ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন ইমরান খান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতে আসার আগেই গত বছর হাসিনাকে ফোন করে তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন ইমরান। এখানেই শেষ নয়, করোনাকালে গত জুলাই মাসে নিজে উদ্যোগ নিয়ে ফের হাসিনাকে ফোন করেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ভারতকে চাপে রাখতেই ইসলামাবাদ নয়া এই নীতি নিয়েছে বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু তাতে যে চিড়ে খুব একটা ভেজেনি তার প্রমাণ মিলল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই। বিজয় দিবসের আগে পাকিস্তানকে তার পূর্ব ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিলেন হাসিনা। "একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের জঘন্য ও পৈশাচিক ভূমিকাকে কোনদিন ক্ষমা করবে না বাংলাদেশ। এটা ক্ষমার অযোগ্য এক ইতিহাস!" কড়া ভাষায় ঢাকায় নিযুক্ত পাক হাইকমিশনারকে এমন প্রতিক্রিয়াই দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তথা মুজিবুর কন্যা হাসিনা।
পাক হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে ঢাকায় তাঁর সরকারি বাসভবনে যান। সেখানেই আহমেদ সিদ্দিকির কাছে স্পষ্ট ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সেই বর্বরতাকে বাংলাদেশ কোনদিন ক্ষমা করবে না। হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তান যে নৃশংসতা চালিয়েছিল তা ভুলে যেতে পারে না বাংলাদেশ। একাত্তরের ঘটনাগুলো ভোলা যায় না। সেই ক্ষত চিরদিন রয়ে যাবে। এ ব্যথা চিরদিন থাকবে। বাংলাদেশ তা কখনও ভুলতে এবং ক্ষমা করতে পারবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন’ – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রন্থে ১৯৪৮-৭১ সালের মধ্যে ঘটে যাওয়া অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা জানতে পারবে দেশ।
বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র উর্দু সংস্করণ পাকিস্তানে অন্যতম বিক্রিত একটি বই। এই বিষয়ে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।আর সেই শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে দিতেই রাষ্ট্রদূত সিদ্দিকি গিয়েছিলেন হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে। সৌজন্য সাক্ষাতের সময় পাকিস্তানের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাদের পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন পাক হাইকমিশনার। শেখ হাসিনাও পাক হাই কমিশনারের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শুভেচ্ছা জানান।
পাকিস্তানের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বক্তব্যকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে সেই দেশের কূটনীতিক মহল। হাসিনার এই বক্তব্যে মাথা না নোয়ানোর অনুপ্রেরণা পাবে জাতি। শোষণের চরম সীমায় পৌঁছে নারকীয় কায়দায় ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মাটি দখল করতে, নিরস্ত্র, অসহায় বাঙালির ওপর নৃশংস, নির্মম অত্যাচার চালিয়েছিল বর্বর পাকিস্তানের শাসকরা। এমন নিপীড়ন, অত্যাচার বিশ্বে নজিরবিহীন। রক্ত ঝরিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছিল বাংলাদেশ! যেখানে ভারতের অবদান উল্লেখযোগ্য! সেই পরাধীন ভূমি আগাী বছর স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা রাখতে চলেছে।