ঢাকা শহরের অলিত-গলিতে ইতিহাস। সেই ইতিহাসেরই খোঁজ করছে আজতক বাংলা। পাঠকদের কাছে আমরা এর আগে তুলে ধরেছিলাম শাঁখারিবাজার। এবার গন্তব্য বিউটি বোর্ডিং। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিউটি বোর্ডিং তার পুরোনা ঐতিহ্য হারালেও এখনো অনেক চলচ্চিত্রকার, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, অভিনেতা সময় পেলেই সেখানে চলে যান। হৈ-হুল্লোড় আর আড্ডায় মেতে ওঠেন। ঢাকার কফি হাউস বলা যেতে পারে 'বিউটি বোর্ডিং'-কে।
প্রথম দেখাতে এটি আপনাকে খুব একটা আকৃষ্ট নাও করতে পারে। প্রধান ফটকটা ঘষেমেজে একটু সময়োপযোগী করা হয়েছে। সেটা দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে পুরানা একটি দোতলা বাড়ি। হলুদ বর্ণের প্রাচীন আমলের গাঁথুনি মুহূর্তেই আপনাকে নিয়ে যাবে একশ বছর পেছনে। মাঝখানে প্রশস্ত উঠোন। ফুলের বাগান দিয়ে ঘেরা। বেশ আড্ডার জায়গা। পাশে খাবারঘর, শোবারঘর, পেছনে সিঁড়িঘর সবই গল্পের বইয়ে লেখা প্রাচীন জমিদারবাড়ির বর্ণনার মতো।
পুরান ঢাকায় অবস্থিত এই হোটেলটি ঢাকার ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। উপমহাদেশের বিখ্যাত বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, রাজনীতিবিদের পদচারনার সাক্ষী এই বিউটি বোর্ডিং। বাংলা সাহিত্যে যখনই ঢাকার কথা এসেছে, তখনই চলে এসেছে বিউটি বোর্ডিং এর নাম। বিউটি বোর্ডিং এ পাওয়া যায় আদি ঢাকা ও কোলকাতার নানান খাবারের পদ। নবাবপুর পার হয়ে বাহাদুর শাহ্ পার্ক পেরিয়ে বাংলাবাজার। সেখান থেকে একটু এগিয়ে বাঁয়ে মোড় নিলে প্যারিদাস রোড। এই রোডের পাশেই শ্রীশদাস লেন। আর এই লেনের ১ নম্বর বাড়িটিই বিউটি বোর্ডিং। যেখানে থাকাও যায়, আবার দুপুর বা রাতে খাওয়াও যায়।
আসলেই এটা একটা জমিদারবাড়ি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় জামিদার পরিবারটি ভারতে চলে যায়। তখন এখানে গড়ে ওঠে একটি ছাপাখানা। সে সময় এখান থেকেই প্রকাশিত হত সোনার বাংলা নামের একটি পত্রিকা। দেশভাগের পর বাংলাবাজার হয়ে ওঠে প্রকাশনা ও মুদ্রণশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। তখন থেকেই বিউটি বোর্ডিং শিল্পী-সাহিত্যিকদের আড্ডার প্রাণকেন্দ্র হয়ে যায়। একসময় সোনার বাংলা পত্রিকাটির অফিস কলকাতায় চলে গেলে এর মালিক সুধীরচন্দ্র দাসের কাছ থেকে জায়গাটা বুঝে নেন প্রহ্লাদচন্দ্র সাহা ও তার ভাই নলিনীকান্ত সাহা। তারপর সোনার বাংলা প্রেসের জায়গায় শুরু হয় আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁর ব্যবসা।
কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ স্থানটি তার পুরানো 'জৌলুস' হারিয়েছে। এখন আর সেখানে আগের মত আড্ডার চিত্র দেখা মেলে না। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বিউটি বোর্ডিং গত বছর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বন্ধ ছিল। তারপর চালু হলেও এখন সেখানে ভোজনরসিকদের পদচারণা খুবই কম।