TMC Leaders Arrested: দুর্নীতির 'সালতামামি', রাজ্যের কোন কোন নেতা, মন্ত্রী জেলে?

বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের ধরপাকড়ের ঘটনা অব্যাহত। ২০২২ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর, এই দেড় বছরে তৃণমূলের একাধিক 'হেভিওয়েট' নেতাকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলার মন্ত্রী এবং শাসকদলের বিধায়কও।

Advertisement
দুর্নীতির 'সালতামামি', রাজ্যের কোন কোন নেতা, মন্ত্রী জেলে?পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং অনুব্রত মণ্ডল (বাঁ দিক থেকে)।
হাইলাইটস
  • দেড় বছরে তৃণমূলের একাধিক 'হেভিওয়েট' নেতাকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
  • তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলার মন্ত্রী এবং শাসকদলের বিধায়কও।
  • কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ জানিয়ে সরব হয়েছে বাংলার শাসকদল।

দেড় বছরেরও বেশি সময় পার। বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের ধরপাকড়ের ঘটনা অব্যাহত। ২০২২ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর, এই দেড় বছরে তৃণমূলের একাধিক 'হেভিওয়েট' নেতাকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলার মন্ত্রী এবং শাসকদলের বিধায়কও। বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে দলের নেতাদের গ্রেফতারি নিয়ে প্রথম থেকেই সরব জোড়াফুল শিবির। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ জানিয়ে সরব হয়েছে বাংলার শাসকদল। যদিও প্রতিহিংসার তত্ত্ব খারিজ করেছে পদ্ম শিবির। 


গত দেড়ে বছরে তৃণমূলে কোন নেতা-মন্ত্রীরা গ্রেফতার হলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে? এক নজরে জেনে নিন...


পার্থ চট্টোপাধ্যায়: ২০২২ সালের ২২ জুলাই। সেদিন সকালে দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে পার্থের বাড়িতে তদন্তকারী সংস্থার অভিযান ঘিরে হুলস্থুল পড়ে গিয়েছিল বঙ্গ রাজনীতিতে। দিনভর তল্লাশি অভিযান শেষে সেদিন গভীর রাতে (তারিখ অনুযায়ী ২৩ জুলাই) গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের মহাসচিবকে। পরের দিন সকালে তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে বেরোন তদন্তকারীরা। এই সময়ই তাঁর 'ঘনিষ্ঠ' বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। পরে অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকেও উদ্ধার করা হয় কোটি কোটি টাকা এবং সোনাদানা। সবমিলিয়ে মোট নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। রাজ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে এক সঙ্গে এত টাকা উদ্ধারের ঘটনা শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। অর্পিতাকেও গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে পার্থের ঠিকানা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের 'পহেলা বাইশ' ওয়ার্ড। পার্থকে তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি, মন্ত্রীপদ থেকেও সরানো হয়েছে তাঁকে। 

পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।

অনুব্রত মণ্ডল: পার্থের গ্রেফতারের রেশ কাটতে না কাটতেই গ্রেফতার হন তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল। গত বছরের ১১ অগস্ট সকালে বীরভূমের বোলপুরে অনুব্রতের বাড়িতে হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তল্লাশি অভিযানের পর গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার করা হয় বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতিকে। বর্তমানে অনুব্রতের ঠিকানা দিল্লির তিহাড় জেল। এই মামলার তদন্তে নেমে ২০২৩ সালের ২৬ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয় অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকে। তিনিও সেই জেলে বন্দি। পার্থের মতো অবশ্য পদ হারাননি অনুব্রত। বরং তৃণমূলের 'কেষ্ট'র গ্রেফতারির পর তাঁর পাশে থাকারই বার্তা দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

Advertisement

অনুব্রত মণ্ডল।
অনুব্রত মণ্ডল।

মানিক ভট্টাচার্য: ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তৃণমূলের আরও বিধায়ককে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তিনি নদিয়ার পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। গত বছরের ১১ অক্টোবর নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় মানিককে। তার পর থেকে জেলবন্দি মানিক। 

মানিক ভট্টাচার্য।
মানিক ভট্টাচার্য।


জীবনকৃষ্ণ সাহা: পার্থ, মানিকের পর দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের তিন নম্বর বিধায়ককে গ্রেফতার করা হয়। তিনি মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয় জীবনকৃষ্ণকে। বর্তমানে তাঁর ঠিকানা জেল। 

কুন্তল ঘোষ।
কুন্তল ঘোষ।

কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়: শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের যুব নেতা (বর্তমানে বহিষ্কৃত) কুন্তল ঘোষকে। তাঁর গ্রেফতারের কয়েক দিনের মধ্যেই মার্চ মাসে গ্রেফতার করা হয় আরও এক যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে (তিনিও বহিষ্কৃত)। এই মামলায় কুন্তলের সূত্রেই উঠে আসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। ২০২৩ সালে ধর্মতলার শহিদ মিনারে একটি সভা থেকে অভিষেক বলেছিলেন যে, হেফাজতে থাকাকালীন কুণাল ঘোষ, মদন মিত্রদের তাঁর নাম (অভিষেক) বলতে 'চাপ' দেওয়া হয়েছিল। অভিষেকের এই মন্তব্যের পর পরই কুন্তল দাবি করেন যে, অভিষেকের নাম বলার জন্য তাঁকে 'চাপ' দিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই নিয়ে কলকাতার হেস্টিংস থানা এবং নিম্ন আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান কুন্তল। পরে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয় 'কালীঘাটের কাকু' ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে। অভিষেকের সংস্থা 'লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে' এক সময় কাজ করতেন সুজয়। সেই সূত্রে উঠে আসে অভিষেকের সংস্থার ভূমিকা। পরে এই মামলায় অভিষেক এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। অভিষেকের বাবা, মাকে তলব করা হলেও তাঁরা হাজিরা দেননি।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।


জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক: নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের মধ্যেই রেশন বণ্টন দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তৎপর হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তে নেমে ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিবুর বর্তমান বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের 'ঘনিষ্ঠ' বলে পরিচিত। বাকিবুরকে গ্রেফতারের পরই পুজোর ঠিক পর পরই গত ২৭ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে। 

এছাড়াও ২০২৩ সালে পুর নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তেও সক্রিয় হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। 

 

TAGS:
POST A COMMENT
Advertisement