চঞ্চল চৌধুরী, এই নামটা আর কেবল ওপার বাংলা নয়, এপার বাংলাতেও সমান ভাবে পরিচিত। নানা মাত্রিক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন বরাবরই জয় করেছেন তিনি। গল্পের চরিত্র যথাযথভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে চঞ্চল চৌধুরী চেষ্টার কমতি রাখেন না। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলা, দুর্গাপুজোর সময় মণ্ডপে ভাঙচুর, দেবীমূর্তি বিগ্রহ ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় সেই চঞ্চল চৌধুরীকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গিয়েছে গর্জে উঠতে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে যা ঘটছে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তার প্রতিটি কথাটাই উঠে আসছে মনের গভীরে দানা বেঁধে ওঠা সেই বেদনা।
পুজো কেমন কেটেছে চ়ঞ্চলের?
কর্মসূত্রে তিনি ঢাকার বাসিন্দা। তবে হাজার কাজ থাকলেও পুজোর ছুটিতে চঞ্চল চৌধুরী পাবনায় গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান। সেখানে বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়দের সঙ্গে পুজো উদযাপন করেন। সবার সঙ্গে দেখা করতে এই সময়টাকেই বেছে নেন ব্যস্ত অভিনেতা। পুজোর সময় সকলের সঙ্গে দেখা করতে পেরে প্রতিবার মনটা খুশিতে ভরে যায়। কিন্তু এূবার তাতে তাল কেটেছে। গ্রামের বাড়িতে আপনজনদের সঙ্গে পুজো কাটালেও বিষাদে ভরে গিয়েছে মন। অভিনেতার কথায়, যারা ভুক্তভোগী তাঁদের বেদনা আমরা কোনওদিনই অনুভব করতে পাড়বো না। খালি সমবেদনা জানাতে পারি।
এমন ঘটনা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন চলছে তাকে রাষ্ট্রের ক্ষতি হিসাবেই দেখছেন অভিনেতা। আজতক বাংলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা বলেন, মানবতা আজ ভুলন্ঠিত, সূক্ষ্ম ভাবে ধর্মে ধর্মে সংঘাতের চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের জন্য এই ঘটনা হতাশাজনক। এতে আদতে রাষ্ট্রেরই ক্ষতি। আইন ও প্রশাসনের ক্ষতি দেখছেন অভিনেতা। এই অবস্থায় যারা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন তাদের প্রতি প্রশাসন কঠোর ভাবে ব্যবস্থা নিক, শাস্তি নির্ধারণ করুক, যাতে ভবিষ্যেত এমন ঘটনা না ঘটে, চাইছেন চঞ্চল চৌধুরী।
মূল্যবোধের অভাবেই সমাজের ক্ষয়
বাংলাদেশে যারা উত্তেজনা ছড়িয়েছে তাদের বয়স তিরিশের মধ্যে। বর্তমান প্রজন্মের মূল্যবোধের অভাব রয়েছে বলেই মনে করেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। কমে গিয়েছে একে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাও। বর্তমান সময়ে পুথিগত শিক্ষায় মানুষ শিক্ষিত হলেও মানবিক শিক্ষার অভাব রয়েছে বলেই মত অভিনেতার। চঞ্চল চৌধুরী বলছেন, সব ধর্মই শান্তির কথা বলে। চঞ্চল চৌধুরীর মতে, সব ধর্মেই ভাল আর খারাপ মানুষ থাকে। বর্তমানে মুক্ত চিন্তা করা বিবেকবান ভাল মানুষই সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে। তাই সমাজে বাড়ছে অন্যায়, স্বার্থপর হয়ে উঠছি আমরা।
তিনি প্রথমে নাগরিক তারপর ধর্মীয় পরিচয়
বাংলাদেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে চঞ্চল চৌধুরীর অনেক গুণমুগ্ধ তাঁকে ভারতে আসার প্রস্তাব দিয়েছেন. তবে অভিনেতার স্পষ্ট জবাব, তিনি বাংলাদেশে জন্মেছেন। তিনি প্রথমে এখানকার নাগরিক। কখনই নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে যাবেন না। প্রসঙ্গত বাংলাদেশের টেলিভিশন ও ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীকে এর আগেও নিজের ধর্মীর পরিচয় নিয়ে কটূক্তির শিকার হতে হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে মা-কে আগলে একটি মিষ্টি ছবি নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের প্রোফাইল পিকচার বানিয়ে ফেলেন অভিনেতা। অভিনেতার মায়ের সিঁথিতে সিঁদুর, হাতে শাখা-পলা দেখেই তাঁর ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে একের পর এক কটূক্তি ভেসে এসেছিল সেই সময়ে। যার কড়া জবাব দিয়েছিলেন চঞ্চল।
খুব শিগগির আসবেন কলকাতায়
কয়েকদিন আগে শোনা গিয়েছিল গায়ক-পরিচালক অঞ্জন দত্ত তার নতুন ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরীকে। সেই কথা বাংলাদেশের স্বনামধন্য অভিনেতা স্বীকার করলেন আজতক বাংলার কাছে। কথা যে অনেকদূর এগিয়েছে তা নিজেই জালালেন চঞ্চল চৌধুরী। সবকিছু ঠিকঠাক চললে শীঘ্রই কলকাতায় তিনি আসবেন অভিনয় সূত্রে। তবে এপারের একাধিক পরিচালকের থেকে প্রস্তাব পেলেও কোভিডের কারণেই প্রায় দু'বছর দেশ ছাড়তে পারেননি তিনি। তাই সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি'-তে অভিনয়ের প্রস্তাব থাকলেও তা হয়ে ওঠেনি। তবে খুব শীঘ্রই যে এপারের দর্শক তাঁর অভিনয়ের স্বাদ পেতে চলেছেন, সেই আশ্বাস আজতক বাংলার দর্শকদের দিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী।