ইলিশ মাছকে কত রকমের করে যে রান্না করা যায়, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। একেক জায়গার মানুষ একেক রকম করে রান্না করে থাকেন। খুব সাধারণভাবে ইলিশ মাছ রান্না করলেও অনেক সময় সেই স্বাদ মুখে লেগে থাকে। প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। কেবল মাছ নয় ইলিশের ডিমও দারুণ সুস্বাদু। নানাভাবেই ইলিশের ডিম রান্না করা হয়ে থাকে।
চাঁদপুরের ইলিশের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশের বাইরেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। মাছের পাশাপাশি ইলিশের ডিমের চাহিদাও কম নয়। সাগর ও নদী থেকে আমদানি কম হওয়ায় দাম চড়া ডিমের। কেজিতে দু’তিনশ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩শ থেকে ১৪শ টাকায়।
চাঁদপুরের ইলিশের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশের বাইরেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। মাছের পাশাপাশি ইলিশের ডিমের চাহিদাও কম নয়। সাগর ও নদী থেকে আমদানি কম হওয়ায় দাম চড়া ডিমের। কেজিতে দু’তিনশ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩শ থেকে ১৪শ টাকায়।
তবে মাছ আর ডিমের ক্ষেত্রে হিসাব একটু আলাদা। ডিমের ক্ষেত্রে যে ওই ইলিশ পদ্মা-মেঘনারই হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নোনা জলের ইলিশের ডিম নাকি বেশি সুস্বাদু। আবার বেশি সুস্বাদু মিষ্টি জলের মাছ। এমনটাই জানান ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশের মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডিম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তৃতীয় সারির ইলিশই তাদের প্রথম পছন্দ। যে ইলিশগুলো একটু নরম হয়ে যায় মূলত সেই ইলিশের ডিম সংরক্ষণ ও মাছগুলো লবণ দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়াজাত করে প্রায় এক বছর সংরক্ষণের পর বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। তবে মাছ নরম হলেও ডিম তরতাজা থাকে।
পড়শি দেশের আড়তদাররা জানিয়েছেন, মূলত দুই ধরনের ইলিশ মাছ ঘাটে আসে। ফিশিংবোটের মাছ ও হাতিয়ার মাছ। ফিশিংবোটের যে সব মাছ আমদানি হয় সেগুলোর ডিম সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু হাতিয়া থেকে যে মাছগুলো ঘাটে আসে সেগুলোর ডিম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ইলিশের ডিম সংরক্ষণে হাতিয়ার ইলিশ মাছ সবচেয়ে ভালো বলে দাবি তাদের।
চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না ইলিশের ডিম। ডিম সংরক্ষণের জন্য এই সময়টা উপযুক্ত বিবেচনা করার পরও অন্য বছরের তুলনায় এবছর পর্যাপ্ত ডিম সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এতে স্বাভাবিকের তুলনায় ইলিশের ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। কয়েকজন আড়তদার বলেন, ‘অন্য বছর যেখানে প্রতিদিন প্রতিটি আড়তে দেড়শ থেকে ২শ কেজি ইলিশের ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব হতো, সেখানে এবছর গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কেজি ডিমও সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
এজন্য মাছের আমদানি কম হওয়াকেই মুখ্য বিষয় বলে দাবি করছেন তারা। বর্তমানে প্রতিকেজি ইলিশের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩শ থেকে ১৪শ টাকায়। অন্য বছর দাম থাকে এক হাজার থেকে ১২শ টাকা। তবে আগামি এক মাসে চাহিদা অনুযায়ী ইলিশের ডিম সংরক্ষণ করা যাবে বলে মনে করছেন আড়তদাররা।
যেভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় ইলিশের ডিম
ইলিশের ডিম সংরক্ষণের জন্য প্রথমে মাছগুলো প্রায় আধাঘণ্টা বরফের মধ্যে রেখে দেওয়া হয় যাতে মাছের ভেতরে থাকা ডিম সামান্য শক্ত হয় এবং অনায়াসে ডিম নষ্ট না করে ইলিশের পেট থেকে বের করে আনা যায়। পরে একটি একটি করে মাছ কেটে ডিমগুলো বের করে আনা হয়। মাছগুলো নির্দিষ্ট একটি সাইজে টুকরো টুকরো করে কেটে সেগুলো নুন দিয়ে নোনা মাছে পরিণত করার জন্য সংরক্ষণ করা হয়। পরে ডিমগুলো রাখা হয় একটি নির্দিষ্ট বাটিতে। প্রতিটি বাটিতে আড়াই কেজি করে ইলিশের ডিম সংরক্ষণ করা যায়। রাখা হয় বরফপাত্রে।
বাংলাদেশে নোনা ইলিশ সংরক্ষণ
ইলিশের ডিম আলাদা করা সম্পন্ন হলে মাছগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সাইজে কেটে প্রচুর পরিমাণ লবণ মাখিয়ে সেগুলো সপ্তাহখানেকের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্তূপাকারে রেখে দেওয়া হয়। পরে লবণমিশ্রিত ফুটন্ত গরম জল ঠান্ডা করে সেই জল একটি ড্রামে নিয়ে মাছগুলো ওই ড্রামে প্রায় এক বছরের জন্য রেখে দেওয়া হয়। এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর মাছগুলো আলাদা করে রফতানি করা হয়।
ইলিশ মাছের মাথা থেকে শুরু করে প্রতিটি অংশ দিয়েই সুস্বাদু রেসিপি তৈরি করা যায়। এই মাছের ডিমও একেবারে ফেলনা নয়। ইলিশ মাছের ডিম ভুনা থেকে মাছের ডিমের ঝোল, টক, অম্বল, ডিম-করলার লটপটি, ইলিশ মাছের ডিমের পাতুরি, ইলিশের ডিম ভাজি, ইলিশের ডিম ঝুরি, ইলিশের ডিমের কাবাব, ইলিশের ডিম ভাপা, আলু দিয়ে ইলিশ মাছের ডিম ভোজন রসিকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
ইলিশের পাশাপাশি ইলিশের ডিমের চাহিদা বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে চাঁদপুরের ইলিশের ডিম অনলাইনের মাধ্যমে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। চাঁদপুর থেকে অনলাইন এবং চট্টগাম থেকে রফতানির মাধ্যমে দুবাই, সৌদি আরব, মালেশিয়া, ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে ইলিশের ডিম। নরম ও পচে যাওয়া ইলিশের ডিম প্লাস্টিকের বক্সে করে সংরক্ষণ করা হয়। আর বাক্সের ইলিশের ডিম বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাসহ চলে যায় বিদেশে। কেজি প্রতি ইলিশ ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকায়।