ফের দুঃসংবাদ বিনোদন জগতে। প্রয়াত বর্ষীয়ান বলিউড অভিনেতা দিলীপ কুমার (Dilip Kumar)। বুধবার সকাল ৭.৩০ নাগাদ খাড় হিন্দুজা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি।
কিংবদন্তি অভিনেতার চিকিৎসক ডাঃ পার্কার এই খবরটি বুধবার নিশ্চিত করেছেন। গত মাসেও দু'বার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় দিলীপ কুমারকে। গত ৫ জুলাই তাঁর অফিসিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী সায়রা বানু জানান, তিনি স্থিতিশীল আছেন। বুধবার তাঁর ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকেও দেওয়া হয় তাঁর মৃত্যু সংবাদ।
With a heavy heart and profound grief, I announce the passing away of our beloved Dilip Saab, few minutes ago.
— Dilip Kumar (@TheDilipKumar) July 7, 2021
We are from God and to Him we return. - Faisal Farooqui
বলিউডের ‘ট্রাজেডি কিং'য়ের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শুধু বিনোদন জগৎ না, সমগ্র দেশে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও (Narendra Modi) ট্যুইট বার্তায় শোকজ্ঞাপন করেছেন।
Dilip Kumar Ji will be remembered as a cinematic legend. He was blessed with unparalleled brilliance, due to which audiences across generations were enthralled. His passing away is a loss to our cultural world. Condolences to his family, friends and innumerable admirers. RIP.
— Narendra Modi (@narendramodi) July 7, 2021
বলিউডের ‘ট্রাজেডি কিং’
১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর পেশোয়ার (বর্তমান পাকিস্তানে) জন্ম মুহাম্মদ ইউসুফ খান (Mohammad Yusuf Khan) ওরফে দিলীপ কুমারের। চলচ্চিত্র জগতে ‘ট্রাজেডি কিং’ (Tragedy King) নামেই পরিচিত তিনি। ১৯৪৪ সালে ‘বম্বে টকিজ’-এর ব্যানারে ‘জোয়ার ভাটা’ দিয়ে অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন। তারপর দিয়ে গিয়েছেন একের পর এক হিট ছবি।
প্রায় পাঁচ দশক ধরে ৬০ টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন দিলীপ কুমার। বহু ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হননি তিনি। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, কম কাজ হলেও সেটার গুণমান ভাল হওয়া উচিত। যদিও কম কাজ করায় পরে আফসোস করেন তিনি। তবে এত ছবির মধ্যে 'মুঘল-এ-আজম' এবং 'নয়া দৌড়' ২০০৪ এবং ২০০৮ সালে পুনরায় মুক্তি পেয়েছিল।
আরও পড়ুন: সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকেও প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন দিলীপ কুমার!
দিলীপ কুমারের স্মরণীয় ছবি
ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে দিলীপ কুমারের অবদান অপরিসীম। তাঁর অভিনীত বহু ছবির মধ্যে ‘জোয়ার ভাটা’ ছাড়াও, 'শহীদ', 'মেলা', ' দেবদাস', 'নদীয়া কে পার', 'বাবুল', 'নয়া দৌড়', 'মুঘল-এ-আজম', 'রাম অউর শ্যাম', 'গঙ্গা যমুনা' ছবিগুলি অন্যতম।
দিলীপ কুমার - সায়রা বানু জুটি
১৯৬৬ সালে নিজের থেকে ২২ বছরের ছোট অভিনেত্রী সায়রা বানুকে (Saira Banu) বিয়ে করেন দিলীপ কুমার। এরপরে তিনি ১৯৮১ সালে আসমা সাহিবাকে বিয়ে করেন। যদিও সেই বিয়ে টিকেছিল মাত্রে দুবছর, ১৯৮৩ সাল অবধি। ১৯৭০ সালে 'সাগিনা মাহাতো' ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন, দিলীপ কুমার ও সায়রা বানু। যদিও তিনি মধুবালার (Madhubala) প্রেমে পড়েছিলেন 'তারানা' ছবির শ্যুটিংয়ের সময়। তাঁদের প্রায় ৭ বছর সম্পর্ক থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
পুরষ্কার ও স্বীকৃতি
ভারত সরকারের তরফ থেকে একাধিক পুরষ্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। যার মধ্যে রয়েছে পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে পুরষ্কার। এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশিবার ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার রেকর্ড আছে দিলীপ কুমারের। তিনি ৯ বার পান এই পুরষ্কার। যার মধ্যে একটি 'লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট' পুরষ্কারও রয়েছে। এছাড়াও পাকিস্তানের তরফ থেকেও 'হাইয়েস্ট সিভিলিয়াল' পুরষ্কার পেয়েছিলেন তিনি।
২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন দিলীপ কুমার। তাঁর বাংলার সঙ্গে যোগ ছিল অনেকদিন ধরেই। এমনকি তাঁর অভিনয় দক্ষতার প্রশংসা করেছিলেন খোদ সত্যজিৎ রায়। বলিউডের ‘ট্রাজেডি কিং'য়ের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শুধু বিনোদন জগৎ না, সমগ্র দেশে।