পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর যোগদান নিয়ে সরগরম নেট থেকে সংবাদমাধ্যম। দীর্ঘ দিন বহিরাগত অপবাদ মেটাতে একজন বাঙালি আইকনের খোঁজে ছিল বিজেপি। আপাতত মিঠুনের যোগদানে সে খোঁজ শেষ হয়েছে বলা যেতে পারে।
তবে ফিল্ম থেকে রাজনীতি, কেরিয়ারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সব সময় ওঠাপড়া দেখতে হয়েছে মহাগুরুকে। অভিনয়ে তিনি দেশের এক উজ্জ্বল নাম। কিন্তু রাজনীতিতে বারবার তাঁর ইনিংস থমকে গিয়েছে।
১৯৭৬ সালে মৃণাল সেনের ছবি মৃগয়া দিয়ে সিনেমার জগতে পা রেখেছিলেন মিঠুন। এই সিনেমার জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পান।
কিন্তু সাফল্য আর সংঘর্ষ মিঠুনের জীবনের কয়েনের দুটো পিঠ। জাতীয় পুরস্কারের পরেও তিন বছর কোনও ছবিতে সুযোগ পাননি তিনি।
১৯৭৯ সালে অভিনেত্রী রঞ্জিতার সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় ছবি সুরক্ষা। সে সময় অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না এবং জিতেন্দ্র মধ্য গগনে। তার মাঝে মিঠুনের এই ছবি বিরাট ছাপ না ফেললেও মিঠুনের চরিত্রটি অনেকের পছন্দ হয়।
চামড়ার রঙের জন্য মিঠুনকে বহু ছবি থেকে বার করে দেওয়া হয়। বহুবার প্রত্যাখ্যাত হতে হয় তাঁকে। এর জন্য একরাশ নিরাশাও ঘিরে ধরে তাঁকে। সে সময় তিনি এমন একটি ফিল্মের সন্ধানে ছিলেন যেখানে তাঁর ডান্স মুভ এবং অভিনয় ছাড়া বাকি কোনও কিছুতে মানুষের দৃষ্টি পড়বে না।
১৯৮২ সালে তাঁর সামনে সে সুযোগ এনে দেয় ডিস্কো ডান্সার। সারা দেশে হইটই ফেলে দেওয়া সিনেমায় মিঠুন বলিউডে অনন্য উচ্চতা পান। নিজের ইমেজ পুরোপুরি পাল্টে ফেলেন এবং ডান্সার হিসাবেও বলিউডে আলাদা জায়গা তৈরি করেন।
সক্রিয় রাজনীতিতে না এলেও একাধিক বামফ্রন্ট নেতার সঙ্গে যথেষ্ট সদ্ভাব ছিল মিঠুনের। তবে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর মিঠুনকে তৃণমূলে আসার প্রস্তাব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই সময়ে খুব বেশি ছবিতে অভিনয় করছিলেন না তিনি। লাইমলাইটের বৃত্ত থেকে খানিকটা বাইরেই ছিলেন। তৃণমূলে যোগ দিয়ে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে এই যাত্রা খুব একটা সুখের ছিল না। রাজনীতির আঙিনায় মিঠুন-কে খুব একটা দেখা যেত না। পার্টিতে থেকেও একটা দূরত্ব দেখা যেতে থাকে।
পরে সারদা চিটফান্ডে তাঁর নাম সামনে আসায় প্রায় সন্ন্যাস নিয়ে নেন রাজনীতি থেকে। ২০১৬ সালে রাজ্যসভার পদ থেকে ইস্তফা দেন। ৫ বছর রাজনীতির সঙ্গে তাঁর প্রায় কোনও সম্পর্কই ছিল না। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেন মিঠুন চক্রবর্তী। একদা বাম মনস্ক থেকে পদ্মপন্থী মিঠুনের রাজনীতি কোন গতিপথে চলে তা দেখার অপেক্ষায় সকলে।