বিদ্যা সিনহা মিম, বাংলাদেশের গ্ল্যামার জগতে অতি পরিচিত নাম। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি শোবিজে রয়েছেন। নাটক, বিজ্ঞাপনে নিজের জাত চিনিয়ে এবার থিতু হয়েছেন বড়পর্দায়। সেই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন সাধের মডেলিংও।
লাক্স তারকা হয়ে শোবিজে পা রাখেন বিদ্যা সিনহা মিম। এরপর কাজ করেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় ‘আমার আছে জল’ চলচ্চিত্রে। বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা অভিনেত্রীদের একজন মিম। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী তিনি। জোনাকির আলো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাংলাদেশের ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সম্মান পান মিম।
টলিউডেও অভিনয় করেছেন বিদ্যা। ২০১৮ সালে ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছিল ‘সুলতান: দ্য সেভিয়ার’। এই ছবিতে জিতের বিপরীতে দেখা যায় মিমকে। এছাড়াও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ইয়েতি অভিযানেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
তবে অভিনয়ের এ পথ পাড়ি দিতে তাকে অনেক কষ্ট সইতে হয়েছে। আছে অনেক সংগ্রাম। এমনটাই দাবি করেন মিম। একবার সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মিম বলেন, চরিত্রের প্রয়োজনে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। একবার সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে পড়ে যান তিনি। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টারের বিজয়ী হওয়ার আগে মায়ের সহযোগিতায় দুই বছর মিডিয়ায় কাজ করার চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানান মিম।
বিদ্যা সিনহা সাহা মিমের জন্ম ১৯৯২ সালের ১০ নভেম্বর রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায়। বাবা বিরেন্দ্র নাথ সাহা তাঁর পৃথিবী বলে দাবি করেন মিম। মিমের ছোট বোনের নাম প্রজ্ঞা সিনহা সাহা মমি। বাবার চাকরি সূত্রে মিমের ছোটবেলা কেটেছে ভোলা ও কুমিল্লায়।
মিম কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তিনি বাংলাদেশের আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে স্নাতক।
হুমায়ুন আহমেদ পরিচালিত আমার আছে জল চলচ্চিত্রে অসাধারন অভিনয় করে মীম সবার নজরে আসেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি লেখিকা হিসাবেও সমাদৃত। ২০১২ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বিদ্যা সিনহা সাহা মিমের প্রথম গল্পের বই 'শ্রাবণের বৃষ্টিতে' ভেজা প্রকাশিত হয়। তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস 'পূর্ণতা'।
অভিনয়ের পাশাপাশি সামাজিক কাজের জন্য খ্যাতি রয়েছে মিমের। পুজোর সময় দুস্থদের পোশাক বিতরণ থেকে কম্বল দান, মাঝে মধ্যেই তাঁর দান-ধ্যানের খবর শোনা যায়। এমনকি হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও গৃহকর্মীদের জন্য কোরবানি দেওয়ায় অনেকেই তার প্রশংসা করেছেন।
মিম অবশ্য বলেন ধর্ম নয়, কাজই তাঁর পরিচয়। নায়িকার কথায়, ‘কেরিয়ার শুরুর সময় অনেকেই আমাকে বলেছিলেন, হিন্দু জানতে পারলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই সবাই আমাকে মিম বলেই ডাকতে শুরু করেন। আমি চেয়েছিলাম, কাজ আমার পরিচয়, ধর্ম নয়! ধর্ম কখনোই আমার কেরিয়ারে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।’
জনপ্রিয় নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম সবসময়ই স্বাস্থ্য সচেতন। নিজেকে ফিট এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত জিম করছেন এই অভিনেত্রী। রোজ সকালে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত টানা ঘাম ঝরান নায়িকা। গত চার মাসে সাত কেজি ওজন কমিয়েছেন তিনি।
মিম করোনার লকডাউনের অবসর সময়টি বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন। পরিবারকে সময় দেয়ার পাশাপাশি নিজের ফিটনেসে মনোযোগ দেন তিনি। মিম বলেন, 'অভিনয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে এতদিন নিজেকে ও পরিবারকে ঠিকমত সময় দিতে পারিনি। লকডাউনের সময়টিকে কাজে লাগিয়েছি। বাড়তি সময় দিতে পারছি।'
বছরে এক দিন পান্তা ভাত খান ঢালিউড তারকা বিদ্যা সিনহা মিম। সেটি বাংলা বছরের প্রথম দিন। সেদিন নানা রকম ভর্তা দিয়ে পান্তা খান তিনি।
তবে বাংলাদেশে লকডাউন উঠতেই আবার কাজে ফিরেছেন নায়িকা। লকডাউনের আগে দামাল এবং পরাণ সিনেমার কাজ শেষ হয়েছে তাঁর। সিনেমা দুটি এখন মুক্তির অপেক্ষায়। ইত্তেফাক সিনেমার কাজ কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি ‘নট হার ফল্ট’ এব ‘হোয়াট দ্য ফ্রাই’ নামে দুটি ওয়েব মুভিতেও দেখা গেছে তাঁকে।
বাংলাদেশের প্রথম সাইবার থ্রিলার ‘অন্তর্জাল’-এ অভিনয় করছেন মিম। সঙ্গে রয়েছেন সিয়াম আহমেদ ও সুনেরাহ বিনতে কামাল। এই সিনেমায় সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট হিসেবে দেখা যাবে মিমকে। ১১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার মিরপুরে শুরু হয়েছে ছবির শুটিং। আগামী ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা ‘অন্তর্জাল’-এর।
নববধূর সাজে একাধিকবার ফটো শ্যুট করতে দেখা গেছে নায়িকাকে। তাঁর বিয়ে নিয়েও কম গুঞ্জন হয়নি। নায়ক বাপ্পীর সঙ্গে একসময়ে মিমের গোপন বিয়ের খবর মিডিয়াতে ভেসেছিল। ‘সুইটহার্ট’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন এই জুটি। কলকাতার এক মন্দিরে এসে মালাবদল করেছেন তারা এমন খবরও রটে। যদিও এই খব উড়িয়ে দেন মিমের মা ছবি সাহা।