ক্ষমতা এলে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি বদলে দেবেন, এমনটাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জো বাইডেন। গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পরেই একগুচ্ছ পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি। যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কয়েকটি নতুন প্রস্তাবও এনেছেন নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। বাতিল করেছিলেন ট্রাম্পের একাধিক সিদ্ধান্তও।
প্রায় ১৫টি অর্ডারে সেদিন সই করেছিলেন বাইডেন। যার মধ্যে অভিবাসন নীতিও ছিল। যারা ছোটবেলায় অবৈধভাবে আমেরিকায় গিয়েছেন তাঁদের সুরক্ষা দেবে বাইডেন প্রশাসন। মুসলিম এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যাওয়া আসা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন ট্রাম্প। তা প্রত্যাহার করে ছিলেন জো বাইডেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর অভিবাসন নীতি পরিবর্তন হবে বলে জানিয়েছিলেন জো বাইডেন। ফের চালু হবে এইচ-ওয়ান-বি ভিসা। বাইডেনের ঘোষণায় উপকৃত হবেন প্রায় ৫ লক্ষ ভারতীয়। এইচ-ওয়ান-বি ভিসা পেতে আর বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হবে না।
এরমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন যার ফলে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিধিনিষেধ সম্বলিত অভিবাসন নীতিগুলো বাতিল করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকান সীমান্তে পরিবারের সেই সব সদস্যদের পুনর্মিলন যাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল।
এই আদেশ স্বাক্ষর করার সময় বাইডেন বলেন , “ আমি কোন নতুন আইন তৈরি করছি না , আমি কেবল বাজে নীতিগুলো বাদ দিচ্ছি”। প্রেসিডেন্ট পদে বসার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তিনি ট্রাম্পের আমলে ষোলো শ’ কোটি ডলার ব্যয়ে সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ বন্ধ করেন এবং সূদুর প্রবাসী অভিবাসন প্রস্তাব কংগ্রেসের কাছে পাঠান যেখানে আইন প্রণেতারা দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে অচলাবস্থায় রয়েছেন । উদারপন্থিরা চাইছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের বিষয়টি সহজতর করা হোক। তবে রক্ষনশীলরা বেআইনি অভিবাসন থামানোর চেষ্টা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে মেক্সিকোর সঙ্গে ৩১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে প্রাচিন নির্মান করে ট্রাম্প মেক্সিকো, হন্ডুরাস, এল সালভাদর এবং গুয়াতেমালা থেকে আসা হাজার হাজার অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দিয়ে আটকে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। সেদিকেই বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছেন বাইডেন।
বাইডেনের স্বাক্ষরিত আদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ৬০০ অভিবাসী শিশুদের তাদের বাবা -মা র সঙ্গে মিলিত করানোর জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন। কর্মকর্তারা বলছেন এই প্রচেষ্টায় ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে ।
যে ১১ মিলিয়ন মানুষ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি ভাবে রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কর্মী হিসেবে বা গ্রাহক হিসেবে অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ প্রশস্ত করার জন্য বাইডেন আইনি অভিবাসনের বিষয়টিকে বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
নির্বাচনী প্রচারের সময়ই জো বাইডেন জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ফের চালু করবেন এইচ১বি ভিসা। এবার বদল হতে চলেছে এইচ১বি ভিসার নিয়মাবলী। আগের লটারি পদ্ধতিতে বদল এনে এবার থেকে দক্ষতা ও পারিশ্রমিকের নিরিখে ভিসা ইস্যু করা হবে বলে জানানো হয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষের তরফে। পাশাপাশি দেশ প্রতি অভিবাসন নীতিতেও বদল আনা হবে। আগে প্রতিটি দেশ থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে ভিসা দেওয়া হত বলে পিছিয়ে পড়ত ভারতীয় অভিবাসন আবেদনকারীরা।
প্রতি বছর আমেরিকা ৮৫ হাজার এইচি১বি ভিসা ইস্যু করে৷ যার মধ্যে তিন চতুর্থাংশই পান ভারতীয়রা, যারা প্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে কাজ করেন। ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে এইচ১বি ভিসা ইস্যুর যে ট্রেন্ড দেখা গিয়েছে, তা অনুযায়ী ৫ লক্ষ ভিসা ভারতীয়দেরই দেওয়া হয়েছে৷ যার মধ্যে এদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। আমেরিকার ৩ মিলিয়ন প্রবাসী ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ভিসাধারীদের সংখ্যা অন্তত ৭ লক্ষ ৫০ হাজার। আর এই প্রবাসী ভারতীয়রাই বর্তমানে আমেরিকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠছে।
পণ্য ও পরিষেবায় আমেরিকা ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যসঙ্গী। দক্ষ শ্রমশক্তি হিসাবে আমেরিকার ভারতীয় সংস্থাগুলিতে ভারত থেকে আসা এইচ১বি ভিসাধারীদের সংখ্যা হঠাৎ করে কমিয়ে দিলে অবশ্যই তার প্রভাব পড়বে৷ প্রভাব দেখা যাবে আমেরিকার অর্থনীতির প্রযুক্তি, অর্থ ও উৎপাদনক্ষেত্রে। করোনা প্যানডেমিকের প্রভাবে আমেরিকার বিপর্যস্ত অর্থনীতির হাল ফেরাতে নেওয়া যে কোনও জাতীয় উদ্যোগই এই ৩টি ক্ষেত্র অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কাজেই আমেরিকায় অর্থনীতিকে সচল করে তুলতে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি বদল অত্যন্ত জরুরি ছিল।