শতাংশের হিসেবে বাড়ল ভোট, এবার কী তাহলে একলা চলোই ভরসা বামেদের?

উত্তর ২৪ পরগনার খড়দা, কোচবিহারের দিনহাটা, নদিয়ার শান্তিপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা। এই চার কেন্দ্রেই বাজিমাত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দিনহাটায় উদয়ন গুহ থেকে খড়দায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জীবনে সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছেন। রাজ্যে তৃণমূলের বিকল্প হয়ে উঠতে চাওয়া বিজেপি ফের একবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। শান্তিপুর ছাড়া বাকি তিন কেন্দ্রেই জামানত জব্দ হয়েছে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীদের। চারটি আসনে প্রার্থী দিয়ে হারতে হয়েছে বামেদের। তবে এর মধ্যেই যেন ক্ষীণ আলো দেখতে পাচ্ছেন আলিমুদ্দিনের নেতৃত্ব। আর সেই আলো রামের ভোট ফের বামের ঘরে ফেরার।

Advertisement
শতাংশের হিসেবে বাড়ল ভোট, এবার কী তাহলে একলা চলোই ভরসা বামেদের?রামের ভোট কি ফের বামে ফিরছে? ক্ষীণ হলেও আশার আল আলিমুদ্দিনে
হাইলাইটস
  • 'জোট নয়, একলা চল'
  • বামেদের কি শিক্ষা দিল উপনির্বাচন?
  • রামের ভোট কি ফের বামে ফিরছে? ক্ষীণ হলেও আশার আল আলিমুদ্দিনে

উত্তর ২৪ পরগনার খড়দা, কোচবিহারের দিনহাটা, নদিয়ার শান্তিপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা। এই চার কেন্দ্রেই বাজিমাত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দিনহাটায় উদয়ন গুহ থেকে খড়দায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জীবনে সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছেন। রাজ্যে তৃণমূলের বিকল্প হয়ে উঠতে চাওয়া বিজেপি ফের একবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। শান্তিপুর ছাড়া বাকি তিন কেন্দ্রেই জামানত জব্দ হয়েছে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীদের। চারটি আসনে প্রার্থী দিয়ে হারতে হয়েছে বামেদের। তবে এর মধ্যেই যেন ক্ষীণ আলো দেখতে পাচ্ছেন আলিমুদ্দিনের নেতৃত্ব। আর সেই আলো রামের ভোট ফের বামের ঘরে ফেরার।

উনিশের নির্বাচনে বাম ভোট রামে
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে গোটা দেশের পাশাপাশি বাংলাতেও ভালো ফল করেছিল বিজেপি। তবে এই জয়কে কাটাছেঁড়া করে দেখা গিয়েছিল তৃণমূল নয়, বিজেপির জয়ের পথে অনুঘটকের কাজ করেছিল বামেরা। লোকসভা ভোটে বাম ভোট ঝেঁটিয়ে নিয়ে গিয়েছিল  বিজেপি। মাত্র ৭ শতাংশ ভোট জুটেছিল বামেদের কপালে। একুশের বিধানসভা ভোটেও সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বরং লোকসভার তুলনায় আরও কমেছে প্রাপ্ত ভোট। তবে সেবার  বিজেপির ভোট কমলেও তা নিজেদের ঝুলিতে আনতে ব্যর্থ হয় বাম শিবির। ভোট যায় শাসকদলের পকেটে। 

 

 

এবার শতাংশের হারে ভোটপ্রাপ্তি ঊর্ধ্বমুখী
সদ্য চারটি বিধানসভার উপনির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়েছে। তাতে বিজেপির মত বামেদেরওও তিনটিতে জমানত জব্দ হয়েছে। তবে তারমধ্যেও আশার আলো দেখছে বাম শিবির।  কারণ শতাংশের বিচারে গেরুয়া শিবিরে গ্রাফ যখন নিম্নমুখী তখন ঊর্ধ্বমুখী বামেদের প্রাপ্ত ভোট শতাংশ। আর তাতেই  বামেদের কামব্যাকের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন আলিমুদ্দিনের শীর্ষ নেতৃত্ব।

উপনির্বাচনে একতরফা চার আসনেই বাম প্রার্থী
এবারে অনুষ্ঠিত রাজ্যের চার বিধানসভাতে বাম-কংগ্রেস জোটের আগেই সব ক’টি আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। গত বিধানসভা নির্বাচনে জোটের পক্ষে দিনহাটা, গোসাবা ও খড়দায় বামেরা প্রার্থী দিয়েছিল। আর শান্তিপুরে প্রার্থী হয়েছিলেন কংগ্রেসের ঋজু ঘোষাল। তবে এবার কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা না করেই  টিকিটে দেওয়া হয়  সৌমেন মাহাতোকে। ভবানীপুর উপনির্বাচনে একেবারেই কম ভোট পেয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী শ্রীজীব বসু।  প্রসঙ্গত, ভবানীপুর আসনের প্রার্থী ঘোষণা নিয়েই বাম-কংগ্রেস জোট ভাঙার সূচনা হয়। এপ্রিলের ভোটে ভবানীপুরে জোটের তরফে লড়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু  সেপ্টেম্বরে উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু, প্রার্থী দেয় সিপিএম। এর পরেই  কলকাতায় সিপিএম-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছিলেন, “ইলেকশন ছিল, মোর্চা ছিল। ইলেকশন শেষ, মোর্চাও শেষ।” অর্থাৎ ভোট শেষ, জোট শেষ।

Advertisement

 

 

একা লড়েই ভোট বাড়ল বামেদের
উপনির্বাচনে চারটি আসনে হারতে হয়েছে বামেদের। তবে এককভাবে লড়াই করে এবার ১০ শতাংশ ভোট নিজেদের ঝুলিতে আনতে সক্ষম হয়েছে বাম শিবির। যা বিধানসভা ভোটের নিরিখে ৩ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বিজেপি ৩৮ শতাংশ থেকে নেমে এখন ১৪ শতাংশে পৌঁছেছে।  এই অবস্থায়  তিন শতাংশ ভোট বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছে বামেরা। এককভাবে সিপিএম দু’টি আসনে লড়াই করে ১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলছেন, এরাজ্যে জোর করে হাওয়া ভরে বিজেপির  ফানুস ফুলিয়ে ছাড়া হয়েছিল। সেই ফানুসের হাওয়া বেরোতে শুরু করেছে। তৃণমূল বিরোধীরা বামেদের দিকে ফিরবেই।

আলোচনায় শান্তিপুরের উপনির্বাচনের ফলাফল
শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ৬ মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে জোটের প্রার্থী ছিলেন কংগ্রেসের ঋজু ঘোষাল। ওই নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ৪.৪৮ শতাংশ। জোট হওয়ায় সিপিএম কোনও প্রার্থী দেয়নি। কার্যত সিপিএম-কংগ্রেসের মিলিত জোটও ওই ভোটে জামানত বজায় রাখতে পারেনি। এবার কিন্তু একা লড়ে হেরে গিয়েও বাজিমাত করেছে বামপ্রার্থী। ৬ মাস পর উপনির্বাচনে পৃথকভাবে লড়াই করেছে কংগ্রেস ও সিপিএম। কংগ্রেস প্রার্থী রাজু পাল পেয়েছেন ১.৪১ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে সিপিএম প্রার্থী সৌমেন মাহাতোর ঝুলিতে গিয়েছে ১৯.৫৭ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে ২৩.২২ শতাংশ ভোট পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বিজেপিকে। বাংলাদেশের ইস্যু  সীমান্ত লাগোয়া জেলায় কোনও কাজে আসেনি। ওয়াকিবহল মহলের মতে,  শতাংশের হিসাবে সিপিএমকে অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে শান্তিপুর। খড়দাতেও একটা সময় বিজেপি প্রার্থীকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিলেন সিপিএম প্রার্থী। চার কেন্দ্রের মধ্যে খড়দায় চার শতাংশ ভোট কমেছে সিপিএমের। দিনহাটায় ফরোয়ার্ড ব্লক শতাংশের হারে প্রায় একই ভোট পেয়েছে। যদিও সংখ্যার হিসেবে যৎসামান্য বেড়েছে। তবে তা তিন শতাংশের নীচেই রয়েছে। গোসাবায় ২ শতাংশ ভোটও জোটেনি বামেদের আরেক শরিক আরএসপির। মোটের ওপর সিপিএমের সম্মান রেখেছে শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্র। মোদ্দা কথা,  তাহলে কি সিপিএমের এবার একলা চলো নীতিতেই এগোন উচিত?  সেই প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল এবারের উপনির্বাচন। শান্তিপুর মডেলই হয়তো আগামী দিনে  সিপিএমের হাতিয়ার হতে চলেছে।


 

POST A COMMENT
Advertisement