রবীন্দ্রগবেষকদের মতে, মুক্তাঙ্গনে বা মুক্তশিক্ষার ধারণার ধারক ও বাহক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর এই শিক্ষানীতির প্রধান কথা হল, প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীর শিক্ষা নেওয়ার একটা ভারসাম্য বজায় থাকবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই শিক্ষা নীতির আর একটি দিক হল, আনন্দময় শিক্ষা। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয়। যে শিক্ষা একজন শিক্ষার্থী লাভ করবেন সেটা হবে আনন্দ ময়। সেখানে পড়ুয়ার কোনও বাধানিষেধ থাকবে না। সেই শিক্ষায় কোনও ভয় বা অনীহা থাকবে না। এই শিক্ষা ব্যবস্থার আর একটি সারকথা হল, নম্বর বা পরীক্ষা ভিত্তিক কিছু হবে না। শিক্ষার্থী চাপে পড়ে এমন কোনও পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে না শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনাটা তাঁর মূল ভাবনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
রবীন্দ্রগবেষকদের আরও দাবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরও মনে করতেন ,ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ও ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে বিশ্বসত্তার মিলনই যথার্থ শিক্ষা। শিক্ষার অর্থ শুধু জ্ঞানের সাধনা নয়, জ্ঞানের সাধনার সঙ্গে সঙ্গে অনুভূতি বা সৌন্দর্যবোধের বা শিল্পবৃত্তির সাধনা এবং কর্মশক্তির বা ইচ্চশক্তির সাধনা। তিনি শিক্ষাকে জীবনমুখী, আনন্দময়, স্বতঃস্ফূর্ত এক প্রক্রিয়া রূপে ব্যাখ্যা করতেন।
আরও পড়ুন : নজিরবিহীন! KKR-এর ম্য়াচে ইডেনে বকেয়া ডিএ-র দাবিতে বিক্ষোভ
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেন, রবীন্দ্রসাহিত্য ও শিক্ষায় হিন্দু পরম্পরার প্রকাশ ঘটেছে। তবে এই দাবি সার্বিকভাবে সত্যি, এমনটা মানতে নারাজ রবীন্দ্রগবেষকরা। তাঁদের মতে, হিন্দু এই শব্দটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যবহার করেছেন হিন্দু সংস্কৃতি হিসেবে। কোনও বিশেষ ধর্ম হিসেবে নয়। তিনি হিন্দু শব্দটি ব্যবহার করলেও কোনও একটি বিশেষ প্রেক্ষিতে বলেছেন। যেমন, তিনি যখন শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে সব টিঠি লিখছেন সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, তপোবনের মতো করে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে ব্রহ্মচর্য পালন করবে পড়ুয়ারা। তাহলে তারা বিশুদ্ধ হিন্দু হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন : পেনশনারদের বড় উপহার, মাত্র ৬ হাজার জমা দিলেই প্রতি মাসে মিলবে ৫০ হাজার টাকা
তবে এই হিন্দু তিনি ভারতের উত্তরাধিকার অর্থে ব্যবহার করেছিলেন। তবে ১৯০৭ সালের পর থেকে যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোরা, রাজা লিখছেন তখন কিন্তু সংকীর্ণ অর্থে হিন্দু কথাটা ব্যবহার করছেন না, সেটা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন। তপোবন ভাবনাটাও যে আত্মিক বন্ধনের একটা ভূমি সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। ফলে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-ভাবনা কোনও বিশেষ ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। কোনও একটি বা দুটি লেখা দিয়ে কবিগুরুকে বিচার করা ঠিক নয়। তাঁর সার্বিক জীবন দর্শন দেখলে এটা পরিষ্কার যে, কোনও বিশেষ ধর্ম বা সম্প্রদায়কে তুলে ধরার চেষ্টা কোনওদিন বিন্দুমাত্রও করেননি। বরং তিনি ভারতীয় সংস্কৃতী কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে সেটার দিকেই আলোকপাত করেছিলেন।