সম্প্রতি রাশিয়ার দু'টি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন-রাশিয়ার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। রাশিয়া কি পাল্টা প্রত্যাঘাত করবে? কূটনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং উন্নত অস্ত্র রয়েছে। এদের 'সুপার ওয়েপন' বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাভানগার্ড, বুরেভেস্টনিক, জিরকন, কিনঝাল, পোসেইডন এবং সারমাট। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এগুলি ব্যবহার করেনি রাশিয়া।
আরও পড়ুন: Ukraine Drone Attack: ইউক্রেনের অপারেশন 'স্পাইডার ওয়েব'-এ তছনছ রাশিয়া, কীভাবে ছড়াল মাকড়সার জাল?
রাশিয়ার মহাশক্তিশালী অস্ত্র
অ্যাভানগার্ড হাইপারসনিক গ্লাইড রকেট: এই অস্ত্রটি শব্দের ২০ গুণ গতিতে ওড়ে (ম্যাক ২০)। অর্থাৎ ঘণ্টায় ২৪,৬৯৬ কিলোমিটার। ৬,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে গিয়ে আঘাত হানতে পারে। এটি পারমাণবিক বা অন্য কোনও অস্ত্রের পেলোড বহন করতে পারে। রাডার এড়িয়ে যেতে পারে।
9M730 Burevestnik: এটি একটি পরমাণু শক্তিচালিত ক্রুজ মিসািল। হাজার হাজার কিলোমিটার উড়তে পারে। বহুদূরের শহরে পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতা থাকায় একে 'ফ্লাইয়িং চেরনোবিল'ও বলা হয়।
3M22 জিরকন: এই হাইপারসনিক জাহাজ-ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র। রেঞ্জ ১,০০০ কিলোমিটার। এটি ম্যাক ৯ অর্থাৎ ঘণ্টায় ১১,১১৩ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে। এটি জাহাজ এবং ল্যান্ডে যে কোনও টার্গেটে আঘাত হানার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
Kh-47M2 কিনঝাল: হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল। এই ধরনের মিসাইল বিমান থেকে লঞ্চ করা হয়। এটি ২,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে গিয়ে আঘাত হানতে পারে। এটি ম্যাক ১০ অর্থাৎ ঘণ্টায় ১২,৩৪৮ কিলোমিটার গতিতে চলে।
পসেইডন: পারমাণবিক শক্তিচালিত আন্ডারওয়াটার ড্রোন। উপকূলবর্তী শহর ধ্বংস করে দিতে পারে। রেঞ্জ ১০,০০০ কিলোমিটার। পারমাণবিক বিস্ফোরণে সুনামির মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
আরএস-২৮ সারমাত: এটি ভয়ানক বললেও কম বলা হয়। আরএস-২৮ একটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল (ICBM)। রেঞ্জ ১৮,০০০ কিলোমিটার। একসঙ্গে ১০-১৫টি পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে।
রাশিয়া এগুলো ব্যবহার করেনি কেন?
ভ্লাদিমির পুতিন কিন্তু এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এই 'সুপার' অস্ত্রগুলির ব্যবহার করেননি। এর পিছনে বেশ কিছু কারণ আছে...
বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি: সারমাট এবং পসেইডনের মতো ভয়ঙ্কর শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। রাশিয়ার কাছে ৬,০০০ পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫,৫০০টি আছে। যদি রাশিয়া আক্রমণ করে, NATO এবং আমেরিকা পাল্টা প্রতিশোধের পথে হাঁটতে পারে।
কূটনৈতিক চাপ: এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করলে রাশিয়ার মিত্র দেশগুলিও তা ভাল চোখে নেবে না। চিন এবং ভারত এগুলি মোটেও সাপোর্ট করবে না। ফলে রাশিয়া সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ একঘরে হয়ে যাবে।
ইউক্রেনের কৌশল: ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী তুলনামূলকভাবে দুর্বল। তবে তারা সেনাবাহিনীকে দেশজুড়ে অজস্র ছোট ছোট ঘাঁটিতে ছড়িয়ে রাখে। কোনও একটি ঘাঁটিতেই তাদের সব সৈন্যরা জড়ো হয় না। ফলে কিঞ্জাল বা জিরকনের মতো অস্ত্র দিয়ে কোনও নির্দিষ্ট সেনাঘাঁটিতে হামলা করেও কোনও লাভ হবে না। অন্যদিকে রুশ সৈন্যরাও কম প্রশিক্ষিত।
টার্গেটও আলাদা: বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের টার্গেট হল ডনবাসের মতো অঞ্চল দখল করা। পুরো ইউক্রেন ধ্বংস করার কোনও অভিপ্রায়ই নেই তাদের। কিয়েভের মতো শহরে এই অস্ত্রের ব্যবহার করলে তা ন্যাটোকে যুদ্ধে নামতে বাধ্য করতে পারে।
অস্ত্র থাকাটাই সব...: বর্তমান বিশ্বে পরিস্থিতি খুব জটিল। অস্ত্রের ব্যবহারের তুলনায়, হাতে যে অস্ত্র আছে, সেটা দেখিয়েই অনেককিছু হতে পারে। সম্ভবত সেই শক্তিই কাজে লাগাচ্ছেন পুতিন। আর হয় তো সেই কারণেই এখনও পর্যন্ত NATO সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারছে না।
২০২৫-এর মে মাসে, রাশিয়া ৩৫৫টি ড্রোন এবং ৯টি মিসাইল দিয়ে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু সুপার অস্ত্রের ব্যবহার করেনি।