scorecardresearch
 

Violence in Bangladesh: ৭ দিন ধরে অস্থির বাংলাদেশ, ঠিক কী ভাবে হিংসার শুরু?

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সেদেশের কুমিল্লা, নোয়াখালি, চাঁদপুর, বাঁশখালি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজারে দুর্গা মণ্ডপ এবং বিভিন্ন মন্দিরে হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। শুধু তাই নয়, সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গিয়েছে। শারদোৎসবের আনন্দ শেষপর্যন্ত পরিণত হয়েছে আতঙ্কে। মৌলবাদীদের হামলায় প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা।

Advertisement
হাইলাইটস
  • বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে
  • সেদেশের কুমিল্লা, নোয়াখালি, চাঁদপুর, বাঁশখালি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজারে দুর্গা মণ্ডপ এবং বিভিন্ন মন্দিরে হামলার ঘটনা সামনে এসেছে
  • শুধু তাই নয়, সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গিয়েছে


বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সেদেশের  কুমিল্লা, নোয়াখালি, চাঁদপুর, বাঁশখালি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজারে দুর্গা মণ্ডপ  এবং বিভিন্ন মন্দিরে হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। শুধু তাই নয়, সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গিয়েছে। শারদোৎসবের আনন্দ শেষপর্যন্ত পরিণত হয়েছে আতঙ্কে। মৌলবাদীদের হামলায় প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা। সত্তরের দশকে খান সেনার সেই অত্যাচারের নারকীয় অধ্যায় যেন আরও একবার ফিরে এসেছে  দেশটিতে। দেশের হিন্দু নাগরিকদের অধিকার এবং নিরাপত্তা রক্ষায় তাঁর সরকারের অঙ্গীকারের কথা বহুবারই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এই আশ্বাস সত্বেও থামেনি নির্যাতন।  কুমিল্লা, রংপুর, ফেনি-সহ একাধিক জায়গায় ঘরবাড়ি পুড়েছে হিন্দুদের। পুজোর আনন্দে যখন গোটা বিশ্বের বাঙালিরা মেতে তখনই হিংসার বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে। দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ হয়ে গেল। কিন্তু হিংসার আগুন নেভার নাম নেই।

আরও পড়ুন: হৃদয় বিদারক পোস্ট চঞ্চলের, হাসিনার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তসলিমার

অষ্টমীর রাতে যার শুরু
গত বুধবার অষ্টমীর রাতে বাংলাদেশের একাধিক পুজো মণ্ডপে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। যার সূত্রপাত হয়েছিল কুমিল্লায় একটি পুজোমণ্ডপে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কুমিল্লার ওই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে কোরানের অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। তারপরই ওই পুজো মণ্ডপে একদল দুষ্কৃতী হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের পুলিশ। স্থানীয় প্রতিবেদগুলিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশের দূর্গাপুজো প্যাণ্ডালে হামলার ঘটনায় কংপক্ষে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখান থেকে বহু পুজো মণ্ডপ, মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। 

 

 

তিন দিনে ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা
দুর্গাপুজোয়  বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তিন দিনে ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এছাড়া হাতিয়ায় ৭টি মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছে। পরীসংখ্যান বলছে, ১৩ অক্টোবর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে যেসব মন্দিরে হামলা হয় সেগুলো হলো- ত্রিনয়নী সংঘের পূজামণ্ডপ, লহ্মীনারায়ণজী আখড়া, রামকৃষ্ণ মিশন, জমিদারবাড়ি দুর্গা মন্দির, শ্মশান কালী মন্দির, নবদুর্গা সংঘ পূজামণ্ডপ, দশভূজা সংঘ পূজা মণ্ডপ, সোনাইমুড়ি গ্রামের পূজামণ্ডপ, হাজীগঞ্জ শহর পূজামণ্ডপ, রামপুর লোকনাথ মন্দির, ভদ্রকালী মন্দির, ত্রিশুল সংঘ পূজামণ্ডপ, রামপুর বলক্ষার বাজার পূজামণ্ডপ, হাজীগঞ্জ রাধাগোবিন্দ মন্দির, বাজারগাঁও মুকুন্দ সাহার বাড়ির দুর্গা মন্দির, হাটিলা গঙ্গানগর দুর্গা মন্দির। অষ্টমীর দিনে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি সীতারাম ঠাকুর সেবাশ্রম, গাজীপুরের কাশিমপুর সুবল দাশের মন্দির ও কাশিমপুর বাজার কালী মন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। অষ্টমীর দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ও নাপোড়া গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়।

Advertisement

 

আরও পড়ুন: মন্দিরে হামলার জের! ফের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার পথে বাংলাদেশ?

দশমীতেও মিলল না নিস্তার
কুমিল্লায় ঘটনা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাউকে রেয়াত করা হবে না, স্পষ্ট বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তাতে অবশ্য দমানো যায়নি মৌলবাদীদের। উল্টে দশমীর দিন  নোয়াখালি জেলায় ইসকন মন্দির ভেঙে দে. দুষ্কৃতীরা। উত্তেজিত জনতার হাতে প্রাণ হারান একজন। ইসকন কর্তৃপক্ষ দাবি করে , শুক্রবার প্রায় ২০০ জনের মত একটি দল মন্দিরে হামলা চালায়। ভাঙচুর করে মন্দির। তারপর পার্থ দাস বলে ইসকনের এক সদস্যকে নৃশংসভাবে খুন করে। মন্দিরের পাশের পুকুরে তাঁর দেহ মেলে।

 

 

হিংসা অব্যাহত 
 প্রশাসন কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়ার পরেও গুন। সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। রবিবার রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি উসকানিমূলক পোস্টকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়ার জেলেপল্লিতে হিন্দুদের ২০টি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহম্মদ সাদেকুল ইসলাম স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, হিন্দুদের অন্তত ৬৫টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। তাঁর কথায়, ‘‌হামলাকারীরা জামাত–ই–ইসলামি সংগঠনের সদস্য। তাদের মধ্যে জামাতের পড়ুয়াদের সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের সদস্যরাও রয়েছে।’‌ 

 

 

বাংলাদেশ প্রশাসনের আশ্বাস
হিন্দুদের পাশে আছেন শেখ হাসিনা, মন্তব্য করেছেন আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিরোধ করব। হিন্দু ভাইদের বলব, আপনাদের ভয় নেই, শেখ হাসিনা আপনাদের সঙ্গে আছেন, আওয়ামি লিগ আপনাদের সঙ্গে আছে।’ মঙ্গলবার আওয়ামি লিগের ‘সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তি শোভাযাত্রা’য় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে পুজোর সময় মণ্ডপে ভাঙচুর, সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে উত্তাল এপার বাংলাও।  পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল প্রতিবাদ জানিয়ে চলেছেন। কোনও সন্দেহ নেই কুমিল্লা এবং নোয়াখালির হিংসায় ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে শেখ হাসিনার প্রশাসন। বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা পূর্ব পরিকল্পিত ও প্ররোচনামূলক। দাবি করছেন সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।  হাসিনা সরকারের মন্ত্রীর দাবি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করাই ছিল হামলাকারীদের উদ্দেশ্য। এর নেপথ্যে কারও কায়েমি স্বার্থ রয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ প্রশাসন। মন্ত্রীর দাবি, এই হামলার নেপথ্যে কোনও তৃতীয় পক্ষের উস্কানি রয়েছে। হিংসার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। 

Advertisement

 

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলছেন
বেশ কয়েকদিন ধরে অস্থির বাংলাদেশ। অশান্তি চলছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির ভাঙচুর করা নিয়ে উত্তপ্ত দেশ। চলছে তুমুল প্রতিবাদ। ভারতে চলছে প্রতিবাদ। এর মাঝেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাস বাণী শোনা গেল--- সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। বাংলাদেশের  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এমন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। যেখানে থাকবে না কোনো অবিচার, থাকবে না কোনো অন্যায়। দেশটা আমাদের। এ দেশটা আমরা গড়ে তুলতে চাই একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। গত সোমবার, ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল দিবস ২০২১-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।


 

Advertisement