প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দায় সরব অনেকেই। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। শাসকদলকে নিশানা করেছ বিরোধী দল বিজেপি।

১৯৩১ সালের ৭ এপ্রিল জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেমস পেডিকে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে গুলি ছুড়ে হত্যা করেন বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত, জ্যোতিজীবন ঘোষ। ১৯৩২ সালের ৩০ এপ্রিল ম্যাজিস্ট্রেট রবার্ট ডগলাসকে জেলা বোর্ডের অফিসে ঢুকে হত্যা করেন বিপ্লবী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, প্রভাংশুশেখর পাল। পরের বছর ১৯৩৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বার্নাড ই জে বার্জকে খুন করে বিপ্লবী অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন দত্ত, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায় ও নির্মলজীবন ঘোষ।

ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘টেররিস্ট’ বা সন্ত্রাসবাদী বলত। এখন স্বাধীনতা লাভের ৭৫ বছর পরেই এক ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রেই সেই একই ভাষা ব্যবহার করেছে। আর এই বিষয়টিকেই নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা ও শিক্ষাবিদরা। ইতিমধ্যেই এনিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী বিমল দাশগুপ্তের ছেলে রণজিৎ দাশগুপ্ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'যাদের নাম ইতিহাসে লেখা, তাদের সম্পর্কে এমন শব্দপ্রয়োগ লজ্জার।' ‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’-এর সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, 'বিষয়টি শুধুই ভুল নয়, এটি একটি নীতিগত বিপর্যয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত অবিলম্বে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।'

শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, 'সন্ত্রাসবাদী শব্দটা সাম্রাজ্যবাদীরা ব্যবহার করত। যারা অহিংসা আন্দোলন করত তাঁরাও ব্যবহার করত। কিন্তু, আমরা জানি দেশপ্রেমের ইতিহাসে তাঁরা কেউই সন্ত্রাসবাদী নয়। তাঁরা প্রাণপন সংকল্প নিয়েছিলেন। মানে প্রাণ দেবেন বলেই প্রাণ নিতে দ্বিধা করতেন না। তাই তাঁদের সন্ত্রাসবাদী বলা মানে আমরা সাম্রাজ্যবাদী শিক্ষাকে ভুলতে পারিনি। আর মেদিনীপুরের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রশ্ন করা খুবই লজ্জার। কারণ, মেদিনীপুর অসংখ্য বিপ্লবীর জন্ম দিয়েছে। তাঁদের জন্য আমরা গর্বিত। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মেদিনীপুরের একটা আলাদা স্থান আছে। এছাড়াও, একটা কমিটি আছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র থেকে অন্য বিষয় দেখে। তাদের এটা কেন চোখে পড়ল না সেটা ভেবে আমি অবাক হচ্ছি।'

Advertisement

POST A COMMENT
Advertisement