সৌদি আরব থেকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হল ৫,০০০-এরও বেশি ভিখারি। শুধু তাই নয়, আরও পাঁচ দেশে ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগে আরও ৩৬৯ জন পাকিস্তানি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। গত ১৬ মাসের এই পরিসংখ্যান খোদ পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক প্রকাশ করেছে।
বুধবার পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি। পাকিস্তান পিপলস পার্টির সাংসদ সহার কামরানের প্রশ্নের লিখিত জবাবেই এই তথ্য পেশ করেন তিনি।
সৌদি আরব ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সেদেশে সরকারিভাবে ভিক্ষা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ‘অ্যান্টি বেগিং ল’-এর আওতায় সৌদি প্রশাসন ভিক্ষাবৃত্তিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। শুধু স্থানীয় বাসিন্দাই নয়, বিদেশি নাগরিকেরাও যদি এই কাজে যুক্ত হন, তবে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হয়। জরিমানা ও কারাদণ্ডের পাশাপাশি বিদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে ভয়াবহ সঙ্কটে। বাড়ছে মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানির দাম, খাদ্যের অভাব। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন হয়ে উঠছে অসহনীয়। চাকরির অভাব ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভেঙে পড়ার জেরে বহু মানুষ বাধ্য হচ্ছেন বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা করতে। প্রাতিষ্ঠানিক বা কারিগরি শিক্ষার অভাবে বিদেশে গিয়ে চাকরি খুঁজে নিতেও অপারগ হচ্ছেন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতির অন্যতম প্রধান কারণ দুর্নীতি, শিক্ষাব্যবস্থার দূর্বলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক ঋণের বোঝা। পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এই চাপ কাটাতে গিয়ে সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর কর চাপাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ দিশেহারা।
অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় মধ্যপ্রাচ্যে যান। কিন্তু কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেন।
বিশেষ করে সৌদি আরবের মতো দেশে সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনওরকম আপস করা হয় না। সেখানে এই ধরনের কাজ করলে পরিণাম ভয়াবহ হয়।
এই ঘটনার পর পাকিস্তানের সমাজ এবং রাজনীতিতে ফের প্রশ্ন উঠেতে শুরু করেছে—কবে এই আর্থিক দুর্দশা থেকে তাদের মুক্তি হবে? সরকার কি আদৌ পরবর্তী প্রজন্মের যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে জোর দিচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরাই।