২১ লাখ ৭২ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বঙ্গোপসাগরে এখন ইলিশ ধরার ভরা মরশুম চলছে। ইলিশের সন্ধানে সাগরে নেমেছে কক্সবাজার, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা, ভোলাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কয়েক হাজার ট্রলার।
তবে এবার ইলিশ সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ছে শুধু কক্সবাজারে, তা–ও সেন্ট মার্টিন উপকূলে। গত ১৫ দিনে বাংলাদেশে এ জেলার ৫ হাজারের বেশি ট্রলারে ধরা পড়েছে দেড় হাজার মেট্রিক টন ইলিশ। ৯০ শতাংশ ইলিশের ওজন ১ কেজির বেশি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশও ধরা পড়েছে।
ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলার ৩০টি জেলেপল্লিতে এখন খুশির হাওয়া।
গত ২৩ জুলাই সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বাংলাদেশে। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে তারও অনেক আগে থেকেই বন্ধ হয়ে যায় ইলিশ মাছ ধরার স্বাভাবিক কার্যক্রম। লম্বা বিরতির পর গত ২৩ জুলাই রাতে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় জেলেরা ট্রলার, বোট নিয়ে সাগরে গেলেও প্রথম দিকে জালে তেমন একটা ধরা পড়েনি ইলিশ। পরে অবশ্য দৃশ্যপট বদলায়। এখন প্রতিদিন জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে। মৎস্যজীবীদের মতে ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছের প্রজনন বেড়েছে এবং আকার বড় হয়েছে। এখন তারা বেশী মাছ পাচ্ছে।
গত কয়েকদিনে কক্সবাজার উপকূলে সাগরে ধরা পড়ছে প্রচুর রুপালি ইলিশ মাছ। এতে করে উপকূলের হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবীদের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি। প্রতিদিন শত শত নৌকা সাগর থেকে হাজার হাজার রুপালি ইলিশ নিয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আসছেন তারা। জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ায় উপকূলীয় বিশেষ করে কলাপাড়া, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, পাথরঘাটা এলাকার জেলেপল্লী ও আড়তগুলোতে আনন্দের জোয়ার বইছে।
ইলিশের জন্য খ্যাত বরিশাল, পটুয়াখালী, কলাপাড়া, বরগুনা, পাথরঘাটা, ভোলার মাছ ব্যবসায়ীরা এখনব্যস্ত। ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুরের বাজারও এখন বেচাকেনায় বেশ গরম।
ইলিশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ বছর বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় নদীতে জলের প্রবাহ বেড়েছে। আর এজন্যই ইলিশ আগের চেয়ে বেশি ধরা পড়ছে। এছাড়া সামুদ্রিক নিম্নচাপ এবং সাইক্লোনের প্রভাবেও বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন। বাংলাদেশের নদীর জলের গুণাগুণ ও প্রবাহ ইলিশের প্রজননের জন্য এখনও অনুকূলে। এ কারণে ডিমওয়ালা মা ইলিশ সাগর থেকে স্রোতযুক্ত মিষ্টিজলের নদীতে ডিম ছাড়তে আসে। এছাড়াও ইলিশ মাছের প্রজনন নিরাপদ রাখতে গত কয়েক বছর প্রতিবেশী দেশটিতে ইলিশ আহরণ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্ধ রাখছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রক। ফলে কমেছে জাটকা, বেড়েছে ইলিশের পরিমাণ।
ইলিশ সাধারণত জুলাই মাসের শেষ দিকে সমুদ্র থেকে নদীতে আসতে শুরু করে। পদ্মা নদীর জলের স্তর ও গভীরতা অন্য নদীর চাইতে বেশি হওয়ায় ইলিশ পদ্মার দিকেই আসে। এ কারণে পদ্মা এবং এর আশপাশের সাগর এলাকায় বেশি ইলিশ ধরা পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালীর আড়তগুলোয় এখন শ্রমিকরা ট্রলার থেকে ইলিশ নামানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঝুড়িতে করে শ্রমিকেরা ইলিশ এনে আড়তে ফেলছেন। একদিকে মাপামাপির কাজ, অন্যদিকে চলে দরদাম। পাইকারি ক্রেতারা সেসব আড়ত থেকে ইলিশ রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোয় নিয়ে আসছেন। এ কারণে যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, কাওরানবাজার মাছের আড়তে এখন ইলিশের ছড়াছড়ি।