রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সামরিক পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস করেছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও পালটা দাবি করেছে যে, তারা লুহানস্ক অঞ্চলে পাঁচটি রাশিয়ান বিমান এবং একটি রাশিয়ান হেলিকপ্টার গুলি করে নামিয়েছে।
এসবের মাঝেই এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবাহিনী, সামরিক শক্তির সামনে কতদিন টিকতে পারবে ইউক্রেন। উভয় দেশের বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগ মিলিয়ে কে বেশি শক্তিশালী? চলুন দুই দেশের সামরিক শক্তির সম্পর্কে সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক...
রাশিয়া ও ইউক্রেনের শক্তির কথা বললে, ইউক্রেন তুলনায় বেশ কিছুটা দুর্বল হলেও দীর্ঘ সময় লড়াই করতে পারবে। ওয়েবসাইট গ্লোবফায়ারের (Globalfirepower.com) প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়া সামরিক শক্তিতে শক্তিশালী দেশগুলির দিক থেকে পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যেখানে ইউক্রেন ২২তম স্থানে রয়েছে।
রাশিয়ার সক্রিয় সৈন্যের সংখ্যার প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার। অন্যদিকে, ইউক্রেনের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা খুবই কম। তবে রিজার্ভ সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। উভয়েরই রিজার্ভ মিলিটারি ফোর্সে সেনার সংখ্যা ২.৫০ লাখ।
অন্যদিকে আধাসামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে রাশিয়া অনেক এগিয়ে। রাশিয়ার ২.৫০ লক্ষ আধাসামরিক বাহিনী রয়েছে যেখানে ইউক্রেনে মাত্র ৫০,০০০ আধাসামরিক বাহিনী রয়েছে।
বায়ুসেনাবাহিনীর কথা বললে, রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিধর, যেখানে ইউক্রেনের ব়্যাঙ্কিং ৩১-এ। রাশিয়ার মোট ৪১৭৩টি বিমান রয়েছে এবং ইউক্রেনের ৩১৮টি বিমান রয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার মোট ৭৭২টি ফাইটার জেট রয়েছে যেখানে ইউক্রেনের আছে মাত্র ৬৯টি যুদ্ধবিমান রয়েছে।
ট্যাঙ্কের শক্তির নিরিখে রাশিয়া বিশ্বের এক নম্বর দেশ। রাশিয়ার মোট ১২,৪২০টি ট্যাঙ্ক রয়েছে যেখানে ইউক্রেনের ২৫৯৬টি ট্যাঙ্ক রয়েছে এবং এটি সারা বিশ্বে ১৩তম স্থানে রয়েছে। সৌন্যবাহী ট্যাঙ্কের কথা বললে, রাশিয়া সমগ্র বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং ইউক্রেন রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে।
যদিও এই সংঘর্ষে নৌবাহিনীর সরাসরি যোগাযোগের সম্ভাবনা নেই, তবুও রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের মোট ৩৮টি নৌ জাহাজের তুলনায় রাশিয়ার একটি বিমানবাহী রণতরী সহ ৬০০টিরও বেশি নৌ জাহাজ রয়েছে। রাশিয়ার সমুদ্রে আক্রমণ করার জন্য ৭০টি সাবমেরিন রয়েছে, যেখানে ইউক্রেনের কাছে একটিও নেই।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ টুইট করছিলেন বিভিন্ন পশ্চিমা শক্তি থেকে আসা সামরিক সরবরাহ, যার মধ্যে রয়েছে জ্যাভলিন মিসাইল, ম্যান-পোর্টেবল সারফেস টু এয়ার স্টিংগার মিসাইল, প্রচুর গোলাবারুদ, রাইফেল, রয়েছে। এছাড়াও অপটিক্যাল নাইট ভিশন মেশিনগান, নজরদারি সিস্টেম এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ইউক্রেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত ছিল। ডিসেম্বর থেকে ইউক্রেনে শত শত জ্যাভলিন ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে, যা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে রাশিয়ান ট্যাঙ্ককে লক্ষ্যবস্তু করতে সহায়তা করবে।
এটি একটি ম্যান-পোর্টেবল ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্র, যার অর্থ একজন সৈনিক এটিকে তার কাঁধ থেকে গুলি করতে পারে এবং এর স্বয়ংক্রিয় ইনফ্রারেড গাইডেন্স সিস্টেম উপরে থেকে ট্যাঙ্কগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করবে, যে কোনও ট্যাঙ্কের থেকে সর্বোচ্চ। দুর্বল অংশ।
যেভাবে ইউক্রেন ন্যাটোর কাছাকাছি এবং অনেক ন্যাটো দেশ ইউক্রেন সীমান্তে তাদের সেনা পাঠাচ্ছে। ন্যাটো দেশগুলো ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সেনা, অস্ত্র ও সামরিক যান সরবরাহ শুরু করেছে। তা থেকে মনে হচ্ছে ন্যাটো ইউক্রেনকে সমর্থন করছে। এমতাবস্থায় ন্যাটো তাকে সমর্থন করলে রাশিয়ার পাল্লা ভারী হতে পারে।
ন্যাটো সংস্থায় ৩০টি দেশ রয়েছে। ন্যাটোর আন্তর্জাতিক সামরিক জোটের মূল নীতি হল এর যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সংস্থার নিয়মানুযায়ী কোনো দেশ সদস্য দেশগুলোর ওপর হামলা চালালে তা পুরো সংস্থার ওপর হামলা বলে গণ্য হবে। এর ভিত্তিতে সব দেশ তার পাশে থাকবে। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য না হলেও ন্যাটো চাইলে ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে পারে।
ব্রিটেন ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক-বিরোধী অস্ত্র ও সাঁজোয়া যানও দিচ্ছে। পোল্যান্ড বলেছে যে তারা ইউক্রেনকে গ্যাস এবং আর্টিলারি গোলাবারুদ, মর্টার, পোর্টেবল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, নজরদারি ড্রোন এবং অস্ত্র, সেইসঙ্গে মানবিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা সরবরাহ করবে। ন্যাটো সদস্য দেশ রোমানিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সীমান্ত রয়েছে। রোমানিয়া ২০০৪ সাল থেকে সদস্য। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি এবং ফ্রান্সের মতো দেশের সেনাবাহিনী এখানে উপস্থিত রয়েছে।