State of Palestine| স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিতে অনুমোদন একের পর এক দেশের, হঠাত্‍ কী 'খেলা' শুরু?

ইতিমধ্যেই ৬৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এটা তো সরকারি সংখ্যা। বেসরকারি যে কত লক্ষ, তার কোনও হিসেব নেই। শিশু, মহিলা সহ বহু মানুষ খেতে না পেয়ে অনাহারেও মরছে। তারপরেও ইজরায়েলের আক্রমণ চলছে গাজায়। এই যুদ্ধের এবার অবসান বিশ্বের একাধিক দেশ। অতঃপর, স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের পক্ষে সওয়াল। কিন্তু স্বাধীন প্যালেস্তাইন হলে কি যুদ্ধ থেমে যাবে? এই প্রশ্নটাও থেকেই যাচ্ছে।
 

১৯৪৮ সালের ১৪ মে যখন প্যালেস্তাইনে স্বাধীন ইজরায়েল রাষ্ট্র ঘোষিত হয়েছিল, রাষ্ট্রসঙ্ঘে মাত্র ১১ মিনিটে সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে দেয় আমেরিকা। তারপর থেকে UN বা রাষ্ট্রসঙ্ঘের বেশির ভাগ সদস্য দেশই ইহুদি রাষ্ট্রকে পরিচিতি দেয়। ১৯৪৯ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদস্য হয়ে যায় স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েল। 

এরপর ১৯৮৮ সালে যখন প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন, তখন গ্লোবাল সাউথ স্বীকৃতি দিলেও পিছিয়ে যায় পশ্চিমী দেশগুলি। তাদের বক্তব্য ছিল, এই স্বীকৃতি দেওয়া মানে দ্বিজাতি তত্ত্বে অনুমোদন দেওয়া। যার নির্যাস, Free Palestine বা স্বাধীন প্যালেস্তাইন থমকে যায়।

কিন্তু ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের জেরে বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে গাজা প্যালেস্তাইনকে  বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতেই হল পশ্চিমী দুনিয়াকে। বস্তুত যে ভিত্তিতে একদা ভারত ও পাকিস্তান ভাগ হয়েছিল, যে দ্বিজাতি তত্ত্বে দেশভাগের ইতিহাস, সেই একই তত্ত্বে এবার শিলমোহর দিচ্ছে তথাকথিত উন্নত পশ্চিমী দুনিয়া।  

রাষ্ট্রসঙ্ঘের বার্ষিক সাধারণ সভায় (UN General Assembly) ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া প্যালেস্তাইন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দিল। এই পদক্ষেপ ইজরায়েলের সঙ্গে তাদের টানাপোড়েন সম্পর্ক এবং দখলমুক্ত কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় আস্থা হারানোর ইঙ্গিতই দিচ্ছে। 

প্যালেস্তাইনবাসীর কাছে পশ্চিমী দুনিয়ার এই সিদ্ধান্ত কূটনৈতিক ভাবে ভাল হলেও বড় দেরি হয়ে গেল। ইজরায়েলের আক্রমণে ইতিমধ্যেই গাজা মৃত্যুপুরী। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ককে তছনছ করে দিয়েছে। ইজরায়েলের সেনা ঘিরে রেখেছে। 
 

গত দু বছর ধরে লক্ষ লক্ষ প্যালেস্তাইনবাসী ঘর ছাড়া। উদ্বাস্তু হয়ে পালিয়েছেন। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু খোলাখুলি ঘোষণা করেছেন, কোনও স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র তিনি মেনে নেবেন না। এই ঘোষণায় আবার পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে আমেরিকাও। ওয়াশিংটন পাশে রয়েছে জেরুজালেমের। 
 

স্বাধীন প্যালেস্তাইনের এই তত্‍পরতার প্রভাব কি এখনই পড়বে? এই প্রশ্নের উত্তর হবে, না। ইজরায়েলের শাসক জোট গাজায় হত্যালীলা বন্ধ করতেও অক্ষম, দুই রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে আলোচনা তো দূরের কথা। 
 

তবুও প্যালেস্ত ইনকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই ঢেউ শুধু প্রতীকী পদক্ষেপই নয়, ১৯৪৮ সালের পর থেকে পশ্চিমে যে ইজরায়েলপন্থী ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তাতে এখন ফাটল ধরছে, তারও ইঙ্গিত স্পষ্ট। মোদ্দা বিষয় বলতে গেলে, ইজরায়েলের উপর বিরক্ত পশ্চিমী দুনিয়া।

ফ্রান্স প্রথম দিকে ইজরায়েলকে অস্ত্র জুগিয়েছিল এবং পরমাণু অস্ত্র বানাতেও সাহায্য করেছিল। তাই শুরু থেকেই এই সংঘাতের অংশ হওয়া দেশগুলির ঐতিহাসিক দায়িত্ব রয়েছে সমস্যার সমাধান খোঁজার। আর প্যালেস্তাইনের নিজস্ব স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ার অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। 

গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত প্রথম ধাপ হিসেবে। কিন্তু যদি ইজরায়েল তা না করে এবং পশ্চিম প্রান্তে নতুন নতুন বসতি গড়ে তোলে, তবে ইউরোপের উচিত তেল আবিবের উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
 

পশ্চিম তীর দখলকে ‘রেড লাইন’ হিসেবে বিবেচনা করে ইজরায়েলকে সতর্ক করতে হবে। নেতানিয়াহু এবং তাঁর চরমপন্থী মন্ত্রীরা যদিও আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে, তাঁদের বোঝানো যাবে না। তবে তাঁরা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন না। 

ভবিষ্যতের কোনও ইজরায়েলি নেতা অস্ত্র ত্যাগ করতে পারেন। এই অন্তহীন যুদ্ধ আর গণহত্যার তকমা ইজরায়েলের স্বার্থেরও ক্ষতি করছে, যদিও এতে নেতানিয়াহু ক্ষমতায় টিকে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।

স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র আগামী দিনে  সমগ্র পশ্চিম এশিয়ার শান্তির সর্বোত্তম পথ হতে পারে।