সারা বিশ্বের হিমবাহে সঞ্চিত জল, হিমবাহ গলানোর হার এবং সেগুলির ঘনত্ব নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে সারা বিশ্বের হিমবাহগুলি খুবই দ্রুত গলছে। তাদের মধ্যে কম বরফের জল আছে বলে মনে করা হয়েছিল। অর্থাৎ পৃথিবীতে জলের সংকট হতে চলেছে। তবে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান ও মায়ানমারের মতো দেশের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর রয়েছে।
শুধুমাত্র হিমালয়ের বরফের চাদর এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে। অর্থাৎ এখানে বরফের জলের পরিমাণ ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে হিমালয়ের হিমবাহগুলিও দ্রুত গলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদীতে জলের ঘাটতি দেখা দেবে।
এই গবেষণাটি করেছেন ইনস্টিটিউট অফ এনভায়রনমেন্টাল জিওসায়েন্সেস (আইজিই) এবং ডার্টমাউথ কলেজের বিজ্ঞানীরা। এটি বিশ্বজুড়ে করা একটি সমীক্ষা। যার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে নেচার জিওসায়েন্সে। এতে গবেষকরা ২.৫০ লক্ষরও বেশি পর্বত হিমবাহের গতিবিধি এবং গভীরতা নিয়ে গবেষণা করেছেন। আগের সমীক্ষার তুলনায় এবার দেখা গিয়েছে সারা বিশ্বের হিমবাহগুলো আগের চেয়ে ২০ শতাংশ দ্রুত গলছে। সেগুলির মধ্যে কম জল অবশিষ্ট রয়েছে।
এই সমীক্ষাকে গুরুত্ব সহকারে ধরা হলে এবং সত্যিই ভবিষ্যতে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মতো নদী শুকিয়ে গেলে কোটি কোটি মানুষ জলের সমস্যায় পড়বেন। পান করা থেকে সেচ, সবেতেই দেখা দেবে সমস্যা। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের মতো নদ-নদীর ওপর নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি। বাঁধ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। যার জেরে মানুষের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহও ব্যাহত হবে। চাষাবাদও সম্ভব হবে না। এছাড়াও, এই গবেষণায় পাওয়া গেছে যে হিমবাহের দ্রুত গলার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বৃদ্ধি পাবে।
আইজিই-এর পোস্টডক্টোরাল স্কলার তথা এই গবেষণার প্রধান গবেষক রোমেন মিলন বলেন, পাহাড়ের হিমবাহে পড়ে থাকা জল অধ্যয়ন করলে সমাজে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আমরা এখন জানি বিশ্বের কোন স্থানে সবচেয়ে বেশি হিমবাহ রয়েছে। হিমবাহ কোথায় সবচেয়ে বেশি জল দিতে পারে। কত সময়ের মধ্যে তা গলবে। সেটি থেকে কতটা এবং কতদিন জল পাওয়া যাবে।
ডার্টমাউথ কলেজের আর্থ সায়েন্সের অধ্যাপক ম্যাথিউ মরলিঘেম বলেন, সারা বিশ্বের হিমবাহে আগের চেয়ে ২০ শতাংশ কম বরফের জল রয়েছে। অর্থাৎ এর প্রভাব পড়ছে কোটি কোটি মানুষের ওপর। তবে কোন হিমবাহ থেকে কতদিন জল পাওয়া যাবে তা জানা নেই। এমনকি জল কোথায় জমা হয়, কতজনের কাছে তা পৌঁছবে বা কতটা পৌঁছবে অথবা কতটা বাষ্পীভূত হবে তাও জানা নেই।
এই নতুন অ্যাটলাসে, বিশ্বের ৯৮ শতাংশ হিমবাহ আওতায় এসেছে। অনেক হিমবাহ এখন আগের তুলনায় হালকা হয়ে গিয়েছে। গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলে হিমবাহগুলি দুবার গণনা করা হয়েছিল। কোনও কোনও এলাকায় বরফের জলের তীব্র সংকট, কোনও কোনও এলাকায় বরফের জল বেশি। দক্ষিণ আমেরিকার ক্রান্তীয় আন্দিজ পর্বতমালার এক চতুর্থাংশ হিমবাহ গলে গিয়েছে। অর্থাৎ সেখানে প্রায় ২৩ শতাংশ বিশুদ্ধ জল ছিল, যা এখন আর নেই।
প্রফেসর ম্যাথিউ মরলিঘেম বলেন, সামগ্রিকভাবে হিমালয়ের হিমবাহ বেশি দিন থাকবে তা বলা ঠিক হবে না। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বউষ্ণায়নের প্রভাবও রয়েছে। বর্তমানে, সারা বিশ্বের হিমবাহ থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২৫-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষ বড় সমস্যায় পড়তে চলেছেন। কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে তাঁরা বাস্তুচ্যুত হবেন। জীবিকা নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হবে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীবনযাত্রা।
নতুন একটি গবেষণা এবং অ্যাটলাস অনুসারে, যদি গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকাকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলেও সারা বিশ্বের হিমবাহ থেকে বেরনো জল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৮ সেন্টিমিটার বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বরফ যদি গলে যায়, তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা খুব দ্রুত বাড়বে। সেই গবেষণা করতে বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
আরও পড়ুন - শরীরে এই লক্ষণগুলি দেখছেন? বিপদ! আগে মোবাইল দূরে সরান
বিজ্ঞানীরা বিশ্বজুড়ে হিমবাহের ৮ মিলিয়ন জোড়া ফটোগ্রাফের তুলনা করে করেছেন। যেগুলি ২০১৭-১৮ সালের মধ্যে নাসার ল্যান্ডস্যাট-৮ এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার সেন্টিনেল-১ এবং ২ স্যাটেলাইট দ্বারা নেওয়া হয়েছিল। এই গবেষণায় ১০ লক্ষর বেশি কম্পিউটার গণনা করা হয়। প্রফেসর ম্যাথিউ মরলিঘেম বলেন, মানুষ মনে করেন বরফ গলে শুধু গ্রীষ্মেই। কিন্তু আসলে তা নয়। ভিতর তা থেকে গলতে থাকে এবং অনবরত জল বের হতে থাকে। জল উঁচু এলাকা থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়ে নদীতে পরিণত হয়, যা পরে সাগরে মিলিত হয়।
আরও পড়ুন - 108MP-র Redmi Note 11S-এর বিক্রি শুরু, Amazon-এ বড় ডিসকাউন্ট
এই সমীক্ষায় সেই সব এলাকাগলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা আগে কখনও করা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ আমেরিকা, সাব-অ্যান্টার্কটিক দ্বীপপুঞ্জ এবং নিউজিল্যান্ড। নতুন অ্যাটলাসে দেওয়া তথ্য একদম সঠিক। এগুলো থেকে সারা বিশ্বের হিমবাহ সম্পর্কে জানা যায়। সেগুলির স্বাস্থ্য সম্পর্কেও সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই গণনা সঠিক, কিন্তু উপগ্রহ থেকে করা গবেষণায় সামান্য পার্থক্য হতে পারে।