ইজরায়েলে শেষ হল বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছরের শাসনের। রবিবার নয়া জোট সরকারকে অনুমোদন দিল ইজরায়েলের সংসদ।
বেশ কিছু দিন ধরে ইজরায়েলের রাজনৈতিক মহলে ডামাডোল চলছিল। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছিল। রবিবার ভোটাভুটিতে হেরে যান নেতানিয়াহু। তাঁর পক্ষে ভোট পড়ে ৫৯টি। বিপক্ষে ভোট পড়ে মাত্র একটি বেশি। তাই এবার বিরোধী আসনেই বসতে হচ্ছে নেতানিয়াহুকে।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বন্ধুত্ব সুবিদিত। বস্তুত মোদী জমানাতেই ভারত-ইজরায়েল সম্পর্কে নতুন মাইলস্টোন তৈরি হয়েছিল।
২০১৮ সালে ভারতে এসে নরেন্দ্র মোদীকে ‘বিপ্লবী নেতা’র শিরোপা দিয়েছিলেন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ৩ হাজার বছরের মধ্যে প্রথম কোনও ভারতীয় নেতার ইজরায়েলে যাওয়ার জন্য এই শিরোপা দেন নেতানিয়াহু। সেবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে যোগাভ্যাসের ক্লাস করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
এদিকে নেতানিয়াহু গদিচ্যুত হতেই অনেক বাম ও কংগ্রেস নেতা মোদীকে উদ্দেশে করে বিদ্রুপ করা শুরু করেছেন। ট্যুইটার , ফেসবুক ভরে গিয়েছে, "তিন বন্ধু'র দু'জন গদিচ্যুত! এবার?" দু'জন বলতে প্রাক্তন মার্কনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর কথা বোঝাতে চেয়েছেন তাঁরা।
বস্তুত মোদী-ট্রাম্প বন্ধুত্বও কম আলোচিত ছিল না। মোদীর আমন্ত্রণেই ভারতে এসেছিলেন ট্রাম্প। বারবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। মোদীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ব্যক্তিগত রসায়ন বহুবার মিডিয়ার সামনে তুলেও ধরেছেন ট্রাম্প। তবে গতবছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের কাছে হেরে গিদচ্যুত হতে হয়েছে ট্রাম্পকে।
বরাবরই আমেরিকা শত্রু হিসাবে পরিচিত রাশিয়া। তবে দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক গভীর। মোদীর বন্ধু হিসাবে পরিচিত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনও। একাধিকবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে বর্তমানে পারকিনসন'স রোগে ভুগছেন পুতিন। শোনা যাচ্ছে আগামী দিনে ক্ষমতা ছেড়ে বিশ্রামে যেতে পারেন পুতিন।
ভারতের সঙ্গে জাপানের সম্পর্কও অত্যন্ত ভাল। আর সেই কূটনীতি ধরে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেও ছিলেন মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ভারতের তরফে পদ্মবিভূষণেও ভূষিত করা হয়েছে তাঁকে। তবে গত বছর শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন আবে।
প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আচমকা লাহোরে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফে বাড়ি হাজির হয়েছিলেন মোদী। সেই সময় দু’দেশের সম্পর্কের যা পরিস্থিতি ছিল, সেই পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্য রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে মোদীর যেচে বন্ধু স্থাপনের প্রচেষ্টার সমালোচনা করেছিল বিরোধীরা। বর্তামনে একাধিক দুর্নীতি মামলায় ফেঁসে রয়েছেন নওয়াজ।
শোনা যায় বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরসি জনসনের সঙ্গেও মোদীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। বারত জি-৭ অন্তর্ভুক্ত না হলেও মোদীকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বরিস। সম্প্রতি নিজের দীর্ঘদিনের বান্ধবীকে বিয়ে করেছেন জনসন। রাজ্যপাটও চালাচ্ছেন ভাল মতই।
ভারতের অন্যতম সমর্থক দেশ ফ্রান্স। বারবার ভারতের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে ফ্রান্সকে। শোনা যায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ মোদীর অন্যতম গুনমুগ্ধ।
বিশ্বমঞ্চে মোদীর প্রশংসা করে থাকেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও। দু'জনের শিঙাড়ার কিস্সাও বেশ জনপ্রিয়।অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বাড়িতে বানিয়ে ছিলেন শিঙাড়া। ওই শিঙাড়ার নাম ‘স্কমোসাস’। তার ছবিও ভাগ করে নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে।
আরেকজনের কথা না বললেই নয়। তিনি বারাক ওবামা। ট্রাম্পের পূর্বসূতির সঙ্গেও মোদীর সম্পর্ক ছিল গভীর। গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে ২০১৫-র ২৬ জানুয়ারি দিল্লি এসেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নরেন্দ্র মোদীর ঠিক পাশে বসে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ দেখতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মোদী-ওবামার সম্পর্ক কুটনীতির গণ্ডি পেরিয়েও বাড়তি কিছু৷ দু’জনের মধ্যে একটা ‘কেমিস্ট্রি’ কাজ করে৷ বলেছিল মার্কিন দৈনিক দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস৷ তবে আর প্রেসিডেন্ট না থাকলেও ওবামার জনপ্রিয়তা কিন্তু গোটা বিশ্বে এখনও একটুও কমেনি।