
'ব্রহ্মাস্ত্র' ছবিতে শিব রূপে রণবীর কাপুর ৩.৫/ ৫
ছবি: ব্রহ্মাস্ত্র পার্ট ওয়ানঃ শিব
অভিনয়ে: আলিয়া ভাট এবং রণবীর কাপুর
পরিচালনা: অয়ন মুখোপাধ্যায়
ইশা (আলিয়া ভাট ) স্মৃতি ধরে রাখতে ভালোবাসে। যখনই ইশা মনের মধ্যে কোনও স্মৃতির রেখে দিতে চায়, সে বলে 'ক্লিক'! অয়ন মুখোপাধ্যায়ের (Ayan Mukherji) তৈরি ভারতের প্রথম মাল্টিভার্স ফ্র্যাঞ্চাইজি ছবিতে এরকম বহু 'ক্লিক-যোগ্য' মুহূর্ত রয়েছে। 'ব্রহ্মাস্ত্র পার্ট ওয়ান: শিব' (Brahmastra Part 1: Shiva) বহু প্রতীক্ষিত ছবি মুক্তি পেয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর। গাড়ির দৃশ্য থেকে ছবির অন্যান্য দৃশ্য যেখানে গ্রাফিক্স ব্যবহার হয়েছে, সর্বক্ষেত্রে এই ছবি এক কথায় দারুণ!

কোনও সুপারহিরো ইউনিভার্স সেটআপ করা সহজ নয়। এধরনের ছবিতে সুপারহিরোর উপর শুরুতে বিশ্বাস করা এবং শেষ পর্যন্ত সেই বিশ্বাস রাখাটা খুব জরুরি। মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স (MCU) সফল কারণ দর্শকেরা সুপারহিরোদের প্রতি বিশ্বাস রাখেন। যখন থর সেই হাতুড়িটি আঘাত করে বা যখন ‘অ্যাভেঞ্জার্স অ্যাসেম্বল’ শব্দটি উচ্চারিত হয়, তখন প্রতিটি যৌক্তিক বিশ্বাসকে ধরে রেখে, বড় পর্দায় যা মনোনিবেশ করেন সকলে। 'ব্রহ্মাস্ত্রে'-তে, অয়ন দুই মুখ্য চরিত্র, শিবা (রণবীর কাপুর) এবং ইশার (আলিয়া ভাট) উপর বিশ্বাস স্থাপনের জন্য সম্পূর্ণ প্রথমার্ধ রেখেছেন। অয়নের অ্যাস্ট্রাভার্স ভারতে তৈরি। আমাদের ইতিহাসের বিভিন্ন প্রসঙ্গ, গল্পটিকে একটি আবেগময় আবেদন দেওয়ার জন্য সুন্দরভাবে বোনা হয়েছে।

এই ছবির টিকিট বিক্রির একটি মূল হিসাবে মনে করা হচ্ছে রণবীর- আলিয়া জুটির রসায়ন। তবে প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে বেশি উৎকৃষ্টতম হল অ্যাস্ট্রাভার্স বিটগুলি। গল্পটি শুরু হয় শিবের সঙ্গে ইশার সাক্ষাৎ এবং তার প্রেমে পড়ার দিয়ে। আগুনের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে বলে জানায় শিব। আগুনে কখনও আঘাত না পেলেও, ভীতি রয়েছে তার। শিবের পরাশক্তিও তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। বিরতির আগে, অ্যাস্ট্রাভার্সের মূল খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচয় হয়। শিবের নেমেসিস জুনুন (মৌনি রায়) ভগ্ন ব্রহ্মাস্ত্রের টুকরো পেতে বেরিয়েছে, জাগ্রত ভগবান ব্রহ্মা দেবকে খুশি করতে। এরই মধ্যে জানা যায় শিবের আসল গল্প। তার মা অমৃতার জল অস্ত্রের উপর কর্তৃত্ব ছিল। এই অবধি পড়ে, মনে হচ্ছে একসঙ্গে অনেক তথ্য? গুলিয়ে যাচ্ছে সব? চিন্তার কিছু নেই, এই সমস্ত তথ্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে ছবিতে।

'ব্রহ্মাস্ত্র'-কে যদি দেশি খাবারের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে এর স্বাদ অবশ্যই পশ্চিমী রান্নাঘর থেকে ধার করা হয়েছে। অস্ট্রা গুরুকুলের অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bachchan) আপনাকে 'এক্স-মেন' (X-Men)-র প্রফেসর এক্সের কথা মনে করাবে। যতবারই শিবা বিভিন্ন সমস্যায় ভেঙে চুড়ে যায়, ফ্রোডোর রিং টু মাউন্ট ডুমের যাত্রার কথা আপনার মনে পড়তে পারে। অমিতাভের বচ্চন লম্বা, ধূসর দাড়ি না থাকলেও, তিনি যখন শিবাকে পরামর্শ দেন তখন হ্যারিপটারের উপর নজরদারির ডাম্বেলডোরের ছায়া রয়েছে সেখানে। তুলনা অনেক হলেও তা ভাল করে দৃশ্যায়ন হয়েছে। অ্যাকশন দৃশ্যের কথা বলতে গেলে, বিশেষ করে একটি গাড়ির ধাওয়া এবং ক্লাইম্যাক্সের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ভাল। এটা সম্ভবত কোনও ভারতীয় ছবিত প্রথম দেখা গেছে।

পারফরম্যন্স এক কথায় মিশ্র। রণবীর কাপুর (Ranbir Kapoor), যেন ক্লান্ত শামশেরা থেকে বেরিয়ে আসছেন। কিছু জায়গায় তাঁকে 'ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি'-র বানির মতো লাগে। ইশা রূপে আলিয়া (Alia Bhatt) ভাল। শিবার প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা তাঁর চোখে- মুখে স্পষ্ট বোঝা যায়। তবে 'কেসরিয়া' যতই সুপারহিট হোক না কেন, তাঁদের প্রেমের গল্প সবচেয়ে দুর্বল এছবিতে। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও নাগার্জুনের চরিত্রে কঠিন প্রভাব রয়েছে। খলনায়ক হিসেবে মৌনী রায় অসাধারণ এবং কেরিয়ারের অন্যতম পারফরম্যান্স তাঁর এই ছবিতে। গুরুজির ভূমিকায় অমিতাভ বচ্চন ভাল। ছবির শুরুর ১০ মিনিটেই ক্যামেও চরিত্রে আগমন হয় শাহরুখ খানের।

'ব্রহ্মাস্ত্র পার্ট ওয়ানঃ শিব' এই ট্রিলজির প্রথম অধ্যায় হিসাবে এই ছবি কঠিন প্রচেষ্টা। যখন হলিউডের 'লর্ড অফ দ্য রিংস', 'হাউস অফ দ্য ড্রাগন'-র মতো প্রোজেক্ট ভিজ্যুয়াল এফেক্টের দিক দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করছে, সেসময় 'ব্রহ্মাস্ত্র' হালকা করে মনে করিয়ে দেয় যে, ভারতও VFX-র ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এছবিতে অন্ধকার ও হতাশাকে পরাজিত করে, ভালোবাসার বার্তা দিতে চেয়েছেন অয়ন। সব শেষে বলা যায়, ভিস্যুয়াল এফেক্টে 'ব্রহ্মাস্ত্র' যতটা সফল, কনটেন্টেরর ক্ষেত্রে ততটা ছাপ ফেলতে পারেনি। তাই যে দর্শকদের প্রত্যাশা তুঙ্গে ছিল, তারা কিছুটা আশাহত হতে পারেন। তবে যে কোনও ছবি নিজে দেখে তবেই তার ভাল-মন্দ বিচার করা উচিত।