কলকাতা হাইকোর্ট থেকে ফের বড় ধাক্কা রাজ্য সরকারের। হাইকোর্ট ২০১০ সালের পরে জারি করা সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করেছে। আদালত জানায়, কোনও নিয়ম না মেনেই এসব সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ ওবিসি শংসাপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করা একটি পিটিশনে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত মমতা সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা কারণ এর কারণে তার সরকারের দেওয়া সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে। ২০১০ সালের পর দেওয়া সার্টিফিকেট বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
হাইকোর্টের রায় কী?
২০১২-তে মমতা সরকার একটি আইন প্রয়োগ করেছিল। এই আইনে সরকারি চাকরিতে ওবিসি শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। এর কিছু ধারা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্ট ২০১২ সালের আইনের একটি নিয়মও বাতিল করেছে। এই বিধানটি ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি নামে দুটি বিভাগ তৈরি করেছে, যেখানে অনেক জাতি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কিন্তু কেন বাতিল হল ওবিসি সার্টিফিকেট?
দাখিল করা পিটিশনে দাবি করা হয়েছে ২০১০ সাল থেকে জারি করা সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট ১৯৯৩ সালের পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণী কমিশন আইনকে উপেক্ষা করেছে। যারা সত্যিই অনগ্রসর শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত তাদের শংসাপত্র দেওয়া হয়নি।
হাইকোর্ট বলেছে, ১৯৯৩ সালের আইন অনুসারে, সরকার ওবিসি তালিকা তৈরির সময় অনগ্রসর শ্রেণী কমিশনের মতামত ও পরামর্শ নিতে বাধ্য।
হাইকোর্ট বলেছে, মুসলিমদের ৭৭টি বর্ণকে অনগ্রসর শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করে অপমান করা হয়েছে। এসব করা হয়েছে ভোটব্যাংক ও নির্বাচনী লাভের জন্য।
এর প্রভাব কী হবে?
হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের অর্থ হল ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জারি করা সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট এখন অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।
যাদের চাকরি আছে তাদের কী হবে?
হাইকোর্ট তার আদেশে স্পষ্ট করেছে যে এই সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদের চাকরি হারাবেন না। এই আইনের মাধ্যমে সরকার ৩৭ টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির সরকারি চাকরিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ৭৭ জাতিকে নিয়োগ দিয়েছে।
তাদের চাকরি অব্যাহত থাকবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে আদালত। যারা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আছেন তাদের ওপর এর কোনও প্রভাব পড়বে না বলেও আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে।
তবে কী প্রভাব পড়বে?
কলকাতা হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের পর, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জারি করা OBC সার্টিফিকেট বাতিল হয়ে যাবে। হাইকোর্ট আরও বলেছ, এখন থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের এই ৭৭ জাতিকে সংরক্ষণ দিয়ে চাকরি দেওয়া যাবে না।
এর সঙ্গে, আদালত আরও বলেছে ২০১২ আইনে সংরক্ষণের কোনও সুবিধা পাওয়া যাবে না।
মমতা সরকারের কাছে কী বিকল্প আছে?
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কড়া মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনি হাইকোর্ট এবং বিজেপির নির্দেশ মানবেন না। রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণ অব্যাহত থাকবে।
মমতা সরকারের কাছে এখন দুটি বিকল্প। প্রথমে হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দায়ের করতে পারে। আর দ্বিতীয়ত, এই সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে।