ভবানীপুর অতীত, এবার বাকি ৪ কেন্দ্রের জন্য কোন গেম প্ল্যান সাজাচ্ছে TMC?

গত মে মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। শপথের ছয় মাসের মধ্যে তাঁকে জিতে আসতেই হবে। এই আবহে শেষপর্যন্ত আজ ভবানীপুরে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। আজ কেবল বাংলা নয়, গোটা দেশের নজর ছিল এই কেন্দ্রের ওপর। আর হবে নাইবা কেন, প্রার্থী যে স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তবে আজ থেকে ঠিক একমাস পর রাজ্যে ফের নির্বাচনের দামামা বাজতে চলেছে। এবার বাকি থাকা চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট করাবে নির্বাচন কমিশন। আর এই চার আসনকে এবার নিজেদের দখলে রাখতে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল শিবির।

Advertisement
ভবানীপুর অতীত, বাকি ৪ কেন্দ্রের জন্য  কোন গেম প্ল্যান TMC-র ?কোন গেমপ্ল্যান সাজাচ্ছেন নেত্রী
হাইলাইটস
  • ভবানীপুরের নির্বাচন শেষ
  • এবার নজরে ৪ কেন্দ্রের উপনির্বাচন
  • কোন গেমপ্ল্যান সাজাচ্ছেন নেত্রী?

গত মে মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। শপথের ছয় মাসের মধ্যে তাঁকে জিতে আসতেই হবে। এই আবহে শেষপর্যন্ত আজ ভবানীপুরে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। আজ কেবল বাংলা নয়, গোটা দেশের নজর ছিল এই কেন্দ্রের ওপর। আর হবে নাইবা কেন, প্রার্থী যে স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তবে আজ থেকে ঠিক একমাস পর রাজ্যে ফের নির্বাচনের দামামা বাজতে চলেছে। এবার বাকি থাকা চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট করাবে নির্বাচন কমিশন। আর এই চার আসনকে এবার নিজেদের দখলে রাখতে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল শিবির।

 

আরও পড়ুন: লকেটকে নিয়ে জোর জল্পনা, দলবদলের হাওয়ায় কিন্তু ভাসছে এই নামগুলিও

ভোটের পর যা ছিল রাজ্যের পরিস্থিতি
একুশের বিধানসভা ভোট মিটলেও বকেয়া ছিল সাত বিধানসভার ভোট। যার মধ্যে আবার মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরে প্রার্থী মৃত্যুর কারণে ভোট স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। তবে গত ৪ সেপ্টেম্বর বাংলার তিন কেন্দ্রের নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছিল কমিশন। যারমধ্যে সামসেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর ছাড়া ছিল ভবানীপুর। মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই কমিশন তড়িঘড়ি ভবানীপুরের ভোটের দিন ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। তবে ভবানীপুরে ভোটের আগেই দিনহাটা, শান্তিপুর, খড়দা ও গোসাবা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করে দেয় কমিশন। ফলত বাকি থাকা সাত কেন্দ্রেই এবার সবকটিতেই ভোট করিয়ে নিজেদের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছে কমিশন।

 

 

কী কারণে ভোট হচ্ছে এই চার কেন্দ্রে
২০১১ উপনির্বাচন এবং ২০১৬ নির্বাচনে ভবানীপুর থেকেই জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু একুশের ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে লড়বেন বলে সিদ্ধান্ত নেন মমতা, সেই কারণে ভবানীপুর থেকে প্রার্থী করা হয়েছিল শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। বিজেপির তারকা প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষকে হারিয়ে শোভনবাবু তৃণমূলের জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন।  তৃতীয় তৃণমূল মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হিসাবে শপথও নেন। কিন্তু গত মে মাসেই বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন শোভনদেব। তখনি ধরে নেওয়া হয়েছিল এবার এই আসনে ফের দাঁড়াতে চলেছেন দলনেত্রী। কিন্তু প্রশ্ন হল বাকি চার কেন্দ্রে কেন উপনির্বাচন করাতে হচ্ছে? প্রসঙ্গত দিনহাটা ও শান্তিপুর থেকে ভোটে জেতার পর বিধায়ক পদ ত্যাগ করেন বিজেপির দুই সাংসদ  নিশীথ প্রামাণিক এবং জগন্নাথ সরকার। তার মধ্যে নিশীথ আবার এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বিধায়কদের পদত্যাগ করায় এই দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচন আবশ্যক হয়ে পড়েছিল। এদিকে ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগেই কোভিড সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে প্রয়াত হযন খড়দার বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিংহ। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর প্রয়াত হন গোসাবার তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর। তাই ওই আসনগুলিতেও উপনির্বাচন করতে হত। 

Advertisement

 

আরও পড়ুন: ভিন রাজ্যে প্রভাব বিস্তারের লড়াই, জাতীয় মঞ্চে বন্ধু হারাচ্ছে TMC?

২০২১-এর বিধানসভা ভোটের ফলাফল
২০২১ এর বিধানসভা ভোটের ফলাফল অনুযায়ী এই চার আসনের ২টি গেছিল ঘাসফুলের দিকে আর বাকি দুটি তৃণমূলের দিকে।  গোসাবা কেন্দ্রে প্রয়াত  তৃণমূল প্রার্থী জয়ন্ত নস্কর পেয়েছিলেন  ১,০৪, ৭৫৮। তাঁর কাছে হেরে যান বিজেপি প্রার্থী বরুণ প্রামাণিক। তিনি পেয়েছিলেন ৮১,৫১৫ ভোট। অন্যদিকে খড়দা কেন্দ্রে জেতেন প্রয়াত তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিনহা। তিনি পান ৮৯,৮০৭ ভোট। হেরে যান বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত। শীলভদ্রবাবু পেয়েছিলেন ৬১,৬৬৭ ভোট। অন্যদিকে নদিয়ার  শান্তিপুর কেন্দ্রে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। তিনি পেয়েছিলেন ১,০৯, ৭২২ ভোট। হেরে যান তৃণমূল প্রার্থী অজয় দে। তিনি পেয়েছিলেন ৯৩,৮৪৪ ভোট। জগন্নাথ সরকার সাংসদ থাকতে থাকবেন, তাই  বিধায়ক হিসাবে তিনি পদত্যাগ করেন। দিনহাটায় জেতেন  নিশীথ প্রামাণিক। তিনি পেয়েছিলেন ১,১৬,০৩৫ ভোট। হেরে যান তৃণমূলের উদয়ন গুহ। তিনি পান ১,১৫, ৯৭৮ ভোট। সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক জেতার পর বিধায়কপদ ত্যাগ করেন। তাই এই কেন্দ্রে ভোট হবে। পরিসংখ্যান বলছে চার কেন্দ্রেই দুই শিবিরের ভাল রকম লড়াই হয়েছিল। বিশেষ করে বিজেপির জেতা আসন দুটিতে জয়ের ব্যবধান খুব বেশি ছিল না।

 

 

এবার ৪টি আসনেই জয় লক্ষ্য তৃণমূলের
ভোট পরবর্তী বাংলার পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। ভোটের আগে যেখানে গেরুয়া শিবিরে যাওয়ার ঢল দেখেছিল বঙ্গবাসী এখন চিত্র সেখানে উল্টো। ইতিমধ্যে বিধানসভায় বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৭ থেকে ৭১ নেমেছে। নির্বাচনের ৫ মাসের মধ্যেই দলবদল করেছেন বিজেপির এক সাংসদ ও ৪ বিধায়ক। যা পরিস্থিতি তাতে আগামী দিনে বিজেপির আরও অনেকেই শিবির বদল করার লাইনে রয়েছেন বলে লাগাতার দাবি করে চলেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এই আবহে ৩০ নভেম্বর ভোট হতে চলা চার আসনেই তাদের জয় নিশ্চিত বলে দাবি করছে জোড়াফুল শিবির। সোজা কথায় আজকের তিনটি আসন ও একমাস পর হতে চলা চারটি আসনেই এবার ঘাসফুল ফুটবে, স্বপ্ন দেখছেন নেত্রী। যা পরিস্থিতি তাতে সেটা অসম্ভব বলেও মনে হচ্ছে না। দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর মধ্যবর্তী সময়ে উৎসবের মরসুমে এমন ভোটের দিনক্ষণ ঠিক করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। পুজোর মধ্যে ভোটের প্রচার কী ভাবে চলবে, সেই প্রশ্নও উঠেছিল। যদিও শাসক দল কমিশনের উপনির্বাচন ঘোষণাকে স্বাগতই জানিয়েছে। এখানেই তারা বসে নেই, ভবানীপুরে ভোট মিটতেই এবার এই চার কেন্দ্র প্রচারে কোমর বেঁধে নামতে চাইছে তৃণমূল শিবির।  প্রার্থীদের নাম ঘোষণার তোরজোরও শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে জেলাওয়াড়ি নির্দেশও পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে খড়দা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, তা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে রয়েছে। উপনির্বাচনের দিন ঠিক হওয়ার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং সেই নাম ঘোষণা করে রেখেছেন।  ইতিমধ্যে শোভনদেবের হয়ে প্রচারে নেমে পড়েছে এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে  খড়দা বিধানসভার খালপোল, পানশীলা, পঞ্চাননতলা বাজার, রহড়া বাজার-সহ বিভিন্ন এলাকায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে ফ্লেক্স লাগাতে শুরু করেছেন  শাসক দলের কর্মী সমর্থকরা। শুরু হয়েছে শোভনদেবের সমর্থনে দেওয়াল লিখনও। জয়ের ব্যবধান এবার আরও বাড়বে বলেই আশাবাদী পানিহাটির বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষ। লোকসভা ভোটের নিরিখে ১ হাজার ২৬৮ ভোটে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও, এবার বিধানসভা ভোটে, খড়দায় তৃণমূল জয়ের মার্জিন ছিল ২৮ হাজার ১৪০ ভোট। অর্থমন্ত্রী ড. অমিত মিত্রের বরাবরের আসন খড়দা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে একুশের নির্বাচনে তিনি দাঁড়াননি। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসেবে টিকে থাকতে গেলে তাঁকেও ভোটে জিততেই হবে। এই অবস্থায় গোসাবা, শান্তিপুর ও দিনহাটার মধ্যে কোনটাতে তাঁকে  প্রার্থী করা হবে  নাকি তা খুব শীঘ্রই জানা যাবে। এদিকে দিনহাটা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে উদয়ন গুহ ফের প্রার্থী হচ্ছেন, এমন জল্পনাও শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

 

POST A COMMENT
Advertisement