৩.৫/ ৫
ছবি: গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি
অভিনয়ে: আলিয়া ভাট
পরিচালক: সঞ্জয় লীলা ভান্সালি
কাজের প্রথম দিন আলিয়া ক্লায়েন্টদের খুশি করার জন্য সঠিক কৌশল শিখছেন অন্য যৌনকর্মীর থেকে। অসহায় আলিয়া, সেই পেশায় একেবারে নবাগতা, না বুঝেই বন্ধুর ইঙ্গিতে বিশ্রীভাবে অঙ্গভঙ্গি করার সময় তাঁর অস্বস্তি চোখে মুখে ফুটে উঠছে...
'গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি'-এই দৃশ্যের মতো, ছবিতেও দর্শকদের আগ্রহ বাঁচিয়ে রাখতে অবিরাম সংগ্রাম রয়েছে বলে মনে হবে। সঞ্জয় লীলা ভান্সালির সাদা, সবুজ এবং সেপিয়ার টিন্ট রঙ দিয়ে ক্যানভাসে আঁকার সর্বশেষ প্রচেষ্টাটি অনেকটা, তাঁর গল্পের মূল চরিত্রের লেখা একটি প্রেমের চিঠির মতো। সেই চরিত্রটি এক যৌনকর্মীর, যিনি খ্যাতির চমকপ্রদ উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন।
এই ছবির সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হল আলিয়া ভাটকে এমন একটি চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া, যা শুধুই 'লার্জার দ্যান লাইফ' নয়। বরং, অভিনেত্রীর এখন পর্যন্ত নেওয়া কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। আলিয়া, 'গাঙ্গুবাইকে' অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন এবং সেরার সেরা অভিনয় করার সম্ভাব্য প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। ছবিটি আধুনিক যুগের কামাথিপুরায় শুরু হয়ে দর্শকদের ফ্ল্যাশব্যাক মোডে নিয়ে যায়। যেখানে সকলের গঙ্গার সঙ্গে পরিচয় হয়, যিনি নায়িকা হওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি পেয়ে ছোট শহর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।
ম্যাডাম শীলার (সীমা পাহওয়া) মালিকানাধীন হারেমে বিক্রি করা হয় তাঁকে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই শিখতে হয় দেহ ব্যবসার নানা কৌশল। গাঙ্গুর নির্দোষতা এবং দুর্বলতাকে চিত্রিত করার দৃশ্যগুলি, শীঘ্রই বদলে যায় সহিংসতা এবং ধর্ষণে। স্থানীয় মাফিয়া প্রধান করিম লালার (অজয় দেবগন) কাছে সান্ত্বনা চায় সে... ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট হল যখন, লালার সাহায্যে গঙ্গা, 'গাঙ্গুবাই' হয়ে ওঠেন। একজন মহিলা যিনি তাঁর ভাগ্যকে মেনে নিয়ে, নিজের অধরা অতীতেই শান্তি পেতে চায়।
আর পড়ুন: সুরে সুরে 'দাদাগিরি'-র মঞ্চে ৩ প্রবাদপ্রতিম শিল্পীকে শ্রদ্ধাঞ্জলী!
ছবিতে প্রচুর দৃশ্য রয়েছে যেখানে, ভান্সালি তাঁর পরিচিত চাল চেলেছেন - ওভারহেড শট, ঢোলিদা গান, রেজার-শার্প মনোলোগ, ফ্লার্টিংয়ের দৃশ্যে প্রধান রোমান্টিক ট্র্যাক যেখানে, প্রকাশ্যে যৌনতা না দেখালেও, শারীরিক ঘনিষ্ঠতা দেখা যায়।
গাঙ্গুবাইয়ের নিমেসিস, একজন ট্রান্সজেন্ডার হারেমের মালিক, রাজিয়াবাঈ (বিজয় রাজ)। কামাথিপুরার উপর তাঁর কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার সময় সমস্যা দেখা দেয়। গাঙ্গুর জীবনের পুরুষেরা, সর্বদাই পরিধিতে থাকে। তা সে আফসানের (শান্তনু মহেশ্বরী) সঙ্গে তাঁর ক্ষণস্থায়ী প্রেমের গল্প হোক কিংবা জিম সার্ভের (একজন সাংবাদিক যিনি গাঙ্গুকে একটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে রাখেন) সঙ্গে সম্পর্ক। বিপরীত লিঙ্গকে বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্ক থাকেন গাঙ্গু।
আর পড়ুন: ফের বড় পর্দায় ব্যোমকেশ! সত্যান্বেষীর রহস্য উন্মোচনে এবার আরও বড় চমক
গাঙ্গুবাইয়ের পারফরম্যান্স শীর্ষ স্থানীয়। 'সিংহম জগত' থেকে বিরতি নিয়ে অজয় দেবগন লালার চরিত্রে অসামান্য। গাঙ্গুর প্রতি সহানুভূতি আঁকতে লালার যাত্রা গুরুত্বপূর্ণ। সীমিত দৃশ্য়ে থাকা সত্ত্বেও, বিজয় রাজ, সদাশিব আমরাপুরকরকে (সড়ক ছবিতে) ছাপিয়ে গিয়েছেন। গাঙ্গুর সঙ্গে তাঁর সংঘর্ষের দৃশ্যে চোখ সরানো দায়।
আলিয়া তাঁর চেনা ছকের বাইরে এমন একটি চরিত্র করার জন্য কৃতিত্বের যোগ্য। ছবির দ্বিতীয়ার্ধে দীর্ঘ সময়, তাঁর একক অভিনয় এবং নেশাগ্রস্ত হওয়ার দৃশ্যে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন আলিয়াকে দেখতে পাবেন দর্শকেরা। তবে কয়েকটি দৃশ্যে হোঁচট খেয়েছেন তিনি। তাই বলতেই হয়, এক্ষেত্রে মহেশ কন্যার অভিনয় একেবারে নিখুঁত নয়।
আর পড়ুন: নতুন 'মিঠাই' দেবত্তমা! সৌমিতৃষা সরছেন ধারাবাহিক থেকে?
প্রথমার্ধ বিশেষ ভাল না লাগতে পারে, আলিয়াকে 'গাঙ্গু মোডে' দেখতে কিছুটা সময় লাগবে। কিছু জায়গায় গুজরাটি উচ্চারণে সমস্যা রয়েছে। আসলে এরকম একটা চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে, সামান্য ভুলও বড় পর্দায় দশগুণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সেই অপূর্ণতাই গাঙ্গুবাইকে বাস্তব করে তোলে।
ক্যামেরার কাজ, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এবং সংলাপ হল 'গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি' তিনটি স্তম্ভ যা, এটিকে অন্য যে কোনও সাহসী বায়োপিক থেকে কিছুটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। সব শেষে আবার বলতে হয়, ভান্সালি এবং আলিয়া উভয়ের জন্যই 'গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি' একটি কঠিন ঝুঁকি ছিল।