scorecardresearch
 

Bangladesh: 'হাসিনার চিনা নীতি ভারত-বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়', আজতক বাংলায় BNP নেতা

বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিয়ে খোলামেলা  আলোচনা করেছেন নিতাই রায়চৌধুরী। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট দেশের ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর বিচ্ছিন্নভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করেন নিতাই রায়চৌধুরী।

Advertisement
আজতক বাংলায় বিএনপি নেতা নিতাই রায়চৌধুরী। আজতক বাংলায় বিএনপি নেতা নিতাই রায়চৌধুরী।
হাইলাইটস
  • আজতক বাংলায় বিশেষ সাক্ষাৎকার বিএনপি নেতা নিতাই রায়চৌধুরীরর।
  • চিনা ঋণ থেকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ বা অনুদানের নামে চিনের অর্থ সাহায্য হাসিনা সরকারের জন্য তো বটেই ভারতের কাছেও মঙ্গলজনক নয়। এমনটাই মত বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি-র ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন মন্ত্রী আইনজীবী নিতাই রায়চৌধুরীর। আজতক বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চিনা অর্থ সাহায্য নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান তিনি। তাঁর কথায়,'এই অর্থ লগ্নির মাধ্যমে বাংলাদেশ তথা এই অঞ্চলে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে চায় চিন। মেগা প্রকল্পগুলিতে চিনা ঋণ দেশের জনগণের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভুল বোঝাবুঝি হলেই  শ্রীলঙ্কার মতো চিন বাংলাদেশকেও দখল করে নেবে।'
 
বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিয়ে খোলামেলা  আলোচনা করেছেন নিতাই রায়চৌধুরী। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট দেশের ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর বিচ্ছিন্নভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করেন নিতাই রায়চৌধুরী। তবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক যে সব হামলার ঘটনা ঘটেছে তা মূলত অর্থনৈতিক কারণে বলেই তাঁর মত। তাঁর অভিযোগ, প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হিংসার সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগ। 

বাংলাদেশে চিনা ঋণ ও হাসিনা সরকারের নীতি

বিএনপি-র শীর্ষ নেতা বলেন,'বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ বা অনুদানের নামে চিনের লগ্নি ভারত বা  হাসিনা সরকারের জন্য মঙ্গলজনক নয়। চিনা ঋণ নেওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অপরিণামদর্শী চিন্তাভাবনা। শেখ হাসিনা বলে থাকেন,চিনের সাথে বাংলাদেশের  অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক। কিন্তু চিন যে শর্তহীনভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করে যাচ্ছে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। তাঁর মতে, রাজনৈতিক আধিপত্য ছাড়া আর্থিক  সাহায্য বা লেনদেন হতে পারে না। অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাধারণত সাহায্য করার লক্ষ্যই হল রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার। চিন নিজের বাজার বিস্তারের জন্য বাংলাদেশকে ঋণ দিচ্ছে।  হাসিনা সরকার সেটা নিয়ে বলছে উন্নয়ন করছি। কিন্তু এই উন্নয়নের ভিত্তি হচ্ছে বিদেশি ঋণ।' 

Advertisement

ঋণ নিয়ে উন্নয়ন হতে পারে না বলেও মনে করেন বাংলাদেশের বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা। তাঁর কথায়,'এই ঋণের বোঝা জনসাধারণের কাঁধে চাপছে। এই উন্নয়নে জনগণের কোনো লাভ  নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজস্ব অর্থে উন্নয়ন করছে। বাংলাদেশ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের নামে ঋণের বোঝা মাথায় নিচ্ছে, যাই শোধ করার ক্ষমতা এই মুহূর্তে নেই। চিন রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য বাংলাদেশকে ঋণ দিচ্ছে। কোন রকম ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের অবস্থা হবে। শ্রীলঙ্কার বন্দর যেমন চিন দখল করে নিয়েছে, এখানেও সে রকম ঘটবে। বাংলাদেশ যদি ঋণ শোধ দিতে না পারে বা কোনও কারণে চীনের সঙ্গে শত্রুতা হয় তখন তারা বাংলাদেশে চলে আসবে।'

সংখ্যালঘু ইস্যু

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা এবং নির্যাতন নিয়ে আজতক বাংলা’র প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন,'বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক যে সব হামলার ঘটনা ঘটে তা মূলত অর্থনৈতিক কারণে। দেখবেন দেশে যত সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছে, তার সঙ্গে শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগ জড়িত। তবে ২০০১ সালের পর বিএনপি জমানাতেও সাম্প্রদায়িক হিংসার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। আওয়ামি লিগ হিন্দুদের বড় শত্রু বলে অভিযোগ করেন নিতাই রায়চৌধুরী। তাঁর ব্যাখ্যা,'দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে যখন রাষ্ট্র ভাগ হল তখন হিন্দু একজাতি,মুসলমান একজাতি।  হিন্দুদের আলাদা বাসভূমি, মুসলমানদের আলাদা বাসভূমি। হিন্দুরা মনে করল যে আমাদের বাসভূমি ভারত, মুসলমানদের বাসভূমি এখানে। তখন হিন্দু জমিদাররা রাতারাতি ভারতে চলে গেলেন। কিছু কিছু পরিবার বাদ দিয়ে অধিকাংশই চলে গেলেন। এরপর আসল মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা ব্যাপকভাবে লুটপাট শুরু করল হিন্দুদের ঘর বাড়িতে। তখন তারা এদেশ থেকে শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিল। ফিরে এসে তারা দেখল জমিজমা সব দখল করেছে আওয়ামি লিগের নেতারা।  তখন তো বিএনপি সৃষ্টি হয়নি। আওয়ামি লিগের নেতারা হিন্দুদের বাড়ি ঘর দখল করেছে। এখন হিন্দুরা এসে যখন তাদের বাড়ি, ঘর, জমি জমা ছাড়ার কথা বলে তখনই বিরোধ। এমনকি দেবোত্তর সম্পত্তি যেখানে উপাসনালয়,মন্দির সেই জায়গাও দখল করেছে। বিএনপি নেতারা হিন্দুদের বাড়ি ঘর দখল করেনি। এমনকি জামায়াতে ইসলামের বিরুদ্ধেও হিন্দুদের বাড়ি ঘর দখলের কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি।'

আরও পড়ুন- পঙ্গু জীবন নিয়ে কী করে...' ভুল চিকিত্‍সার বিস্ফোরক অভিযোগ তসলিমার

বিএনপি-র ভারত নীতি

নিতাই রায়চৌধুরী বলেন,'বিএনপি কখনও ভারতকে শত্রু মনে করে না। বাংলাদেশ ভারতের পেটের ভেতর।  যে কারণে ভারত নিজের স্বার্থেই বাংলাদেশের মঙ্গল চায়। বিএনপি এটা বোঝে বলেই ভারতকে কখনও শত্রু মনে করে না। বরং ভারত সরকার এবং জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্কে বিশ্বাসী। যে সম্পর্ক আরও গভীর হওয়া উচিৎ বলে বিএনপি মনে করে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি। 

নিতাই স্মরণ করিয়ে দেন,জিয়াউর রহমানের ঘোষিত নীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব,কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। আমরা কারও সঙ্গে শত্রুতা চাই না। আমরা বন্ধুত্ব চাই। এখানে ভারতের কিছু জাতীয় স্বার্থ আছে, বাংলাদেশেরও। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। 

বিভিন্ন সময়ে বিএনপির একাধিক নেতা ভারত বিরোধী মন্তব্য করেন। এমনকি ভারত বিরোধী কর্মসূচিতেও দেখা যায়। এই বিষয়কে কীভাবে দেখছেন? নিতাই বলেন,'এসব রাজনৈতিক বক্তব্য। বিএনপির নেতারা বলে থাকলেও এটা দলের নীতি নয়। ভারতেও অনেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলেন। এটাকে বড় করে দেখার দরকার নেই।'

আরও পড়ুন- মিম- বাঁধন থেকে মোশারফ, একঝাঁক তাবড় তারকা নিয়ে বাংলাদেশের নতুন ৮ সিরিজ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

Advertisement

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাবনা কী? নিতাই রায়চৌধুরী বলেন,'আমরা একটা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। এখন বিএনপি বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তিনবার রাষ্ট্রের ক্ষমতায় ছিল। দুবার প্রেসিডেন্ট ছিলেন জিয়াউর রহমান। পাঁচবার দেশের ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। এখন এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এই দলকে সমর্থন করে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আদৌ কোনও নির্বাচন হয়নি। ১৪ সালের নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দলগুলি অংশগ্রহণই করেনি।  ১৮ সালে নির্বাচনের আগের দিন রাতে অর্ধেক ভোট করিয়ে নিল। পরদিন বাকিটা করে সব আসন দখল করে নিল আওয়ামি লিগ। বিএনপির মতো একটা বড় রাজনৈতিক দল পেল মাত্র ৫টা আসন। আমরা চাইছি, নির্বাচনে যাতে জনগণ ভোট দিতে পারে।'

আরও পড়ুন- ঢাকায় গিয়েও বিতর্ক তৈরি শ্রীলেখার, এবার নায়িকা হচ্ছেন ফেরদৌসের

.

Advertisement