সিঙ্গাপুরে আয়োজিত শাংগ্রি-লা ডায়ালগে পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দিলেন ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) জেনারেল অনিল চৌহান। তিনি বলেন, ‘শুধু ভারতই বদলায়নি, স্ট্র্যাটেজিও বদলে গিয়েছে।’
শাংগ্রি-লা ডায়ালগ এবার ২২ তম বছরে পড়েছে। এটি এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আলোচনা-মঞ্চ। সেই আলোচনায় ‘ভবিষ্যতের যুদ্ধ এবং যুদ্ধকৌশল’ নিয়ে বক্তব্য রাখেন জেনারেল চৌহান। একটি বিশেষ অধিবেশনেও অংশ নেন তিনি। সেখানে ভবিষ্যতে প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নেন।
‘ভারত আজ এগিয়ে, এটা সঠিক স্ট্র্যাটেজির কারণে হয়েছে’
এক সংবাদ সংস্থার মতে, জেনারেল চৌহান স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভারত এখন আর খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে চলে না। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার সময় পাকিস্তান সামাজিক উন্নয়ন, জিডিপি, মাথাপিছু আয়ে ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু আজ ভারত অর্থনীতি, মানবোন্নয়ন, সামাজিক ঐক্য— সব দিক থেকেই এগিয়ে। এটা মোটেও কাকতালীয় নয়। বরং, সুপরিকল্পিত স্ট্র্যাটেজি নিয়ে এগনোর ফলে হয়েছে।
‘এক হাতে তালি বাজে না’
CDS জেনারেল অনিল চৌহান এদিন ২০১৪ সালের কূটনৈতিক পরিস্থিতির কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আলাদা। জেনারেল চৌহানের মতে, তালি বাজাতে দুই হাত লাগে। বন্ধুত্বের উত্তরে যদি শুধুই শত্রু মনোভাব মেলে, তাহলে দূরত্ব বজায় রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিভিন্ন দেশের সামরিক প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক
সিঙ্গাপুরে এই সম্মেলনে জেনারেল চৌহান অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর ও ব্রিটেনের উচ্চপদস্থ প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। আলোচনায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষায় পার্টনারশিপ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা হয়েছে।
ভারত-আমেরিকা প্রতিরক্ষা
CDS জেনারেল চৌহান আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের (INDOPACOM) কমান্ডার অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল জে. পাপারোর সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করা নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষত, অপারেশন ‘সিঁদুর’ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। তাঁরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যৌথ সহযোগিতা ও আগামিদিনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়েও কথাবার্তা বলেন।
চিনের চালবদল
শাংগ্রি-লা ডায়ালগে এবার ৪৭টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৪০টির বেশি দেশের মন্ত্রী-স্তরের প্রতিনিধি রয়েছেন। রিপোর্ট বলছে, চিন এবার তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডং জুনকে পাঠাচ্ছে না। তার বদলে পিপলস লিবারেশন আর্মির ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি চিনের স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলা যেতে পারে।
প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালের পর চিন তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে এই মঞ্চে পাঠাচ্ছে না। একইসঙ্গে প্রথমবার কোনো ইউরোপীয় নেতা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, উদ্বোধনী ভাষণ দিচ্ছেন।
ম্যাক্রোঁ বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর পৌঁছেছেন। সিঙ্গাপুর ও ফ্রান্সের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও শনিবার এই সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের বক্তব্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হচ্ছে, কারণ তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিরক্ষা নীতি তুলে ধরবেন।
তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে মোট সাতটি পূর্ণাঙ্গ ও তিনটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। লন্ডন-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (IISS) ২০০২ সাল থেকে এই সম্মেলনের আয়োজন করছে। ২০২৪ সালে ৪৫টি দেশ এই আলোচনায় অংশ নিয়েছিল।