আন্তর্জাতিক স্তরে পরমাণু হাতিয়ার এর উপর নজর রাখা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর বক্তব্য অনুযায়ী গোটা দুনিয়ার পরমাণু হাতিয়ারের মোট সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার এর কাছাকাছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতিয়ার রাশিয়ার কাছে আছে। তারপরে আমেরিকার নম্বর এবং এরপর যথাক্রমে ভারত, চিন, ফ্রান্স, ব্রিটেন, পাকিস্তান, ইজরায়েল এবং উত্তর কোরিয়ার কাছে আছে। এভাবে মোট ৯টি দেশের কাছে পরমাণু শক্তি রয়েছে। যদি এর মধ্যে একটাও দেশ আক্রমণাত্মক হয়ে নিজেদের শক্তি পরীক্ষা করতে যায়, তাহলে বাকি দেশগুলিও সামিল হয়ে যাবে এবং এরপর যা হবে তা জানার জন্য পৃথিবীতে কেউ বেঁচে থাকবে না।
ছবি- Pixbay
হিরোশিমাতে কি হয়েছিল?
পরমাণু বিস্ফোরণ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তাj একটা নমুনা আমরা হিরোশিমা-নাগাসাকিতে দেখে ফেলেছি> ১৯৪৫ সালে ৬ অগাস্ট জাপানের হিরোশিমাতে প্রথম বিস্ফোরণ হয়। সেখানকার তাপমাত্রা কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ১০ লক্ষ সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। আগ্নেয়গিরির মতো বা তার চেয়েও বেশি গরম সামলাতে না পেরে শহরের দুই তৃতীয়াংশ তখনই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মানুষ-পশু-গাছপালা-বাড়িঘর কিছুই রক্ষা পায়নি।
ছবি- Pixbay
৯ অগাস্ট নাগাসাকিতে দ্বিতীয় বোমাটি পড়ে
এর মধ্যেও একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়। আগুন এবং অসহ্য গরমে দগ্ধ হয়ে মুড়ি-মুরকির মতো লোক মরতে শুরু করে। যারা বেঁচেছিলেন ভয়ংকর তেজস্ক্রিয়তায় মরে যান। তারপরও যারা বেঁচে ছিলেন তারা হয় বিকলাঙ্গ না হয় মারাত্মক রোগ নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। বোমা যেখানে পড়েছিল, সেই কেন্দ্র থেকে এক কিলোমিটারের বেশি জায়গা পর্যন্ত এলাকায় কিছু বাকি ছিল না। বিভিন্ন লেখা এবং সংবাদমাধ্যমে এই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর বর্ণনা রয়েছে। যদিও লেখকরা তারা মনে করেন যে, তাঁদের লেখায় কিছু খামতি থেকে গেছে। তাঁরা পুরোটা বর্ণনা করতে পারেননি। আসলে এই পরিস্থিতি এতটা ভয়ঙ্কর ছিল যা লিখে বলে বোঝানো সম্ভব ছিল না।
প্রতীকী ছবি-(Pixabay)
কী হয় বিস্ফোরণের পরে?
নিউক্লিয়ার ব্লাস্টের পর দশ সেকেন্ড এর ও কম সময়ে, যে এলাকাতে বোমাটি পড়ে তার মাটি আগুনের মতো ফুটতে শুরু করে। এর মধ্যে এতটা গরম থাকে যার তুলনা পার্থিক কোনও জিনিসের সঙ্গে করা যায় না। সেখানে চারিদিকে সাদা তেজস্ক্রিয়তা তৈরি হয়ে যায়। মনে হয় সাদা আলোর ঝলকানি তৈরি হয়েছে।
প্রতীকী ছবি-(Pixabay)
বিস্ফোরণের তিনটি বড় প্রভাব তৈরি হয়। প্রথমত আগ্নেয়গিরির উত্তাপের চেয়েও বেশি গরম তৈরি হয়। যাতে মানুষ আর বাঁচতে পারে না। দ্বিতীয়ত এবং সবচেয়ে ভয়ংকর প্রভাব তৈরি হয় রেডিয়েশনের। যাকে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন বলে। বিস্ফোরণে গামা রশ্মি তৈরি হয়। যা বহুগুণ ভয়ংকর হয়। এটি যার ওপরে বা যে জিনিসের উপরে পড়ে, শরীরের সেই অংশ বদলে যায়। ডিএনএ পর্যন্ত চেঞ্জ হয়ে যায়। এরপরে শুরু হয় শক ওয়েভ এটি গ্রাউন্ড থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বহু সবকিছুই ধ্বংস করে দেয়।
প্রতীকী ছবি- (Unsplash)
কটি বোমা পৃথিবী ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট?
১৯৪৫ সালে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণে যে ভয়াবহতা দেখা গিয়েছে তার ওপর লাগাতার স্টাডি করে গবেষক ও বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করেছেন যে কতগুলি বোমা বিস্ফোরণ করলে ধ্বংস করে দেওয়া যেতে পারে পৃথিবী। আমেরিকার লস আল্মস ইন্টারন্যাশনাল ল্যাবে একটা স্টাডি করা হয় যেখানে দাবি করা হয় প্রায় ১০০টি পরমাণু বিস্ফোরণ করলে গোটা পৃথিবী শেষ হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে বহু লোক সঙ্গে সঙ্গে আগুনে ঝলসে মরে যাবেন। বাকি যারা বেঁচে থাকবেন তারা পরমাণু রেডিয়েশনে মারা যাবেন। অথবা ওজন লেয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে এরপর যারা বেঁচে থাকবেন, তাঁরা মাটি-জল সমস্ত বিষাক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু খেতে না পেয়ে মারা যাবেন বা খেয়েও মারা যেতে পারেন। এরপরেও যারা অল্প সংখ্যক লোক বেঁচে থাকবেন, তারা ক্যান্সার বা জেনেটিক ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবেন।
ছবি- ইন্ডিয়া টুডে আর্কাইভ
যদি পৃথিবীর সমস্ত নিউক্লিয়ার বোম একসঙ্গে ফেটে যায় তাহলে কি হবে ?
এর অনুমান এখনও পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকদের চিন্তাভাবনার বাইরে। তাঁরা গণনা করতে পারেননি। কারণ তারা ১০০ টি বোমা বিস্ফোরণেই পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার কথা বলেছেন। তাহলে হাজার চার এক বোমা যদি একসঙ্গে ফাটে তাহলে কিছুই বাঁচবে না এটা তো ঠিক। এমনকী বায়ুমণ্ডল থেকে শুরু করে কয়েকটি স্তর পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবী জুড়ে ছাই এবং ধুলোর এত মোটা পরত তৈরি হবে, যাতে সূর্যরশ্মি আর পৃথিবীতে পৌঁছতে পারবে না। চিরঅন্ধকার স্থায়ী হবে। যাকে নিউক্লিয়ার উইন্টার তৈরি হবে। আর তার ফলে সমস্ত প্রাণির মৃত্যু হয়ে যাবে।
ছবি- Pixbay
নিউক্লিয়ার উইন্টারে কী হয়?
কিছু সময় আগে পর্যন্ত গবেষকেরা একটা মডেল তৈরি করেছেন। এতে জানার চেষ্টা করা হয়েছে যে যদি শুধুমাত্র আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ হয় তাহলে পৃথিবীতে কি ধরনের ক্ষতি তৈরি হবে? অনুমান করেছেন যে আগামী ১০ বছর পর্যন্ত গোটা পৃথিবী নিউক্লিয়ার উইন্টারে চলে যাবে। ৯ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা পৃথিবীর কমে যাবে এবং এর পরে তাপমাত্রা কমতেই শুরু করবে।
ছবি- ইন্ডিয়া টুডে আর্কাইভ