তালিবানি(Taliban) শাসনে নারী স্বাধীনতা(Woman Education) যে নরক যন্ত্রণায় পরিণত হবে তা আগে থেকেই আশঙ্কা করেছিলেন সেদেশের মহিলারা। এবার সেটাকে সত্যি করেই মহিলাদের কাজে না যাওয়ার জন্য তালিবান ফতোয়া(Taliban Fatwa) জারি হল। তালিবানদের তরফে জানানো হয়েছে, মহিলাদের এখন থেকে আর বাইরে চাকরি করতে বা অন্য কোনও কাজে যেতে হবে না। তাদের জারি করা এই ফতোয়ার ফলে অধিকাংশ বাড়ির মহিলারাই এখন আর প্রাণভয়ে বাইরে যেতে চাইছেন না। যদিও, ব্যতিক্রম আছেই! তালিবানি ফতোয়ার বিরুদ্ধে এবার গর্জে উঠলেন সেদেশের মহিলা শিক্ষিকারা। নারি স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করে তাঁরা বলেন, নারী শিক্ষার প্রসারে আমরা কাজ করেই যাব। তালিবানরা যদি আমাদের মেরেও ফেলে তাও আমরা আমাদের কাজে বিচলিত হব না।
১৫ অগাস্ট কাবুল দখল করে তালিবানরা। প্রতিষ্ঠিত হয় তালিবান ২.০ সরকার। সেদিনই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান প্রাক্তন আফগান রাষ্ট্রপরি আশরফ গনি। দেশজুড়ে তালিবান বিরোধী আজওয়াজ ওঠার পাশাপাশি, বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। হাজার মানুষ তালিবানি অত্যাচারের কথা মনে করে দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। তারই মাঝে, তালিবানরা ঘোষণা করে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে তারা। নারি শিক্ষা থেকে চাকরিতে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছাড় দেওয়া হবে। তাদের এই ঘোষণা প্রথমিক ভাবে কিছুটা অবাক করেছিল সেদেশের মহিলাদের। শুধু তাই নয়, মহিলাদের ওপর যারা এক সময় নরক যন্ত্রণা নিয়ে এসেছিল তাদের মুখেই এই কথা শুনে বিশ্বজুড়ে তামাম কূটনৈতিকরা অবাকই হয়েছিলেন।
অবশেষে মঙ্গলবার সেই ভুল ভাঙল সকলেন। পুরনো ফর্মে ফিরল তালিবানি ফতোয়া। নারী স্বাধীনতা তো দূর, বাড়ি থেকে বেরোতেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল আফগান মহিলাদের ওপর। যদিও, তাদের এই ফতোয়াকে কোনও ভাবেই মানা হবে না বলে একটি ইংরাজি দৈনিকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় জানিয়েছেন সেদেশে থাকা একদল নারী শিক্ষার প্রসারী। তাঁদের কথায়, এই ধরনের ফতোয়া আগেও দিয়েছে তালিবানিরা। তাই এবার আর ভয় পেলে চলবে না। এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়়াতে হবেই। দেশের মহিলাদের শুধু শিক্ষিত করে তোলাই নয়, তাঁদের প্রকৃত অর্থে স্বাধীন করাই এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। তার জন্য যদি আমাদের প্রাণও দিতে হয়ে তাতেও ভয় নেই।
প্রসঙ্গত, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আফগানিস্তানের ১৩টি পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে ১০০টির বেশি স্কুল স্থাপন করেছে। স্কুলগুলিতে নারী শিক্ষা ও মহিলাদের অধিকার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে আফগান মহিলারা নিজেদের অধিকারের দাবাতে লড়াই করছেন সেদেশে।
তালিবানরা এর আগে দেশজুড়ে শুধুমাত্র আতঙ্কের পরিবেশই সৃষ্টি করেনি, দেশের মহিলাদের শিক্ষা ও তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এসেছে। তাই ৯/১১ মার্কিন হামলার পর, তালিবানের হাত থেকে আফগানিস্তানকে মুক্ত করে আমেরিকা। গঠিত হয় একটি প্রোগ্রেসিভ সরকার। স্বাধীনতার স্বাদ পান সেখানকার মহিলারা। কিন্তু আবারও তালিবান ২.০ শাসনে সেই পরাধীনতার পথেই আফগান নারী স্বাধীনতার।