গত শুক্রবারই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় জামিন নামঞ্জুর হয়েছে অভিনেত্রী পরীমনির। পরীর সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুরও জামিন মেলেনি। ইতিমধ্যে এক সপ্তাহেরও বেশি হাজতবাস করে ফেলেছেন পরীমনির। আদালতে পরীর আইনজীবীদের যুক্তি ছিল অভিনেত্রী 'ভার্টিগো' এবং 'প্যানিক অ্যাটাক'-এর রোগী। তিনি দীর্ঘদিন পুলিশ হেফাজতে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হেফাজতে থাকলেও মামলা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদে কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি। জরুরি চিকিৎসার স্বার্থে তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হোক। অন্যদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফার আর্জি ছিল তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার। সব শুনে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মন্ডল পরীমনির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তাই আপাতত ঢাকাই সিনেমার স্বনামধন্য অভিনেত্রীর ঠিকানা কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার। শুক্রবার সন্ধ্যাতেই নায়িকাকে প্রিজনভ্যানে করে কাশিমপুর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মহিলা বন্দিদের রাখার ব্যবস্থা না থাকায় পরীমনিকে কাশিমপুরের মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে তাঁকে সেখানে নেওয়া হয়। সেই সময় উৎসুক জনতার ভিড় উপচে পড়েছিল জেলের বাইরে। এদিকে পরীমনির পাশাপাশি মডেল মৌ-এর স্থান হয়েছে কাশিমপুর জেলে। গত ১ আগস্ট রাতে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মদ, ইয়াবাসহ মৌকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর তাকে তিন দফায় মোট আট দিন হেফজাতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মোহাম্মদপুর থানার মাদক আইনের মামলায় মৌয়ের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন মহানগর হাকিম আবু সাঈদ।
পরীমনি ও মৌ কোথায় আছেন?
পরীমনি ও মৌকে কারাগারের রজনীগন্ধা ভবনে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। কাশিমপুর মহিলা কারাগারের সিনিয়র সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জানিয়েছেন, “মহামারিকালের স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তাদের সেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করতে হবে। এর মধ্যে তাদের করোনার লক্ষণ দেখা না দিলে পরে তাদের সাধারণ বন্দিদের ভবনে পাঠানো হবে। জেল সূত্রে জানা গেছে, ডিভিশনপ্রাপ্ত হননি তাই কোয়ারেন্টিন সময় পার হওয়ার পর তাকে অন্য বিচারধীন সাধারণ বন্দির সঙ্গেই রাখা হবে। পরীমনি ও মৌ ছাড়াও মাদক মামলায় গ্রেফতার মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, চিকিৎসক সাবরিনা চৌধুরী ও নরসিংদীর সাবেক যুবমহিলা নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াও কাশিমপুরের এই কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
কারাগারে পরীমনির দিনযাপন
জেলে বসে দিনের অধিকাংশ সময় কি যেনো চিন্তা করছেন নায়িকা পরীমনি। তিনি অনেকটা চুপসে গেছেন, তবে কোন অস্বাভাবিক আচরণ করছেন না। অন্যান্য মহিলা বন্দিদের মতোই স্বাভাবিক আছেন। সুস্থ আছেন । খাবার হিসেবে সাধারণ বন্দিদের যা যা দেওয়া হয়, পরীমনিকেও তা’ই দেয়া হচ্ছে। তিনি আলাদা একটি সেলে বন্দি রয়েছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে নতুন বন্দি হিসেবে তাকে আলাদা রাখা হয়েছে।
পরীকে নিয়ে নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য
মাদক মামলায় গ্রেফতার ঢালিউড অভিনেত্রী পরীমনিকে নিয়ে বের হচ্ছে একের পর এক তথ্য। এবার জানা গেল নায়িকা কেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের দিনে বাড়ির দরজা খুলতে আধা ঘণ্টা দেরি করেছিলেন। পরীমনির জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু দাবি করেন, পরীমনির বাড়িতে যে খালি বোতল পাওয়া গেছে সেগুলোতে মদ ছিল। তার বাড়িতে যেদিন অভিযান চালানো হয়, সেদিন অভিনেত্রী আধঘণ্টা পর্যন্ত দরজা না খুলে বোতল থেকে মদ ফেলে দিয়ে তা খালি করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৪ অগাস্ট বিকেল ৪টে নাগাদ পরীমনির বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। এসময় তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ মদ, মদের বোতলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং তাকে আটক করা হয়। উদ্ধার হওয়া সামগ্রীর মোট দাম দেখানো হয় ২ লাখ ৭ হাজার টাকা। এই ঘটনায় র্যাব তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করে। গত ৫ অগাস্ট পরীমনিকে বনানী থানার মাদক মামলায় চারদিন ও ১০ অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় দুদিনের হেফাজতে পাঠায় আদালত। শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডল তাঁর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরীমণির পাশাপাশি তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপু, পরীমনির একটি সিনেমার প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীর ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিচারক। তবে পর্নগ্রাফি আইনের অন্য একটি মামলায় রাজ ও সবুজের চার দিনের হেফাজতের আদেশ থাকায় তাদের সিআইডি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।