পাকিস্তানের দ্বিচারিতা আরও প্রকট। একদিকে জঙ্গিদের লালনপালন করছে, অন্যদিকে জঙ্গি হামলার নিন্দেও করছে। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার নিন্দা করলেও, পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইসহাক দার যেভাবে ওই হামলাকারীদের ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ বলে অভিহিত করেছেন, তাতে বিতর্ক আরও বেড়েছে। ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, '২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে যারা হামলা চালিয়েছে, তারা স্বাধীনতা সংগ্রামীও হতে পারে।'
এই মন্তব্যের ঠিক আগেই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি (Indus Waters Treaty) স্থগিত করা এবং ভারতীয় ভিসাধারী সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিকের ভিসা বাতিল করা।
পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর পাল্টা হুঁশিয়ারি
ইসহাক দারের কথায়, 'পাকিস্তানের ২৪ কোটি মানুষের জল প্রয়োজন। কেউ এই জল আটকে দিতে পারে না। এটা যুদ্ধ ঘোষণার সামিল।' তিনি আরও বলেন, 'যদি ভারত পাকিস্তানকে হুমকি দেয় বা আক্রমণ করে, তবে আমরা প্রত্যুত্তর দিতে বাধ্য হব। আমাদের দেশে হামলা হলে, সমান জবাব দেওয়া হবে।'
এদিকে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (NSC) বৈঠকের পরে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, 'সিন্ধু জলচুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রাপ্য জল বন্ধ বা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলে, সেটাকে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে ধরা হবে।'
পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য আরও তীব্র
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিফ আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, 'ভারত পাকিস্তান জুড়ে হামলার পরিকল্পনা করছে। আমাদের নাগরিকদের যদি কেউ ক্ষতি করে, তাহলে ভারতীয় নাগরিকরাও নিরাপদ থাকবেন না। প্রত্যুত্তর দেওয়া হবেই।'
ভারতের নজিরবিহীন পদক্ষেপ
এতদিন ধরে ভারত-পাকিস্তান জলচুক্তি কূটনৈতিক সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি ছিল। পহেলগাঁওয়ের হামলার পরে ভারত যেভাবে এই চুক্তি স্থগিত করেছে, তা পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরির বড় কৌশল বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। পাকিস্তানের কৃষি, জলবিদ্যুৎ এবং খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাপকভাবে ইন্দাস নদীর উপর নির্ভরশীল।
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসারান মেঠো এলাকায় এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় কমপক্ষে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF), যা নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তইবা-র একটি শাখা বলে মনে করা হয়।