
এ যেন আয়লা, আমফান বিধ্বস্ত বাংলা-ওড়িশা উপকূলের সেই দৃশ্য। 'দিতওয়া' সাইক্লোনের প্রভাবে শ্রীলঙ্কার অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ, তা সাংবাদিকদের তোলা ছবিতেই স্পষ্ট।

শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূলের গভীর নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘দিতওয়া’তে পরিণত হয়। বাত্তিকালোয়ার দক্ষিণ-পূর্বে মাত্র ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল এই ঝড়।

কয়েকটি এলাকায় দমকা হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিমিতেও পৌঁছে যায়। ল্যান্ডফলের পরপর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

ঝড়ের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূল ও মধ্যাঞ্চল। বৃষ্টি ও প্রবল হাওয়ার দাপটে যোগাযোগও ব্যাহত।

সরকারি হিসেব অনুযায়ী, অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত। আরও ১০ জন আহত হয়েছেন।

এখনও ২১ জন নিখোঁজ বলে জানিয়েছে প্রশাসন। উদ্ধারকাজ চলছে জোর কদমে।

সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় জেলা বদুল্লায়। পাহাড়ি ঢাল ভেঙে পড়ে রাতারাতি ২১ জন বাসিন্দার বাড়ি চাপা পড়ে যায়।

পাশের নুয়ারা এলিয়া জেলাতেও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য কয়েকটি জেলার অবস্থাও উদ্বেগজনক।

ঝড় ও বন্যায় দ্বীপ জুড়ে পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি। বহু রাস্তা, সেতু ও যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে।

১,৮০০-র বেশি পরিবারকে আপাতত অস্থায়ী ত্রাণশিবিরে পাঠানো হয়েছে। খাদ্য ও পানীয় জলের জোগান জোরদার করা হচ্ছে।

এ পর্যন্ত ৪২৫-রও বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানানো হয়েছে। বহু পরিবার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছেড়ে প্রাণ বাঁচিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

আপৎকালীন পরিস্থিতিতে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। বড় নদীগুলিতে জলস্তর দ্রুত বাড়ছে বলে সতর্কবার্তা।

নিচু অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী মানুষদের অবিলম্বে উঁচু জায়গায় সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ। গ্রামাঞ্চলে মাইকিং করে সতর্কতা প্রচার চলছে।

দেশের বিভিন্ন অংশে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছনো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দমকল ও সেনাবাহিনীও উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমার দিসানায়েকে পরিস্থিতিকে ‘জরুরি’ বলে ঘোষণা করেছেন। দ্রুততম সময়ে প্রশাসনিক সহায়তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সরকার ও বিরোধী শিবির, দুই পক্ষের সাংসদদেরই নিজেদের এলাকায় ফিরে ত্রাণ ও চিকিৎসা পরিষেবা সমন্বয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য দ্রুত স্বাভাবিকতা ফেরানো।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশও দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। প্রশাসনকে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলির তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।

এদিকে পার্লামেন্টে চলছিল বাজেট আলোচনা। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনাটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

প্রশাসনের আশা, দ্রুত ত্রাণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যাবে। তবে আবহাওয়া দফতর বলছে, কয়েক দিন ঝড়ের ভয় থাকছেই।

নিচু অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী মানুষদের অবিলম্বে উঁচু জায়গায় সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ। গ্রামাঞ্চলে মাইকিং করে সতর্কতা প্রচার চলছে।

দেশের বিভিন্ন অংশে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছনো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দমকল ও সেনাবাহিনীও উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে।