মারণ ভাইরাস করোনার দাপটে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। কিন্তু তার উৎপত্তি এখনও অজানা। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে আবার তদন্তের দাবি উঠছে। এর মধ্যেই চিনের গবেষকরা নতুন ধরণের করোনার ভাইরাস সনাক্ত করার দাবি করেছেন।
বাদুড়ের দেহে একাধিক নয়া করোনাভাইরাসের সন্ধান পেলেন চিনা গবেষকরা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নয়া যে ভাইরাসগুলির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে জিনগত দিক থেকে কোভিড-১৯-এর সঙ্গে একটি ভাইরাসের বেশ মিল রয়েছে।
চিনা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নতুন গোত্রের এই ভাইরাসই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে কত ধরনের করোনাভাইরাসের বাহক বাদুড়। তাদের মধ্যে বেশ কিছু মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায়। বাদুরের শরীর থেকে যে ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে তা অনেকটাই প্রথমে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের সঙ্গে মিল পাওয়া গিয়েছে বলে জানাচ্ছেণ বিজ্ঞানীরা।
জার্নালে প্রকাশিত সেই রিপোর্টে চিনের শ্যানডং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, ‘সবমিলিয়ে আমরা বিভিন্ন বাদুড় প্রজাতির দেহে ২৪ টি নোভেল করোনাভাইরাসের জিনকে একত্রিত করেছি। তার মধ্যে আছে করোনাভাইরাসের সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2) প্রজাতির জিনও।’
গবেষণার জন্য ২০১৯ সালের মে থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ছোটো ও বনে থাকা বাদুড়দের থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তারপর বাদুড়ের মল, মূত্র পরীক্ষা করা হয়েছিল। বাদুড়ের মুখ থেকে লালারসও সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকরা।
চিনা গবেষকদের দাবি, গবেষণা থেকে বাদুড়ের শরীরে একটি এমন ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে, জিনগত দিক থেকে যেটির সঙ্গে সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2) প্রজাতির মিল আছে। যে প্রজাতির কারণে মহামারি শুরু হয়। কোষের সঙ্গে যুক্ত করলে সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2) প্রজাতির সঙ্গে নয়া প্রাপ্ত একটি ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন এবং গঠনের দিক থেকে সামান্য কিছু পার্থক্য আছে।
তারা আরও জানান যে, সন্ধান পাওয়া একটি ভাইরাস জেনেটিক গড়নের দিক থেকে বর্তমান মহামারির জন্য দায়ী সার্স কোভ-২ ভাইরাসের সঙ্গে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ। হর্স-শু বাদুড়ের রিনোলোফাস পসিলাস নামক একটি প্রজাতি থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় এর সন্ধান পাওয়া যায়, বিজ্ঞানীরা ভাইরাসের নমুনাটির সাঙ্কেতিক নাম দিয়েছেন আরপিওয়াইএন০০৬।
স্পাইক প্রোটিনের কিছু পার্থক্য ছাড়া আসলে এর সঙ্গে মহামারি সৃষ্টিকারী সার্স কোভ-২ ভাইরাসের তেমন অমিল নেই। নয়া ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিন দেখতে অনেকটা গিঁটের মতো।
এসব অনুসন্ধানের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, "এর আগে থাইল্যান্ডেও সার্স কোভ-২ এর সঙ্গে মিল থাকা ভাইরাসের সন্ধান মিলেছিল। তার সঙ্গে নতুন করে এই গবেষণার ফল যোগ হয়ে ইঙ্গিত দেয় যে, প্রকৃতিতে বাদুড়দের মধ্যে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিবর্তন ও বংশবিস্তারের চক্র অব্যাহত রয়েছে। তবে কিছু অঞ্চলের বাদুড়দের মধ্যে তা হওয়ার সম্ভাব্যতা অনেক বেশি।"
ধারণা করা হয় বাদুড় থেকে অন্য কোনো বন্যপ্রাণী প্রথমে এটিতে আক্রান্ত হয়, তারপর সেটি মানুষের মধ্যে ছড়ায়। অর্থাৎ, মানবদেহে ভাইরাস ছড়াতে একটি মধ্যবর্তী প্রাণীদেহ অভিযোজন কেন্দ্রের ভূমিকা রাখে। ইতোপূর্বে, ২০০২-২০০৪ সালে দেখা দেওয়া সার্স কোভ-১ ভাইরাস সিভেট ক্যাট নামক একটি প্রাণী থেকে ছড়িয়েছিল বলে শনাক্ত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।