
মঙ্গলবার থেকে শুক্র দুয়ারে রেশন। দোকান নয়, সরাসরি এলাকায় গিয়ে মানুষের হাতে রেশন পৌঁছে দেওয়া হবে। এতদিন ডিলারদের একাংশের তরফে এই প্রকল্পে বাস্তবায়নে সমস্যা হয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে। দাবি, ডিলাররা কেউ কেউ ই-পস মেশিন 'নর্মাল মোডে' রেখে দোকান থেকেই রেশন দিয়ে দিতেন। এর ফলে রেশন শেষ পর্যন্ত প্রাপকের দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছাতে হত না। ২০২১ সালের নভেম্বরে এই দুয়ারে রেশন প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই রেশন ডিলারদের একাংশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ ওঠে।
সেই অভিযোগ গিয়ে পৌঁছায় সরকারের কানেও। তারপরেই প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সমস্যার মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা।
দেখা যায়, ই-পস মেশিন নর্মাল মোডে রেখে দোকান থেকে রেশন বিলি করে দিচ্ছিলেন ডিলাররা। প্রযুক্তির এই ফাঁক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক হয়, এখন মঙ্গল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সপ্তাহের এই নির্দিষ্ট দিনগুলিতে ই-পস যন্ত্রের নর্মাল মোড ব্যবহার করে রেশন দেওয়া যাবে না। সরাসরি মেশিনের প্রযুক্তিতেই এর পরিবর্তন করা হয়। সপ্তাহে চারদিন এই নর্মাল মোড ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এই দিনগুলি 'দুয়ারে রেশন মোডে'ই বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে ডিলারদের।
এদিকে পুরো ব্য়বস্থাটাই একটি মূল সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে কোথায় দুয়ারে রেশনে কতজন গ্রাহকের কাছে জিনিস পৌঁছাচ্ছে, তা অফিসে বসেই আপডেট পেয়ে যাবে খাদ্য দফতর। ফলে রেশন নিয়ে কোনও দুর্নীতিরও অবকাশ থাকছে না।
এমনিতেও এখনই রেশন ডিসট্রিবিশন সিস্টেম সম্পূর্ণ অনলাইন করে দিয়েছে সরকার। ফলে কোনও ডিলার দুয়ার রেশন না করলে তা সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যাবে খাদ্য দফতর।
GPS দিয়ে ট্র্যাকিং
শুধু তাই নয়, জিপিএস-এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্র্যাক করা হবে রেশন ডিলারদের ই-পস মেশিন। ফলে দোকানের ৫০ মিটারের মধ্যে এলাকায় গিয়ে দুয়ারে রেশন মোড অ্যাকটিভেট করা যাবে না।
দুয়ারে রেশনের জন্য আলাদা কমিশন
দুয়ারে রেশন প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে রেশন ডিলারদের বাড়তি ঝক্কি হয় বটে। কিন্তু সরকারের দাবি, এর জন্য বাড়তি কমিশনও দেওয়া হয় রেশন ডিলারদের। প্রতি কুইন্টাল খাদ্যসামগ্রী পিছু ৯৫ টাকা ছাড়াও বাড়তি আরও ৭৫ টাকা করে পান তাঁরা। এছাড়াও দুয়ারে রেশন করলে মাসিক বাঁধা-ধরা ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় রেশন ডিলারদের।
কিন্তু তা সত্ত্বেও এই প্রকল্প বাস্তবায়নের রাজি ছিলেন না রেশন ডিলারদের এক বড় অংশ। দোকান থেকে বেরিয়ে এলাকায় গিয়ে গিয়ে রেশন দেওয়ায় রাজি ছিলেন না অনেকেই। আর সেই কারণেই বিভিন্ন এলাকায় নিয়ম সত্ত্বেও এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা যায়নি।
রেশন ডিলারদের সংগঠন যা বলছে
অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁরা শীঘ্রই আন্দোলনে নামবেন। তাঁদের দাবি, নতুন ব্যবস্থায় গ্রাহকরাই অসুবিধায় পড়বেন। প্রতিকূল আবহাওয়া ও দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সমস্যা হবে। অন্য রাজের কার্ডে যাঁরা এখান থেকে রেশন নেন, বিপাকে পড়বেন তাঁরাও।