করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃতদেহের স্তূপের মধ্যে থেকে উদ্ধার জীবিত যুবক। হাওড়ার বাসিন্দা বছর ২৪-এর ওই যুবকের নাম বিশ্বজিৎ মালিক। আপাতত কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি তিনি। আহত যুবকের বাবা জানান, আপাতত তাঁর ছেলে ভাল আছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাঁর ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য স্থানীয়দের ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, শালিমার স্টেশন থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেপে চেন্নাই যাচ্ছিলেন বিশ্বজিৎ মালিক। মাঝপথে ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে গুরুতর জখম হন বিশ্বজিৎ। দুর্ঘটনাস্থলে রেল লাইনের ধারে খোলা মাঠে অন্যান্য মৃতদেহের মাঝেই পড়েছিলেন তিনি। মৃতদেহগুলি সরানোর সময় স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বজিতের বাম হাতের নড়াচড়া দেখে বুঝতে পারেন, তাঁর শরীরের প্রাণ রয়েছে। এরপরেই তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে বিশ্বজিৎ মালিকের বাবা হেলারাম মালিক জানাচ্ছেন, তিনি একটি ফোন কল পেয়েছিলেন। সেই ফোনেই ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানতে পারেন তিনি। তবে ঠিক কোন হাসপাতালে তাঁর ছেলেকে ভর্তি করা হয়েছে, তা স্পষ্ট করে বুঝতে পারেননি হেলারাম। এই প্রসঙ্গে হেলারাম মালিক ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন,"আমার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের পরেই আমি একটি প্রাইভেট কার নিয়ে সড়কপথে বালেশ্বরের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। একজনের মোবাইল ফোন থেকে সে আমায় ফোন করেছিল, কিন্তু আমাকে স্পষ্টভাবে বলতে পারেনি যে ঠিক কোথায় ভর্তি রয়েছে"।
এরপর দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় হাসপাতালে ছেলের খোঁজ শুরু করেন হেলারাম মালিক। তিনি বলেন, "আমি যখন সেখানে পৌঁছলাম তখন নম্বরটি বন্ধ ছিল, তাই সহজেই তাকে খুঁজে পাইনি।" একের পর এক হাসপাতালে খোঁজ নিতে থাকেন হেলারাম মালিক। কিন্তু তার ছেলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপরে হঠাৎ করেই ছেলের খোঁজ পান তিনি। হেলারাম মালিক ইন্ডিয়া টুডে-কে বলেন, "হঠাৎ করেই আমার ছেলে হাসপাতালের সঠিক অবস্থান জানিয়ে অন্য একটি নম্বর থেকে আমাকে আবার ফোন করে। তারপর আমি এক মুহূর্ত নষ্ট না করে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলে সেখানে ভর্তি রয়েছে।" হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিশ্বজিতের বাবাকে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভুবনেশ্বরে রেফার করার কথা বলেন। কিন্তু তিনি ছেলেকে ভুবনেশ্বরে না নিয়ে গিয়ে, কলকাতায় ফিরিয়ে আনার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন।
চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনার পর বিশ্বজিৎ মালিকের বাবা তাঁর ছেলেকে বন্ডে সই করে হাওড়ার বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। এরপর ছেলেকে এসএসকেএম-এ নিয়ে যান হেলারাম। হাসপাতাল সূত্রের দাবি, বিশ্বজিৎ মালিক এখন বিপদমুক্ত। তাঁকে এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ার ইউনিটের ৯ তলার গ্রিন জোনে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহতদের সঙ্গে দেখা করেন। পরিদর্শনের পর মুখ্যমন্ত্রী জানান, সব রোগীর অবস্থাই এখন স্থিতিশীল।
আরও পড়ুন - 'আমি চাই সত্যিটা বেরিয়ে আসুক,' ওড়িশায় গিয়ে ফের বললেন মমতা